গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় অসহনীয় যানজট, উন্নয়নের নামে বছরজুড়ে সড়কে খুঁড়োখুড়ি, মশার দৌরাত্ম্য। রমাজনেও এই তিন সমস্যায় নাকাল নগরবাসী। একের পর এক উদ্যোগ ও পরিকল্পনা নেওয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
 

উন্নয়নের নামে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও সমস্যা দূর হওয়ার পরিবর্তে উল্টো বাড়ছে আরও ভোগান্তি। নগরী জুড়ে সারা বছরই চলে খোঁড়াখুঁড়ি।


সংস্কার আর নির্মাণের নামে নগরবাসী বছরের পর বছর থাকেন ভোগান্তিতে। যার ফলে মহানগরীতে ভয়াবহ মাত্রার বেড়েচে যানজট। তার উপর সিলেটে বেড়েছে মশার দৌরাত্ম্য। এতে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নগরবাসী।
 

সিলেট মহানগরজুড়ে বেড়েছে খোঁড়াখুঁড়ি। সংস্কার না করেই একের পর এক খোঁড়াখুঁড়িতে পুরো নগরীতে রাস্তায় তৈরী হচ্ছে গর্ত আর এর পাশে রাস্তায় রাখা হচ্ছে মাটির স্তুপ। সিসিক সূত্রে জানা গেছে আগামী বর্ষা মৌসুম পর্যন্ত চলবে খোঁড়াখুঁড়ি। ফলে দীর্ঘায়িত হতে যাচ্ছে জনদুর্ভোগ। উন্নয়নের নামে সিসিকের এমন কর্মকান্ড শুধু নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক নয়, ছড়িয়ে পড়ছে পাড়া মহল্লা আর অলিগলিতে। খোঁড়াখুঁড়ি কারণে বৃষ্টিতে কাদা আর রোদে ধুলায় ধূসর হচ্ছে নগরী। দুষণের কারণে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে আছেন নগরবাসী।
 

এই খোঁড়াখুঁড়ির কারণে পুরো সিলেট শহরে বাড়ছে যানজট। প্রভাব পড়েছে ব্যবসা বাণিজ্যেও। একসাথে রাস্তা, কালভার্ট ও ড্রেনের নির্মাণ কাজ চলছে, এর মধ্যে পানির পাইপলাইনের জন্য নতুন করে খোঁড়াখুঁড়িতে সব রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। সিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে, নগরীর উন্নয়নের জন্যই এসব খোঁড়াখুঁড়ি। উন্নয়নের স্বার্থে এ দুর্ভোগ মেনে নিতে হবে।

তবে নগরবাসীর অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে কাজ হচ্ছে। জনদুর্ভোগের বিষয়টি নগর কর্তৃপক্ষ আমলে নিচ্ছে না।

তার উপর সিলেট সিটি কপোরেশনের মশা নিধনের এতো আয়োজনের পরও নগরীতে কমছে না মশার উপদ্রব। মশার উৎপাতে দিনরাত সমানভাবে যন্ত্রণাভোগ করতে হচ্ছে নগরবাসীকে। নিয়মিত ওষধ ছিটানো সম্ভব না হওয়ায় এবং অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি, অপরিচ্ছিন্ন ড্রেন, রাস্তার গর্তে পানি জমে যাওয়ায় মশার বংশ বৃদ্ধিও কমছে না বলে দাবি জনগণের।
 

মশা নিধনে সিটি করপোরেশনও নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে হলে সারাবছরই নগরীতে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালাতে হয়। বিশেষ করে মশার প্রজননের মৌসুমে ১০ দিন অন্তর অন্তর একযোগে পুরো নগরীতে মশার ঔষধ ছিটাতে হবে। এভাবে দুইমাস ঔষধ ছিটানো গেলে মশার বংশ বৃদ্ধি কমে আসবে।

সিসিকের স্বাস্থ্য শাখা সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনের ২৭টি ওয়ার্ডে (বর্ধিত নতুন ১২টি ওয়ার্ড ছাড়া) একযোগে ঔষধ ছিটাতে হলে অন্তত ১৫০ জন কর্মী প্রয়োজন। কিন্তু এই কাজের জন্য সিটি করপোরেশনের কোন জনবল নেই। মাত্র দুইজন স্প্রে ম্যান রয়েছেন। তাই কখনোই একযোগে পুরো নগরীতে ঔষধ ছিটানো সম্ভব হয় না। একেক ওয়ার্ড করে ঔষধ ছিটাতে গেলেও বাইরের দিনমজুরের উপরের ভরসা রাখতে হয়। অনভিজ্ঞ কর্মীরা ঠিকমতো ঔষধ ছিটাতেও পারে না।
 

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, মশক নিধন কর্মসূচি চলমান রয়েছে। প্রতিদিনই কোন না কোন ওয়ার্ডে মশা নিধন অভিযান চলছে। মুলত একটি মশা প্রতিদিন ৩০ হাজার ডিম পাড়ে। এখন পর্যন্ত ১৯টি ওয়ার্ডে এই মশা নিধনের কার্যক্রম চলছে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ওয়ার্ডে মশক নিধন অভিযান চালানো হবে। অপরিকল্পিতভাবে স্থাপনা ও ভবন নির্মাণ করা, যত্রতত্রভাবে ময়লা আবর্জনা ফেলা এবং ড্রেন, ছড়া ও খালে পলিথিনসহ বিভিন্ন বর্জ্য আটকে থাকার কারণে মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পায়।

তিনি আরো বলেন, মশার ঔষধ ছিটাতে সিটি কর্পোরেশনের একটি সমস্যা রয়েছে। সেটা হলো জনবল কম থাকা। ফগার মিশিনে ঔষধ যাকে দিয়ে ছিটানো হয় তাকে প্রতিদিন ৫০০ টাকা থেকে সাড়ে ৬০০ টাকা দিতে হয়। এছাড়া এসব কাজ করতে লোকজন পাওয়াটা সম্ভব হয়ে উঠেনা। ফলে এক ওয়ার্ডে ঔষধ ছিটালো অন্য ওয়ার্ডে মশা গিয়ে বংশবৃদ্ধি করে ফলে। তাই জনগণ এ ব্যাপারে জনসচেতনাতা অবলম্ভন করতে হবে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান বলেন, আসলে সিলেট নগরীর বৃটিশ আমলের ও ২০/২৫ বছর আগের পানির পাইপ লাইন ছিলো এগুলো ফেটে গিয়ে বিভিন্ন স্থানে পাইপ লিকেজ হওয়ার কারণে খোঁড়াখুড়ি হচ্ছে মেরামতের জন্য। নগরীর ভেতরে রাস্তার উপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য চাপ খেয়ে অনেকস্থানে পানির পাইপ লাইন ফেটে যায়। ফলে এগুলো মেরামত করতে গিয়ে রাস্তা খোঁড়াখুড়ি করা হয়ে থাকে।
 

আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত এধরনের প্রজেক্ট চলমান থাকবে বলে জানান তিনি।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া এন্ড কমিউনিটি সার্ভিস) সুদীপ দাস জানান, রমজান মাস হওয়ায় বিকেলের আগেই মানুষ প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করে বাসায় ফিরতে চান। এই সময়ে নগরীতে যানবাহনের চাপ বেড়েছে। নগরীর পয়েন্টে পয়েন্টে রমজান মাসে যানজট নিরসনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া নগরীর এক পাশের রাস্তাজুড়ে ব্যবসায়ীরা ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছে।
 

পুলিশ এসব ব্যবসায়ীদের প্রতিদিন উচ্ছেদ করে তাদেরকে সর্তক করে দিলেও পরে আবার তারা বসে ব্যবসা করায় রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান তিনি।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / নাজাত/ এসডি-২০