মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ছয়চিরী দিঘীর পারে দুই দিনব্যাপি চড়ক পূজা ও মেলা সমাপ্ত হয়েছে।
উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে শুক্রবার থেকে শুরু হয়ে শনিবার বিকালে এ চড়ক পূজা ও মেলা সমাপ্ত হয়।
ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে বাংলা পুঞ্জিকা মতে প্রতিবছরের চৈত্র সংক্রান্তিতে ২দিন ব্যাপী চড়ক পূজা উৎসবের এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
জানা যায়, চড়ক পূজা উৎসবের ১০/১২ দিন পূর্ব থেকে বিভিন্ন এলাকার পূজারীর মধ্যে ৪০/৫০ জন সন্ন্যাস ধর্মে দীক্ষিত হয়ে গ্রামের সনাতনী হিন্দু বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিব-গৌরীসহ নৃত্যগীত সহকারে ভিক্ষাবৃত্তিতে অংশ নেন। এ ক’দিন তারা পবিত্রতার সহিত সন্যাস ব্রত পালন করে নিরামিষ ভোজি এবং সারাদিন উপবাস পালন করেন। চড়ক পূজার ২ দিন পূর্বে পূজারীরা শ্মশানে গিয়ে পূজা অর্চনা করেন ও শেষে গৌরীর বিয়ে, গৌরী নাচ ও বিভিন্ন গান গেয়ে ঢাকের বাজনায় সরগরম করে গোটা এলাকা।
ছয়চিরি দিঘীর পাড়ে ভক্তরা নৃত্য করার জন্য কলাগাছ ও বাঁশের খুটি বেষ্টিত মন্ডলী তৈরী করে। পূজার প্রথম দিন নিশি রাতে তান্ত্রিক মন্ত্র ধারা কাচ পড়া দিয়ে জলন্ত (লাকড়ির কয়লা) ছাইয়ের উপর মানুষরুপি কালী সেজে নৃত্য করে। অন্য ভক্তগণ নৃত্যের তালে তালে, ছন্দে ছন্দে ঢোলক, কাশি, করতাল বাজিয়ে থাকেন। এসময় দর্শনার্থীরা জয়ধ্বনি এবং নারীদের কন্ঠে হুলু ধ্বনি দিতে থাকেন।
জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে এই ‘কালীনাচ’ অত্যন্ত আকর্ষনীয় এবং তান্ত্রিক মন্ত্র দিয়ে ৭টি বলিছেদ (লম্বা দা) এর উপর শিব শয্যা করেন। শিবের উপর উঠে কালী ভয়ানক এক অদ্ভুত রুপ ধারন করেন। এসময় উপস্থিত দর্শনার্থী সবাই আতঙ্কিত হয়ে উঠেন। কালীনাচ শেষ হওয়ার পর পূজারীরা পূজা করে পান বাটা দিয়ে চড়ক গাছকে নিমন্ত্রণ জানানো হলে পার্শ্ববর্তী ঐতিহাসিক ছয়চিরি দিঘী থেকে ভেসে উঠে ১০০ ফুট লম্বা চড়ক গাছ। এ গাছের চুড়া থেকে মাচা পর্যন্ত চারটি পাখার মতো করে বাধা হয় চারটি বাঁশ যুক্ত করা হয় লম্বা রশি। আগের বছর উৎসব শেষে এই দিঘীতে ডুবিয়ে রাখা হয়ে ছিল চড়ক গাছ। দিঘীর পাড়ে গর্ত খুড়ে সোজা এবং খাড়া করে পোঁতা হয় এ গাছ।
দেবতার পূজা-অর্চনা শেষে অপরাহ্নে মূল সন্ন্যাসী ৪ জন ভক্তের (জীবিত মানুষের) পিঠে লোহার দু’টি করে বড়শি গেঁথে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে চড়ক গাছ ঘুরানো হয়। ফেরা চড়ক পূজায় দেবতার পূজা অর্চনা করা হয়। ছয়চিরি দিঘীর চার পাড়ের মধ্যে দিঘীর পূর্বপাড়ে ১টি, উত্তর পাড়ে ১টি এবং দক্ষিন পাড়ে ২টি চড়ক গাছ স্থাপন করে পূজা হয়। বিভিন্ন অলৌকিক ধর্মীয় কর্মসূচী উপভোগ করার জন্য প্রতি বছরের মত এবারও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে দর্শনার্থীর উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। চড়ক পূজা উপলক্ষে দুই দিনব্যাপী এক বিশাল মেলা বসেছিল।
চড়কপূজা উদযাপন কমিটির নেতা অনিরুদ্ধ প্রসাদ রায় চৌধুরী জানান, ইউনিয়ন পরিষদ ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/জয়নাল/এসডি-০২