একসময় খাল, বিল, ঝিল, পুকুর, ডোবা ও নদী-নালায় মাছ প্রচুর পরিমাণ থাকত। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশীয় মাছ সরপুঁটি, টেংরা, বাইম, ঘনিয়া, চিংড়ি, বোয়াল, কাতলা, রুই, চিতল, মৃগেল, শিং, মাগুর সহ নানান প্রজাতির দেশীয় মাছগুলো দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে। দেশীয় মাছের উপযুক্ত জায়গাই ছিল হাওর। এসব মাছ স্বাদেও অতুলনীয়।
 

এ কথাগুলো অনেকটা গল্পের মতো মনে হলেও বাস্তবতা তাই ছিল। হাওড়, ডোবা, খাল, বিলে মাছ পাওয়া যায় না বললেই চলে। এরইমধ্যে আবার ডোবা, খাল, বিলগুলো শুকিয়ে মাছ আহরনের মাধ্যমে ধ্বংস করছে মাছের ভান্ডারকে। এই চরম সংকটেও বসে নেই মৎস আহরনে জেলেরা।
 


বুধবার (১৭ মে) সরেজমিনে শাল্লা উপজেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, মাছের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। পুকুরের চাষকৃত কিছু মাছ বাজারে পাওয়া যায়। তাও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। আবার দাম বেশি হওয়ায় সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতারও বাইরে।
 

স্থানীয়রা জানান, হাওড়ে অল্প পরিমান পোনামাছ আছে। যেগুলো আছে ক'দিন পরেই বড় হয়ে বর্ষা মৌসুমে ছড়িয়ে পড়বে হাওরে হাওরে। তখন জেলেদের জালে প্রচুর মাছও ধরা পড়বে। সেসময় মাত্র ১০০ টাকার মধ্যেই একটি পরিবারের মাছের চাহিদা মিটে। তবে খরা মৌসুম অর্থাৎ চৈত্র-বৈশাখ মাসে মাছের খুব বেশি অভাবে দামও থাকে আকাশছোঁয়া। আবার জ্যৈষ্ঠমাসে পাহাড়ি ঢলের সাথে হাওরে আসে মাছও। তাছাড়া এসময় মাছের ডিম থেকেও পোনামাছের জন্ম হয়। নতুন পানি হাওরে ঢুকলে মাছের অভাব আর তেমন থাকে না। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় মাছের চরম সংকট রয়েছে খোদ মাছের ভাণ্ডার নামক হাওরপাড়ে।
 

মাছ বিক্রেতা বকুল বলেন, ‌‌‘মাছ কোন তেমন পাওয়া যায় না। ইতার লাগি বাক্কা দূর পুকুর থেকে মাছ কিইন্যা বেচতাছি। দেশি মাছ থাইক্যা পুকুরের মাছের দামও একটু কম। মাছের সাইজ ভালা অইলে দাম পাওয়া যায়।’

জেলে সম্প্রদায়ের জ্যোতিষ মাহিষ্য দাস বলেন, ‘সারাদিন নদীতে জাল বেয়ে মাত্র আধা কেজি টেংরা মাছ পাইছি। বাজারে বিক্রি করছি ২৫০ টাকা দিয়া। তাও প্রতিদিন জালে মাছ ধরা পড়ে না বলেও জানান এই দরিদ্র মৎস্যজীবী।’
 

বিগত (১৫ ও ১৬ মে) উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ছায়ার হাওরে একটি বিল শুকানোর অপরাধে ৩হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। অন্যদিকে উপজেলার ছায়ার হাওরে কছমা বিল শুকিয়ে মাছ ধরার চেষ্টা করেছিল জেলেরা। খবর পেয়ে বিকেলে হাওরে ছুটে যান উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ জামান খান। জেলেরা তখন প্রশাসনের লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যান। সেখান থেকে বিল শুকানোর জন্য ব্যবহৃত একটি ইঞ্জিনসহ দুটি পাইপ জব্দ করা হয়।
 

এবিষয়ে মাসুদ জামান খান বলেন, ‘মাছের সংকট দেখা দেওয়ায় জেলেরা বিল শুকিয়ে মাছ ধরতে চেয়েছিল। কিন্তু এটি মাছে প্রজননের সময়। বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ, আষাঢ় এই তিন মাস "মা" মাছ হাওরে ডিম পাড়ে। ডিম থেকে পোনামাছের জন্ম হয়। এমনিতেই হাওরে পানি নেই, মাছও নেই। এসময় বিল শুকিয়ে মাছ ধরা যাবে না। জেলেরা পালিয়ে গেলেও বিল শুকানো জন্য তাদের একটি ইঞ্জিনসহ দু'টি পাইপ জব্দ করা হয়েছে।’
 

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তালেব বলেন, ‘হাওরে এখন মাছের সংকট রয়েছে। তাছাড়া এসময় টাতে পোনামাছের জন্ম হয়। ছায়ার হাওরে বিল শুকানোর অপরাধে একটি মেশিন জব্দ করা হয়েছে। অভিযানের সময় জেলেরা পালিয়ে যায়। তবে তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।’

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/সন্দীপন/এসডি-৩৪৪