দোকানে স্তরে স্তরে সাজানো জুয়েলারি ও প্রসাধনী সামগ্রী। বেশির ভাগ ‘প্রোডাক্টের’ গায়ে বিদেশি লেভেল লাগানো। বিদেশি পণ্য দাবি করে ক্রেতাদেরও আকৃষ্ট করছেন বিক্রেতারা। ক্রেতারাও বিশ্বাস করে চড়া মূল্যে কিনে নিচ্ছেন সেগুলো। কিন্তু প্রশাসনের অভিযানে ফাঁস হলো গুমর। বিক্রেতাদের ক্রয় রসিদ দেখে ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা নিশ্চিত হন এসব পণ্য বিদেশি নয় ঢাকার চকবাজারের।
 

চকবাজার থেকে এসব জুয়েলারি ও প্রসাধনী সামগ্রী কিনে এনে বিদেশি দাবি করে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন তারা। নিম্নমানের এসব প্রসাধনী সামগ্রী ব্যবহারে স্বাস্থ্যঝুঁকি আছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরাও।
 


সিলেট নগরীর শ্যামলী মার্কেট, মিতালী ম্যানশন, লালদীঘি হকার্স মার্কেট, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, আল হামরা শপিং সিটি, ফেডারেল মার্কেট ও শুকরিয়া মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি বিপণিবিতানে রয়েছে জুয়েলারি ও প্রসাধনী সামগ্রীর বৃহৎ দোকান। এসব দোকানের বেশির ভাগেই দেশীয় পণ্যের পাশাপাশি বিদেশি বলে বিক্রি করা হয় প্রসাধনী সামগ্রী। বিক্রেতারা আমদানি পণ্য দাবি করে সেগুলো বিক্রি করেন ক্রেতাদের কাছে। প্রোডাক্টের গায়ে বিদেশি লেভেল দেখে ক্রেতারাও আস্থার সঙ্গে বাড়তি দামে কিনে নিয়ে যান সেগুলো।
 

এসব পণ্য ব্যবহার করে ত্বকের সমস্যা দেখা দিলেও বিক্রেতার কাছে অভিযোগ করেও কোনো সুরাহা পান না ক্রেতারা।

ক্রেতাদের কাছে থেকে এমন অভিযোগ পেয়ে অভিযানে নামে ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদফতর। অভিযানে নেমে কর্মকর্তাদের চক্ষু চড়কগাছ। গত সোমবার নগরীর জিন্দাবাজার শ্যামলী মার্কেটে অভিযান চালান তারা। ওই মার্কেটটি সিলেট নগরীতে জুয়েলারি ও কসমেটিক্স সামগ্রীর জন্য নারী ক্রেতাদের কাছে বেশ পরিচিত। অভিযানকালে ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তারা বিদেশি পণ্যের আমদানি কিংবা ক্রয় রসিদ দেখতে চান বিক্রেতাদের কাছে। তখন দোকানদাররা তা দেখাতে ব্যর্থ হন। দোকানদাররা জানান, ঢাকার চকবাজার থেকে তারা কিনে এনে এগুলো বিদেশি পণ্য বলে বিক্রি করেন। কখনো চকবাজার থেকেই মোড়ক পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। আবার কখনো তারা নিজেরাই মোড়কে বিদেশি স্টিকার লাগিয়ে থাকেন। ক্রেতাদের সঙ্গে এমন প্রতারণার অভিযোগে ওইদিন শ্যামলী মার্কেটের চারটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়। পরদিন মঙ্গলবার অভিযান চালানো হয় লালদীঘিরপাড় নিউ মার্কেটে। সেখানকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। মার্কেটের প্রতিটি দোকানেই বিদেশি বলে বিক্রি হচ্ছে নিম্নমানের জুয়েলারি ও প্রসাধনী সামগ্রী। অনেকে বিক্রি করছেন বিএসটিআই নিষিদ্ধ পণ্যও। অভিযানকালে তিনটি প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে ভোক্তা অধিকার।
 

ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ অধিদফতর সিলেটের সহকারী পরিচালক (মেট্রো) শ্যামল পুরকায়স্থ জানান, অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঢাকার চকবাজার থেকে নিম্নমানের জুয়েলারি ও প্রসাধনী সামগ্রী কিনে এনে বিদেশি বলে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছে। অনেকে বিএসটিআই কর্তৃক নিষিদ্ধ পণ্যও বিক্রি করছেন। ভোক্তারা চড়া দামে সেগুলো কিনে প্রতারিত হচ্ছেন। এসব ভেজাল পণ্য কিনে ক্রেতারা যেমনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, ঠিক তেমনি তাদের ত্বকেরও ক্ষতি হচ্ছে।
 

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, নিম্নমানের প্রসাধনী সামগ্রীতে বিভিন্ন ধরনের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এগুলো ব্যবহারে ত্বকে নানা রকমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি ত্বক পুড়ে গিয়ে ক্ষতেরও সৃষ্টি হতে পারে।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/শাদিআচৌ/নাজাত/এসডি-০৪