বেওয়ারিশ বা পথ কুকুরের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন সিলেট মহানগরবাসী। রাতের বেলায় শহরের একাধিক গলি দখল করে নিচ্ছে কুকুরের দল। রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে কুকুরের ভয়ে আতঙ্কে থাকছেন পথচারীরা। শুধু পথচারীদের দেখেই নয়, চলন্ত যানবাহন দেখেও মাঝেমধ্যে ধেয়ে আসছে কুকুর গুলি। এমন অবস্থায় কুকুরের আক্রমণ থেকে নিস্তার পেতে বেওয়ারিশ কুকুর নিধনের দাবি জানিয়েছেন নগরবাসী।
নগরবাসীর অভিযোগ, নগরীতে দুপুর থেকে ভোর পর্যন্ত সর্বদাই ঘুরে বেড়ায় এসব বেওয়ারিশ কুকুর। পাড়া-মহল্লায় রাতে কর্মস্থল থেকে ফেরা মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন কুকুরের কামড়ে। দিনে বিচরণ কম চোখে পড়লেও বিকেল গড়াতেই বাড়ছে সংখ্যা। আর রাত নামতেই ব্যস্ত রাস্তা চলে যায় কুকুরের দখলে। এ নিয়ে আতঙ্ক, ক্ষোভ দুটোই আছে নগরবাসীর।
তবে সিলেট সিটি কর্পোরেশন বলছে, আগে এসব বেওয়ারিশ কুকুর নিধনে অভিযান চালালেও এখন আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় নিধন অভিযান বন্ধ রয়েছে। এতে করে বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত মারাত্মকভাবে বেড়েছে। ২০২১ সালে ২২শ’ কুকুরকে বন্ধ্যাকরণ ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশের হিসাব অনুযায়ী নগরে ২২শ থেকে ২৫শ এর মতো কুকুর রয়েছে। তবে প্রকৃত হিসাব এর চেয়েও বেশি বলে দাবি অনেকের।
মদিনা মার্কেটের বাসিন্দা নুরুল জানান, আখালিয়া থেকে শুরু করে পাঠানটুলা পর্যন্ত এলাকায় কুকুরের দৌরাত্ম্য সবচেয়ে বেশি। রাতে রাস্তায় একা বের হলেই যখন তখন কুকুরের আক্রমনে পড়তে হচ্ছে।
উপশহরের বাসিন্দা সালাউদ্দিন বলেন, পথ কুকুরের অত্যাচারে বাড়ির বাইরে বের হওয়াটাই আতঙ্কের ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। রাস্তাঘাটে অনেকেই কুকুরকে খাবার দিয়ে যাচ্ছে। তাই কুকুরের সংখ্যাও বাড়ছে দিন দিন। কুকুর আতঙ্কে সকালে বাচ্চারা স্কুলে যেতে ভয় পায়, ফজরের সময় মুসল্লিদের নামাজে যেতে বেগ পেতে হয়।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, কুকুর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমরা ২০২০ সালে ২২শ’ কুকুরকে ভ্যাকসিন দিয়েছি, সেই সংখ্যাটা মোট কুকুরের ৫০ খেকে ৬০ শতাংশ হবে। ২০১৬ সালের আগে সিলেটে কুকুর নিধন কর্মসূচি পালন করা হত। তবে আদালতের রায়ের কারণে এখন কুকুর নিধন বন্ধ আছে। কিন্তু দিন যতো যাচ্ছে অবস্থা ততোই গুরুতর হচ্ছে। কুকুর উপকারী প্রাণি কিন্তু এর নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে উপকারী প্রাণি অপকারের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন, শুধু ভ্যাকসিনের বাইরে আমাদের কিছু করার নেই। ২০১৯ সালে করা প্রাণী কল্যাণ আইন বলা হয়েছে, মালিকানাবিহীন কোনো প্রাণি নিধন বা স্থানান্তর দণ্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া ২০১৪ সালে একটি প্রাণিপ্রেমী সংগঠনের রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে কুকুর নিধনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আদালত থেকেও। আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে আমার অসহায়।
তিনি জানান, কুকুর কামড়ালে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। কুকুর কামড়ালে সেই ক্ষত স্থান সাবান দিয়ে দ্রুত ধুয়ে ফেলতে হবে। তারপর তাকে যতদ্রত সম্ভব চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। তবে বাড়ির পোষা কুকুর কামড়ালে কুকুরের গতিবিধি লক্ষ্য করে যদি দেখা যায় কুকুরটি স্বাভবিক আচরণ করছে। সে ক্ষেত্রে র্যাবিক্স ভ্যাকসিন না দিলেও হয়। তবে কুকুরে কামড়ালে ভ্যাকসিন দেয়াটা ভালো।
সিলেটভিউ২৪ডটকম / নাজাত