শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলামের চারবছরের মেয়াদকাল পূর্ণ হচ্ছে আগামী মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল)। তবে এ শিক্ষায়তনের ‘পরবর্তী কোষাধ্যক্ষ কে হতে যাচ্ছেন ?’ এমন আলোচনা শিক্ষক থেকে কর্মচারী পর্যন্ত বিস্তৃত।
 

শিক্ষকদের ভাষ্য, এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাওয়া সবারই আগ্রহ কিংবা অভিলাষ রয়েছে। 


তবে এর মধ্যে যে কয়জন শিক্ষককের নাম সামনে আসছে; সম্ভাবনা রয়েছে তাদের মধ্যে থেকেই কেউ একজন হতে পারেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক খাতের ওই পদটির কর্ণধার; যার নেতৃত্বে আগামী চার বছর পরিচালিত হবে শাবির কোষাধাক্ষের দপ্তর। 

যাদেরকে ঘিরে আলোচনা চলছে ক্যাম্পাসজুড়ে; এর মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, বর্তমান ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচলক অধ্যাপক ড. আমিনা পারভীন এবং সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়াররিং বিভাগের( সিইই) বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমেদ। 
 

কেন কোষাধ্যক্ষ পদ গুরুত্বপূর্ণ? 

শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ১৯৮৭ এর ১৪ নং ধারার ১ উপধারা অনুযায়ী, আচার্য কর্তৃক চার বছরের জন্য একজন কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ করা হয়ে থাকে। 

একই ধারার ৩ নং উপধারায় বলা হয়েছে, কোষাধ্যক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলের সাধারণ তদারক করিবেন ও অর্থসংক্রান্ত পরামর্শ দিবেন।

উপধারা ৪ অনুযায়ী, কোষাধ্যক্ষ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণ সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি ও বিনিয়োগ পরিচালনা করিবেন। 
 
উপধারা ৬ অনুযায়ী, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে সকল চুক্তিতে স্বাক্ষর করিবেন এবং উপধারা ৭ অনুযায়ী, সংবিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য ক্ষমতাও কোষাধ্যক্ষ প্রয়োগ করতে পারবেন।

এসব ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনুপস্থিতে কোষাধ্যক্ষ ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে অনেকসময় দায়িত্ব পালন করে থাকেন। এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কাছে এই পদে আসীন হওয়া অতি আগ্রহের। 
 

উপাচার্য কি বলছেন? 

ক্যাম্পাসের একাধিক সূত্রে থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে ২০১৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদের আদেশক্রমে শাবির ৬ষ্ট কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম। 

আগামী মঙ্গলবার কোষাধ্যক্ষ হিসেবে তার চারবছর মেয়াদকাল পূর্ণ হচ্ছে বলে জানিয়েছে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। 

এছাড়া নতুন কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ এখতিয়ার আচার্যের হাতে; প্রধানমন্ত্রীর সুপারিশে আচার্য এই পদে যে কাউকে নিয়োগ দিতে পারেন বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। 

এক প্রশ্নের উত্তরে উপাচার্য সিলেট ভিউকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সুপারিশের সুযোগ থাকলেও সম্পূর্ণ বিষয়টি আচার্য দেখবেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইর থেকে যেকোনো যোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে পারেন। তবে কবে নাগাদ নতুন কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ হতে পারে তিনি সে ব্যাপারে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।  

এদিকে শাবির পঞ্চম কোষাধ্যক্ষ ছিলেন গণিতের আরেক অধ্যাপক ড. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস। বর্তমান কোষাধ্যক্ষ ড. আনোয়ারুল ইসলামও একই বিভাগের অধ্যাপক।

বিগত সময়ে এই দুজনের সাথেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজগুলো সুন্দরভাবে পরিচালনা করেছেন বলে জানান উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন। 
 
তিনি বলেন, ‘দুজনের সাথেই চমৎকার সময় কেটেছে। কোনো ধরণের জটিলতা কখনও তৈরি হয়নি। আশা করি পরবর্তী কোষাধ্যক্ষ  হিসেবে যিনি নিয়োগ পাবেন, তার সাথেও সুন্দর সময় কাটবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতির স্বার্থে একযোগে কাজ করতে পারব।’
 

সপ্তম কোষাধ্যক্ষ পদের জন্য যারা এগিয়ে

অনুসন্ধানে জানা যায়, শাবির সপ্তম কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনজন শিক্ষকের নাম বেরিয়ে আসছে; এর মধ্যে যেকোনো একজন হতে পারেন আর্থিক খাতের দায়িত্বশীল ব্যক্তি। 

ভিন্ন কয়েকটি সূত্র থেকে জানা যায়, তিনজনের এ তালিকায় রয়েছেন বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম, বর্তমান ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক আমিনা পারভীন ও সিভিল এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং (সিইই) বিভাগের অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমেদ। 

এদের মধ্যে বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম বিগত সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরত্বপূর্ণ প্রশাসনিক পদে দায়িত্বপালন করেছেন। 

তিনি একাধারে সাবেক ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশান পরিচালক, শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি, হলের প্রভোস্ট, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সরকার মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্যসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ইউনিটের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালন করেছেন। 

এদিকে কোষাধ্যক্ষ পদের জন্য আলোচনায় থাকা অধ্যাপক আমিনা পারভীনও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ইউনিটের বিভিন্ন পদে দায়িত্বপালন করেছেন। তিনিই প্রথম নারী যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন। একাধারে তিনি সমাজকর্ম বিভাগের প্রধান হিসেবে সম্প্রতি দায়িত্ব পেয়েছেন। একই সাথে তিনি শাবি শিক্ষক সমিতির কার্যকরী সদস্য হিসেবে এ বছর নির্বাচিত হয়েছেন। 

এর আগে তিনি সিন্ডিকেট সদস্য, ছাত্রী হলের প্রভোস্ট ও শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতিসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ এবং সাংগঠনিক পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।

অপরদিকে আলোচনায় থাকা সিইই বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমেদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিন্ডিকেট সদস্য ছিলেন। এছাড়া তিনি অ্যাপ্লাইড সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি অনুষদের সাবেক ডিন, সিইই বিভাগের প্রধান এবং শাবির ভর্তি কমিটির সাবেক সভাপতি ছিলেন। তাছাড়া প্রশাসনিক ইউনিটের বিভিন্ন পদের দায়িত্বপালন করেছেন বলে জানা যায়। 

বর্তমানে তিনি শাহজালাল ইউনিভার্সিটি স্কুল এন্ড কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে জানা যায়। 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/নোমান/পল্লব-১১