নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা অফিস:: পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে পূর্ব থেকেই বিরোধ চলে আসছিল। সিলেটের জৈন্তাপুরে ভূমিস্বত্ত্ব ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শমছুউদ্দিনকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় প্রধান আসামি তাজউদ্দীনসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেফতারের পর এমন তথ্য জানায় র্যাব।
সোমবার (০৩ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে এমন তথ্য জানিয়েছেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্ণেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি জানান, গতকাল রাতে ডিএমপির রমনা থানাধীন মৎস্য ভবন এলাকা থেকে শমসু উদ্দিন হত্যা মামলার প্রধান আসামি তাজ উদ্দীন (৪৪), নাসির উদ্দিন (৩৬), রহিম উদ্দিন (৪০), বশির উদ্দিন (৩৮) ও আহবাব হোসেন তানভীরকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে তাদের ব্যাপাক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
লে. কর্ণেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আসামিদের মধ্যে তাজ উদ্দীন, নাসির, রহিম ও বশির এই চার জন আপন ভাই এবং তানভীর তাদের ভাতিজা। ভিকটিম শমছু উদ্দিন তাদেরই আপন চাচাতো ভাই। তারা সকলে একই গ্রামে পাশাপাশি বাড়িতে বসবাস করত। পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে পূর্ব থেকেই বিরোধ চলে আসছিল।
এছাড়াও দরবস্ত বাজারে দুই পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দোকান ও বাজারের আধিপত্য নিয়ে দলাদলি ছিল। এরই জের ধরে গত দুই মাস পূর্বে ভিকটিম শমছু উদ্দিনের ভাই আমিনুদ্দিন এবং ধৃত আসামি তাজ উদ্দীনের মধ্যে বাজারের একটি গাছের ডাল কাটা নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। দরবস্ত বাজারের মসজিদের পাশে আমিন উদ্দিনের একটি দোকান রয়েছে। আমিনুদ্দিন দোকানের সুবিধার্থে পার্শ্ববর্তী বটগাছটির কিছু ডালপালা ছেটে দিলে তাজ উদ্দীন তাকে বাধা দেয়। কিন্তু তাজ উদ্দীনের বাধা না মেনে গাছের ডাল কাটায় সে আমিনুদ্দিনসহ তার ভাই শমছু এবং উপস্থিত অন্যান্যদের উচিত শিক্ষা দিবে বলে হুমকি প্রদান করে।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে টানা দুই মাস যাবৎ দুই পরিবারের মধ্যে কয়েক দফা হুমকি ধামকি এবং একাধিকবার বিচার সালিশ বসলেও বিরোধের সমাধান না হয়ে বরং উত্তেজনা বাড়তে থাকে। এরই জের ধরে গত ২৪ মার্চ রাতে দরবস্ত বাজারের একটি চায়ের দোকানে ভিকটিম শমছুর ভাই শামীম এবং ধৃত আসামিদের বড় ভাই কামালের মধ্যে জায়গা জমি নিয়ে আবারো কথা কাটাকাটির সৃষ্টি হলে উভয়পক্ষ তাদের পরিবারের সদস্যদের খবর দিয়ে নিয়ে আসে এবং সেখানে দুই পক্ষের মধ্যে একটি বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে স্থানীয় লোকজন তাদেরকে থামানোর চেষ্টা করে এবং কিছু সময়ের জন্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে। এরপর গত ২৪ মার্চ দিবাগত রাত তিনটার দিকে তাজ উদ্দীন, কামাল উদ্দীন, নাসির, রহিম, বশির, তানভীর এবং আরিফ মিলে বাশ ও কাঠের লাঠি, কাঠের রুইল, লোহার রড ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমিনুদ্দিন, শমছুদ্দিন ও অন্যান্যদের উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য তাদের উপর হামলা করে। এ সময় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে।
একপর্যায়ে ধৃত আসামি তাজ উদ্দীন তার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে শমছু উদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার ডান দিকে ও মাথার পিছনে কোপ মেরে গুরুতর রক্তাক্ত কাটা জখম করে। সাথে সাথে আসামি রহিম তার হাতে থাকা কাঠের লাঠি দিয়ে পুনঃরায় শমছু উদ্দিনের মাথার মাঝখানে বারি মেরে জখম করে। এর ফলে শমছু উদ্দিন গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে থাকে। এদিকে ধৃত নাসির তার হাতে থাকা কাঠের রুইল দিয়ে ভিকটিমের ভাই শামীমকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার পিছনে বারি দিয়ে গুরুতর আহত করে।
গ্রেফতারকৃত বশির তার হাতে থাকা ধারালো দা দিয়ে ভিকটিমের ভাই ফয়সালের হাতে কোপ মেরে একটি আঙ্গুলে গুরুতর জখম করে। তানভীর তার হাতে থাকা লোহার রড দিয়ে ভিকটিমের ভাই মাসুকের পিঠে বারি মারে। এভাবে এলোপাতাড়ি মারামারির পর তাজ উদ্দিন তার ভাইদের নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে দৌড়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে বাজারে উপস্থিত স্থানীয় লোকজন আহত ব্যক্তিদেরকে উদ্ধার করে জৈন্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের অবস্থা আশংকাজনক দেখে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে রেফার্ড করেন। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় ভিকটিম শমছু উদ্দিনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ২৮ মার্চ ঢাকার নিউরো সায়েন্স কলেজ ও হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে একদিন চিকিৎসার পর ২৯ মার্চ পুনঃরায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পাঠানো হয়। পরে ৩১ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করেন।
র্যাবের ওই কর্মকর্তা জানান, এ ঘটনার পর সিলেট জেলাধীন জৈন্তাপুর মডেল থানার একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরে পর আসামিরা বাদীসহ ভিকটিমের পরিবারকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করে। পরবর্তীতে চিকিংসাধীন অবস্থায় ভিকটিম শমছু উদ্দিন মারা গেলে বিজ্ঞ আদালত ৩০২ ধারা সংযোজনের আদেশ দেয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ওই হত্যাকান্ডের মূলহোতা তাজ উদ্দিনসহ নাসির, রহিম, বশির এবং তানভীরকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩।
তিনি জানান, আসামি তাজ উদ্দীন, নাসির, রহিম এবং বশিরের দরবস্ত বাজারে তাদের আলাদা আলাদা মুদির দোকান রয়েছে। এছাড়াও তারা সকলেই পারিবারিক সূত্রে প্রাপ্ত কৃষিজমিতে চাষাবাদের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/কেআরএস/ইআ-১১