সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী বিনোদ নাম্বিয়া এক ভারতীয়। তিনি অমুসলিম হলেও গত ২২ বছর ধরে মুসলিমদের সঙ্গে পবিত্র রমজান মাসে রোজা পালন করে আসছেন। তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে খালিজ টাইমস

২০০১ সালের দিকে রোজা রাখা শুরু করেছিলেন বিনোদ। তিনি এই যাত্রা শুরু করেছিলেন যখন তিনি ভারতের মল্লাপুরম (কেরালার তাঞ্জাভুর জেলার একটি গ্রাম) কাজ করছিলেন।


বিনোদ বলেন, 'মল্লাপুরমে উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনসংখ্যা রয়েছে। তখন আমি রমজানের গুরুত্ব সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না। তবে আমি সেখানকার সম্প্রদায়ের সাথে মিশতে পছন্দ করি। সেখানকার বাসিন্দারা ছিল বেশ সরল। এটি ছিল নম্র জীবনযাপন এবং আমি নির্বিঘ্নে সবার সাথে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছি।'

বিনোদ প্রথমে বুঝতে পারেননি যে রমজানে রোজাদার মুসলিমরা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু খায় না। তিনি সেখানে খাবার খুঁজতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'সবকিছু বন্ধ ছিল, কোনো খাবার ছিল না। কিছু লোক বুঝতে পেরেছিল যে আমি দুপুরের খাবার খুঁজছি এবং ক্ষুধার্ত। এক ব্যক্তি রমজানে আমাকে তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন, তারা রোজা রেখেও আমাকে খাবার দিয়েছিলেন। কিন্তু সবাই রোজা আমি খেতে অনিচ্ছুক ছিলাম। তারপর আমিও আর কিছু খাইনি।'


এরপর এটি শুরুতে একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। পরে এটি প্রত্যেক বছরের রমজানে সঙ্গী করে নিয়েছেন বিনোদ।

বিনোদ বলেন, 'আমি ধীরে ধীরে রমজানের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে শুরু করি। আমি স্থানীয় একটি মসজিদের ইমামের সাথেও বন্ধুত্ব করেছি, যেখানে আমি সারাদিন রোজা রাখার পর প্রতি সন্ধ্যায় ইফতার করতে যেতাম। তিনি আমাকে অনেক অনুপ্রাণিত করেছেন।'

তিনি বলেন, 'সন্ধ্যায় ওই ইমাম ধর্মীয় উপদেশ প্রচার করতে গ্রামে যেতেন এবং আমি তার সঙ্গে যেতাম। সেখানি আমি আমাদের সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় সম্প্রীতির কথা বলেছিলাম। তারপর চাকরি পরিবর্তন করলেও আমি ইমামের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলাম। তিনি রোজার উপকারিতা সম্পর্কে বলতেন। তারপর থেকে আমি রমজানজুড়ে রোজা পালন করি।'

২০০৪ সালে কাজের জন্য দুবাই যান বিনোদ। তারপরও তিনি এটি ছেড়ে দেননি। তিনি বলেন, 'আমি এখানে আমিরাতের এক্সচেঞ্জের সাথে কাজ শুরু করেছি। আমার স্ত্রীও আমাকে রোজা রাখতে উৎসাহিত করেন।'

দুই সন্তানের বাবা বিনোদ বলেন, 'আমি আমার সন্তানদের কিছু করতে বাধ্য করতে চাই না। যদি কোন সময়ে তারা মনে করে যে রোজা একটি ভাল অভ্যাস, তারা নিজেরাই এটি গ্রহণ করবে। আমাকে কেউ জোর করেনি। আমি হৃদয় থেকে এটি গ্রহণ করেছি।'

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/ইআ-০৪