সিলেটে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন,দেশে গণতন্ত্র নাই, আইনের শাসন নাই, ভোটের অধিকার নেই, মানুষের কথা বলার অধিকার নাই, অর্থনৈতিক স্বাধীনতাও নেই। মানবাধিকার আজ ভুলুন্ঠিত। এ অবস্থায় বাংলাদেশ কোথায় গিয়ে দাড়াবে-এ মুহূর্তে এটাই আমাদের সকলের ভাবনা।
শনিবার (১ এপ্রিল) বিকেলে স্থানীয় হোটেল "গ্র্যান্ড মোস্তফার" সেমিনার কক্ষে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, সিলেট এর আয়োজনে মহান স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা, ইফতার ও দোয়া মাহফিলে পেশাজীবী নেতারা একথা বলেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা প্রথম আলোর কারাঅন্তরীণ সাংবাদিক শামসুজ্জামানের মুক্তি দাবি করে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য এক মুর্তিমান আতংক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু ঢাকায় প্রতিদিন ১৬ জন নাগরিক নিখোঁজ হচ্ছে। এদের কারো লাশ পাওয়া যায়, আবার কারো পাওয়া যায় না। গণতন্ত্র আজ বিপন্ন। মানবতা আজ লাঞ্ছিত।
সিলেট বিএসপিপির সভাপতি প্রফেসর ডা. শামীমুর রহমানের সভাপতিত্বে ও প্রফেসর ডা. শাহনেওয়াজ চৌধুরীর সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী।
আলোচনায় অংশ নেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী , বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইউম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, মিফতা সিদ্দিকী, এডভোকেট এটিএম ফয়েজ , প্রফেসর ড. সাজেদুল করিম, কৃষিবিদ প্রফেসর ড.মো. মোজাম্মেল হক, কৃষিবিদ প্রফেসর ড. আতোয়ার রহমান,প্রফেসর শাহ মুহাম্মদ আতিকুল হক, সাংবাদিক খালেদ আহমদ, প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ ইকবাল, এডভোকেট আশিক উদ্দিন, এডভোকেট বদরুল আহমদ চৌধুরী, এডভোকেট আতিকুর রহমান সাবু, ডাক্তার শিব্বির আহমদ শিবলী, ডা. মাসুকুর রহমান চৌধুরী, ড. ছিদ্দিকুল ইসলাম, ড. এমদাদুল হক, ড. মো আতাউর রহমান, ড. মোজাম্মেল হক, প্রফেসর ডা. আকতার উদ্দিন, অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ, শিক্ষক নেতা লে. মনিরুল ইসলাম, সাংবাদিক এম এ মতিন প্রমূখ। শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলওয়াত করেন সাংবাদিক বদরুদ্দোজা বদর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেন,এ দেশকে স্বাধীন করার জন্য বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতার ৫২ বছর পূর্তিতে জাতির প্রত্যাশা ছিল আমরা আমাদের সব অর্জন দেশে বিদেশে প্রতিফলিত করবো, দেশে বিদেশে সমাদৃত হবো। কিন্তু আজকে দুঃখের বিষয় আমরা যখন স্বাধীনতার ৫২বছর পালন করছি, তখন বাংলাদেশ একটি অগণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিশ্বব্যাপি স্বীকৃত হলো।
মানবাধিকার লংঘনের জন্য বাংলাদেশের একটি সংস্থা আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত হলো, ওই সংস্থার কিছু কর্মকর্তা যারা বাংলাদেশের বিভিন্ন পদে আছেন, তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো, এটা জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার।
ডা. জাহিদ বলেন, আপনারা জানেন দেশ একটা গভীর সংকটের মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছে। বিশ্ব জরিপের মূল্যায়ন হচ্ছে বাংলাদেশ এখন স্বৈরশাসনের অধীন এবং সেখানে এখন গণতন্ত্রের ন্যূনতম মানদন্ড পর্যন্ত মানা হচ্ছে না। সম্প্রতি আমেরিকায় যে গণতান্ত্রিক সম্মেলন হয় ওই সম্মেলনে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পর্যন্ত পায়নি।
তিনি বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য- আমাদের যে গণতন্ত্র হারিয়ে গেছে, সেটি পুনরুদ্ধার করা। আমাদের দেশনেত্রী মাদার অব ডেমোক্রেসি বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে সসম্মানে দেশে ফিরিয়ে আনার পরিবেশ সৃষ্টি করা। জনগণ যাতে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের পছন্দের সরকার গঠন করতে পারে, সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাবো।
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, সরকার কথায় কথায় মানুষ হত্যা, গুম এখন নিত্যকার ঘটনা। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার বলতে কিছু নেই। সাংবাদিক নির্যাতন অতীতের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে সরকারের মধ্যে অস্থিরতা ততই বাড়ছে। বিরোধীদের মোকাবিলায় রাজনৈতিক কৌশলের দিক থেকে তারা এক ধরনের আত্মঘাতী পোড়ামাটি নীতি অনুসরণ করছে। তাই ভোটাধিকার, গণতন্ত্র ও মর্যাদা রক্ষায় আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
তিনি বলেন, ঠুনকো অজুহাতে গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়া এখন নিত্য দিনের ঘটনা। বর্তমান সরকারের সময় অন্তত: ৫৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। সাংবাদিক নির্যাতনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/জুনেদ/পল্লব-১১