ভয়ংকর হয়ে উঠেছে সিলেট-তামাবিল সড়ক। একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই যাচ্ছে। মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে সড়কটি। ঝরছে অসংখ্য প্রাণ। শিশু, কিশোর, যুবক, নারীসহ গত তিন মাসে এই সড়কে অন্তত ১২ জনের প্রাণহাণি ঘটেছে। প্রশ্ন উঠেছে- এই সড়কে আর কত স্বপ্ন ঝরবে?

 


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,  সিলেট-তামাবিল মহাসড়কে ‍শুধু জৈন্তাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে গেছে ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক। চালকদের বেপরোয়া মনোভাব ও ট্রাফিক সাইন না মানার প্রবণতা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও টমটমের আধিক্য অদক্ষ চালকদের কারণে প্রতিনিয়ত বাড়ছে দুর্ঘটনা। এতে করে সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক যেন মৃত্যুর জনপদ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক অন্তত পাঁচটি দুর্ঘটনায় ১২ মৃত্যু নতুন করে আলোচনায় এনেছে এ এই মহাসড়ক।

 

সবশেষ সোমবার (১৮ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে এই মহাসড়কের সিলেট পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর সামনে পিকআপ ভ্যান ও লেগুনা সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৬ জন। ঘটনাস্থলেই চারজন ও হাসপাতালে নেওয়ার পর দুইজন মারা যান।

 

নিহতরা হলেন- জৈন্তাপুরের চিকনাগুল এলাকার যাত্রগোল (ঠাকুরের মাটি) গ্রামের সন্তোষ পাত্রের স্ত্রী মঙ্গলি পাত্র (৫৫), একই গ্রামের নন্ত পাত্রের স্ত্রী সাবিত্রি পাত্র (৩৫), কুষ পাত্রের স্ত্রী সুচিতা পাত্র (৩৫) ও তার ৬ মাস বয়েসি মেয়েসন্তান বিজলী, সুভেন্দ্র পাত্রের মেয়ে ঋতু পাত্র (৮) ও মৃত নিপেন্ত্র পাত্রের স্ত্রী শ্যামলা পাত্র (৫৫)। 

 

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, দুপুর ১২টার দিকে জৈন্তাপুরে তামাবিল সড়কে পল্লি বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর সামনে সিলেটগামী গরুবোঝাই পিকআপের (সিলেট-মেট্রো-ন ১১-২২৬৪) সঙ্গে বিপরীত দিক থেকে আসা লেগুনার (সিলেট-ছ ১১-১২৫২) মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে ঘটনাস্থলেই মঙ্গলি পাত্র, সুচিতা পাত্র, শিশু ঋতু পাত্র ও বিজলী মারা যান। জানা গেছে, মঙ্গলি পাত্ররা লেগুনা করে একটি বৌ-ভাতের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সিলেট-তামাবিল সড়ক দিয়ে চিকনাগুল থেকে উপজেলার মোকামপুঞ্জি যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এই দুর্ঘটনার শিকার হন।

 

এরআগে, ৫ মার্চ সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুর উপজেলার মোকামপুঞ্জি এলাকায় পিকআপভ্যানে ধাক্কায় দুই যুবক নিহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আহত হন আরও চারজন। নিহতরা হলেন, জৈন্তাপুরের বাহুরবাগ গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম. লিয়াকত আলীর ছেলে ফয়সাল রেজা (১৯) ও একই উপজেলার মোকামবাড়ি গ্রামের সৈয়দ শিহাব আহমদ (২২)।
 

২০ জানুয়ারি  সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের রাংপানি নামক স্থানে যাওয়া মাত্র ট্রাকের ধাক্কায় প্রাইভেটকার আরোহী চার ছাত্রলীগ নেতা মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- জৈন্তাপুর উপজেলা সদর (নিজপাট) ইউনিয়নের জৈন্তাপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল সংলগ্ন তোয়াসি হাটির বাসিন্দা বনদিপ পালের ছেলে ছাত্রলীগ নেতা নেহাল পাল (২৫), কমলা বাড়ির গ্রামের জামাল আহমদের ছেলে জুবায়ের আহসান (২৪), বড় পুকুরপাড় পানিয়ারা হাটির আরজু মিয়ার ছেলে মেহেদী হাসান তমাল (২২) ও জাঙ্গাল হাটির হারুনুর রশিদের ছেলে আলী হোসেন সুমন (২৩)।

 

এছাড়াও ১৪ ফেব্রুয়ারি সিলেট-তামাবিল সড়কের জৈন্তাপুর উপজেলায় চোরাই পণ্যবাহী ডিআই ট্রাকের ধাক্কায় পৃথক তিনটি দুর্ঘটনায় সাতজন আহত হন।  ২০ জানুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে সিলেট-তামাবিল সড়কে অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচলেন এক অ্যাম্বুলেন্সচালক। 

 

এদিকে এই সড়কে দুর্ঘটনার জন্য ট্রাকচালকদের বেপরোয়া মনোভাবকে দায়ী করেছে সচেতন মহল। তারা বলছেন- এই সড়কে দুর্ঘটনা বেড়েছে। এর জন্য যেমন ট্রাকচালকদের বেপরোয়া গতি এবং ট্রাফিক সাইন না মানা দায়ী, তেমনি মহাসড়কের যত্রতত্র অটোরিকশা ও টমটমের স্ট্যান্ড গড়ে ওঠাও দায়ী।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / মাহি