দক্ষিণ আফ্রিকায় ইকবাল হোসেন (৪২) নামের আরও এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। গতকাল রোববার (১০ মার্চ) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টার দিকে (বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা) ডারবান শহরে নিজ দোকানের সামনে ওই হামলার ঘটনা ঘটে।

 


নিহত ইকবাল হোসেন নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ২নং কেশারপাড় ইউনিয়নের কেশারপাড় মধ্যপাড়া গ্রামের মিন্নাত আলী ভূঁইয়া বাড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা শফি উল্যার ছেলে। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে ইকবাল সবার বড়।
 

ডারবান শহরের একই এলাকায় বসবাসকারী ইকবালের ছোট ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন ও স্বজনদের মাধ্যমে গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে পরিবারের সদস্যরা ঘটনাটি জানতে পারেন। এরপরই পরিবারের সদস্যদের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

 

এর আগে গত ৩ মার্চ রাতে দক্ষিণ আফ্রিকার জোহানেসবার্গ শহরে‌ বাংলাদেশি দম্পতিকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। নিহত ব্যক্তিরা হলেন- সেনবাগের অর্জুনতলা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর মানিকপুর গ্রামের মো. হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে মো. মহিন ভূঁইয়া (৩২) ও তার স্ত্রী রুনা আক্তার (২২)। রুনা উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের জমাদার বাড়ির মো. লিটনের মেয়ে। গতকাল রোববার দুপুরে দুইজনের জানাজা শেষে মরদেহ নিজ বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।

 

নিহত ইকবাল হোসেনের ভাই মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, আফ্রিকার স্থানীয় সময় রোববার বিকেল ৫টার দিকে ডারবানের মার্কেটে তার দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় কৃষ্ণাঙ্গ সন্ত্রাসীরা ইকবালের মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গুলি করে তার হাতে থাকা পলিথিনের ব্যাগে মোড়ানো টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। এরপর স্থানীয়রা তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করলে আজ সোমবার সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
 

নিহতের স্ত্রী রওনক জাহান বলেন, আমার স্বামী প্রায় সাত বছর আগে জীবিকার সন্ধানে দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান। আমাদের দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। কয়েক মাস আগে ওই দোকানে চুরি করেছিল দুর্বৃত্তরা। তখন অনেক টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এবার আমার স্বামীকে মাথায় গুলি করে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। আমার দুই সন্তান নিয়ে এখন আমি কই যাব? আমার তো সব শেষ হয়ে গেছে।
 

নিহতের ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন বলেন, পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হলেন আমার ভাই। দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার পর থেকে আর বাংলাদেশে আসতে পারেননি। ১৫ মার্চ তিনি দেশে ফেরার জন্য উড়োজাহাজের টিকিটও কেটেছিলেন। কিন্তু দুর্বৃত্তরা আমাদের সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছেন। আমার ভাইয়ের মরদেহ দেশে আনতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
 

বিষয়টি নিশ্চিত করে সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিসান বিন মাজেদ বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে সেনবাগের কেশারপাড় গ্রামের ইকবাল হোসেনের নিহত হওয়ার ঘটনা শুনেছি। আসলে সরকারিভাবে বৈধপথে দক্ষিণ আফ্রিকায় যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা গিয়েছেন সবাই অবৈধভাবে গিয়েছেন। তাই কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সরকার জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে না। তবে মরদেহ দেশে আনতে সরকার সহযোগিতা করে। আমি নিহত ব্যক্তির মরদেহ দেশে আনার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পরিবারকে সহযোগিতা করবো। এর আগেও স্বামী-স্ত্রী দুইজন নিহত হয়েছেন। একই উপজেলায় পর পর দুটি ঘটনায় আমরা শোকাহত।
 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এনটি