নরসিংদী ফের জেলা বিএনপির কার্যালয়ে ককটেল হামলা, গুলিবর্ষণসহ ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাকর্মীরা। বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে নরসিংদী শহরের চিনিশপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।


নেতাকর্মীরা জানান, সকালে শহরের চিনিশপুরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন ঢাকা থেকে এসে ভেতরে প্রবেশ করার পর ছাত্রদলের পদবঞ্চিতরা কার্যালয়ের পকেট গেট তালাবদ্ধ করে চলে যায়। পরে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মঞ্জুর এলাহীসহ নেতাকর্মীরা কার্যালয়ের গেট খোলে ভেতরে প্রবেশ করেন।


আগামী ৮ এপ্রিল সব উপজেলায় অনুষ্ঠিতব্য বিএনপির অবস্থান কর্মসূচি সফল করতে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে প্রস্তুতিমূলক সভায় মনোহরদী-বেলাব আসনের সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলসহ বিএনপির নেতারা যোগ দেন।

সভা শুরু হওয়ার পরপরই অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আসা ছাত্রদলের পদবঞ্চিত ও বহিষ্কৃত নেতাকর্মীদের একটি দল জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ৫-৭টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোসহ ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুর শুরু করে। এ সময় সেখানে রাখা এক সাংবাদিকের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে ক্ষতিগ্রস্ত করে হামলাকারী বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা। হামলায় বিএনপি কার্যালয়ের ভবনের গ্লাস ভেঙে পড়ে। পাশাপাশি বিভিন্ন দোকানপাট ও গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় জেলাখানার মোড়ে হাসান নামে এক সিএনজি চালককে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়।

হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর সেখান থেকে নিক্ষেপ করা ৮-১০টি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করে কার্যালয়ের কেয়ারটেকার। খবর পেয়ে সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূইয়াসহ পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

সভা শেষ করে  জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনজুর এলাহী ও শহর বিএনপির সভাপতি গোলাম কবীর কামাল বাসায় ফেরার পথে শহরের ব্রাহ্মন্দী মোড়ে তার ওপর হামলা চালায় একই সন্ত্রাসী গ্রুপ।  

মনজুর এলাহী জানান, তার সামনেই এ সন্ত্রাসীরা গোলাম কবীর কামালের ওপর হামলার চেষ্টা করে। তখন তিনি বাধা দিলে এ সন্ত্রাসীরা তার ওপর চড়াও হয়। এ সময় ফেরাতে এসে তার ব্যক্তিগত সহকারী আদর হোসেন আহত হয়।

গোলাম কবীর কামাল বলেন, তারা জেলার চিহ্নিত সন্ত্রাসী। যারা মানুষের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে, ককটেল নিক্ষেপ করে, গাড়িতে হামলা চালায় তারা আমাদের দলের কেউ নয়।

এর আগে জেলা ছাত্রদলের কমিটিতে স্থান না পাওয়ায় ২৬ জানুয়ারি থেকে একাধিকবার বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকনের গাড়িতে, বাড়িতে ও জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেওয়াসহ হামলার ঘটনা ঘটায় পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।

কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন বলেন, পুলিশ সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলতে চাচ্ছে। বারবার পুলিশের উপস্থিতিতে জেলার দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী মাইন উদ্দিন ও অভির নেতৃত্বে একদল চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা একের পর এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটালেও কিছুই বলছে না তারা।  আজ জেলা বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত সভা চলার সময় পুলিশের উপস্থিতিতে নরসিংদী জেলা ছাত্রদলের পদ বঞ্চিত নেতা মাইন উদ্দিন ও অভির নেতৃত্বে একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী তার বাসায় হামলা চালায়। ককটেল বিস্ফোরণের বিকট শব্দে পুরো চিনিশপুর এলাকাজুড়ে তখন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। হামলার সময় পুলিশ উপস্থিত ছিল। হামলার পর পুলিশ সন্ত্রাসীদের নিরাপদে ফিরে যেতে সাহায্য করে।

তিনি আরও বলেন,আমরা কি রাজনীতি করতে পারবো না? মিটিং করতে পারবো না ? কোটে হাজিরা দিতে আসতে পারবো না ? যেখানে যাচ্ছি সেখানেই আমাদের ওপর হামলা হচ্ছে। আমাদের ওপর হামলা হলে পুলিশ আমাদের মামলাও নেয় না।

তিনি বলেন, কেন্দ্র ছাত্রদলের কমিটি দিয়েছে। সেখানে জেলা বিএনপির কি করার আছে। এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও বিএনপির কিছু নেতা বিএনপিকে ধ্বংসের কাজে লিপ্ত রয়েছে।
 
নরসিংদী সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূইয়া বলেন, খবর পেয়ে বিএনপির কার্যালয়ের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। তদন্ত সাপেক্ষে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/পল্লব-৮