বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আজিজুল বারী হেলাল, সাইফুল ইসলাম নীরব, আব্দুল মোনায়েম মুন্নাসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে সরকার মনে করছে তাদের শেষ রক্ষা হবে, কিন্তু এবার আর তা হবে না। অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের সব লাল বাতি জ্বলে গেছে।
তিনি আরও বলেন, এ পৃথিবীর বিভিন্ন কুখ্যাত স্বৈরশাসকের নমুনা আমরা আওয়ামী সরকারের মাঝে দেখতে পাচ্ছি। আজকে তাদের অত্যাচারের নমুনা বিট্রিশ শাসনামল, পাকিস্তান শাসনামল, হিটলার ও চেঙ্গিস খানকেও হার মানিয়েছে। এ সরকারের বর্বরতার ইতিহাসও একটি অধ্যায় হিসেবে লিপিবদ্ধ থাকবে।
শনিবার (২৯ এপ্রিল) বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক আলহাজ্ব এম. এ মান্নানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে এ স্মরণ সভার আয়োজন করে অধ্যাপক এম. এ মান্নান স্মৃতি পরিষদ।
জেলখানাতে নির্যাতনের নতুন মাত্রায় যোগ হয়েছে অভিযোগ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, কারাগারের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা সিসি ক্যামেরায় দেখেন আমাদের সঙ্গে কেউ কথা বলছে কিনা। আমার মনে হয় প্রধানমন্ত্রীকে খুশি করার জন্য তারা এটি করেছে। যাতে তারা আরও প্রমোশন পায়। তারা ভেবেছে, ম্যাডাম এখানে ঢুকিয়েছেন আমরাও তাদের এখানে শান্তিতে থাকতে দেবো না। তারা কারাগারের ভেতর তারা আরেকটা কারাগার তৈরি করেছে বিএনপি নেতাদের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) ১৫ দিনের সফরে বিদেশ গেছেন। জাপান থেকে ঘুরে প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আমেরিকা গেছেন। সেখান থেকে আটলান্টিক মহাসাগর পাড়ি দিয়ে আবার লন্ডন। কেন এত দৌড়ঝাপ? দেশের কি কি বিক্রি করতে গেছেন? কি কি বিক্রি করে আপনি (প্রধানমন্ত্রী) নির্বাচনের টিকে থাকার গ্যারান্টি আদায় করতে গেছেন? জনগণ জানতে চায় আপনার কাছে।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, এমন এক জুলুমের বৃত্তে আমরা আটকে আছি, তা সত্যিই বিষ্ময়কর। যারা আমরা বিরোধী দল করি, বিএনপি করি, জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে বুকে ধারণ করি, সার্বভৌমত্বের কথা বলি, স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করার কথা বলি, আমরা আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন ও অত্যাচারিত। নানাভাবে আমরা অত্যাচারিত।
তিনি আরও বলেন, এম এ মান্নানের অপরাধ কি? তিনি সব কিছুকে অতিক্রম করে জনগণের শুভেচ্ছা মেয়র হলেন। ১৯৯১ সালে সারাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন অধ্যাপক এম এ মান্নান। তার জনপ্রিয়তা যাচাই করার ক্ষমতা শেখ হাসিনার নেই।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য হচ্ছে তারা স্বচ্ছতা, সুষ্ঠু এবং অবাধ এ শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত নয়। এ শব্দগুলোকে তারা কখনোই সহ্য করতে পারে না। তাই এম এ মান্নান মেয়র হওয়ার পর তার দিবানিশি কেটেছে চার দেয়ালের মাঝে। মেয়র হিসেবে ১-২ বছর গেলে বুঝা যাবে তিনি দুর্নীতি করেছেন, কি করেননি। কিন্তু তার আগেই মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে আটকে রাখা হয়েছিল। এটা গভীর ষড়যন্ত্র। একটি মানুষ জনগণের সঙ্গে নির্বাচনী প্রচারণা করেছে, নির্বাচনে বিজয়ী হলেন, একজন সুস্থ সবল মানুষ। তারপর তাকে কারাগারে নিয়ে তিলে তিলে মারা হলো। যেমনি করে বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে গিয়ে এখন অসুস্থ। এর পেছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে।
বিএনপির এ নেতা আরও বলেন, জাতীয়তাবাদী শক্তিকে পঙ্গু করার জন্য নিঃশেষ করার জন্য এ সরকার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে তাদের গুরুদের সহযোগিতায় এ দেশ থেকে গণতন্ত্রের নাম-নিশানা মুছে ফেলার জন্য বিরোধীদল শূন্য একটি রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা দিয়ে মানুষকে আটকে রাখা হয়েছে। মানুষ কোনো কথা বললে কি হয়, এটা নিয়ে ভয়। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যারা আছেন, তাদের জামিন হয় না। তাদের জামিনের ক্ষেত্রে প্রচণ্ড বাধা। অর্থাৎ বাকস্বাধীনতা ও লেখার স্বাধীনতা শেখ হাসিনা নিশ্চিত করতে পারেনি।
বিএনপির সমাবেশে ঘিরে বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসা শুরু করল উৎসবের মধ্যে একটা পরিবেশ তৈরি হলো। পার্টি অফিসের ভেতর আমরা আছি, সারাদেশ থেকে নেতাকর্মীরা আসছে শুভেচ্ছা বিনিময় করছে। কোনো ধরনের সংঘাতের চিহ্নমাত্র ছিল না। পল্টন সমাবেশে ঘিরে একটা উৎসব তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার সেটি সহ্য হলো না। ডিবি অফিস থেকে শুরু করে সরকারের সব বাহিনী নেকড়ের মতো হামলে পড়লো পার্টি অফিস।
গাজীপুর মহানগর বিএনপির সদস্য ও কাউলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব নাজিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও গাজীপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব শওকত হোসেন সরকারের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি এ. কে. এম ফজলুল হক মিলন।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটো।
এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-শ্রম বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবির খান, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, সদস্য কাজী হাইয়েদুল আলম বাবলু, মো. মজিবর রহমান প্রমুখ।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/পল্লব-২