জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ (জেসিপিএসসি) এ যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে ২৫ মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস-২০২৪ পালিত হয়েছে। সোমবার সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে অর্ধনমিত রাখার মধ্য দিয়ে দিবসের কার্যক্রম শুরু হয়। সকাল ১০টায় প্রতিষ্ঠানের অডিটোরিয়ামে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়।

 


অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল তাহিয়াত জালাল চৌধুরী, পিএসসি। আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মো. ইদ্রিস আলী, বীরপ্রতীক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব আহমদ। জেসিপিএসসি’র অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, শিক্ষকমণ্ডলী ও শিক্ষার্থী সারিয়া ইসলাম ও আনিশা নূর বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।

 

অনুষ্ঠানের শুরুতেই পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহান মাহদী, দোয়া ও মোনাজাত পরিচালনা করেন সিনিয়র শিক্ষক মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। মহামান্য রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জাহিন আল সাবাহ্  এবং প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করেন একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা ফাতেমা । দুই জন বীর মুক্তিযোদ্ধাই মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এসময় এক ভাবগাম্ভীর্য ও আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এরপর ২৫ মার্চ কালরাতের ভয়াবহ ও বিভীষিকা প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে প্রদর্শন করা হয়। সবশেষে প্রদর্শন করা হয় ‘মুজিব: একটি জাতির রূপকার চলচ্চিত্র’।

 

অনুষ্ঠানে অধ্যক্ষ তাঁর বক্তব্যের শুরুতে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যাঁর বলিষ্ঠ ও আপোষহীন নেতৃত্বে আমরা পেয়েছি একটি পতাকা, একটি স্বাধীন ভূখণ্ড ও একটি স্বাধীন সার্বভৌম জাতি। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন - জাতীয় চারনেতা, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সমর্থকসহ সর্বস্তরের জনগণকে। যাঁদের একনিষ্ঠ দেশপ্রেম ও অদম্য সাহসী ভূমিকা আমাদের স্বাধীনতার অর্জনকে ত্বরান্বিত করেছে।

 

দিবসটির তাৎপর্য উল্লেখ করে অধ্যক্ষ বলেন, ২৫ মার্চ ১৯৭১ পাক হানাদার বাহিনীর নির্যাতন চূড়ান্ত ও বর্বর মূর্তি ধারণ করেছিল সেদিন। এর শুরু হয়েছিল ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর থেকে। পাক বাহিনীর প্রথম আক্রমণ ছিল আমাদের মাতৃভাষার উপর। এরপর থেকে পাক হানাদার বাহিনী বাঙালির স্বাধিকারসহ বিভিন্ন ন্যায্য অধিকার হরণ করতে থাকে। ন্যায্য অধিকারের জন্য কথা বললেই চলে আসে নির্যাতনের স্টিম রোলার। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ- অভ্যুত্থানের পথ ধরেই বাংলার পূর্ব আকাশে কালোমেঘের ঘোর অমানিষা নেমে আসে ২৫ মার্চ ১৯৭১ এর কাল দিবস বা গণহত্যা নামক বিষাদময় অধ্যায়ের। এই বিষাদময় অধ্যায় থেকে জাতিকে মুক্ত করতে আবির্ভূত হলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে বাজালেন স্বাধীনতার বাঁশি, শোনালেন বিদ্রোহী বাণী, গাইলেন শেকল ভাঙার গান, 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'। তাঁর এই বিদ্রোহ বাণীতে উজ্জীবিত, উন্মত্ত লাখ জনতার ঢল দেখে পাকহানাদার বাহিনীর ভিত কেঁপে ওঠে। তারা বাঙালিকে নিশ্চিহ্ন করতে ইতিহাসের এক ঘৃণ্য নীল নকশার পরিকল্পনা করে। আর সে কালো অধ্যায়ের আরেক নাম 'অপারেশন সার্চ লাইট' বা ২৫ মার্চের কাল রাতের গণহত্যা।

 

তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, “তোমরা দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার, তোমাদের নক্ষত্র শোভিত জ্ঞানের আলোয় বিকশিত হোক আমাদের প্রিয় স্বদেশ ভূমি। আমরা স্বপ্ন দেখি মুক্তিযুদ্ধ আর মুক্তবুদ্ধির চেতনায় স্বদেশের; স্বাধীনতা রক্ষায় তোমরা প্রগতির প্রহরী হবে কর্মে ও চিন্তায়। তোমাদের সকল কল্যাণময়ী প্রচেষ্টায়, সকল ন্যায়, মহৎ ও উচ্চচিন্তার গভীরে নিহিত থাকবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আমরা স্বপ্ন দেখি একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধাদের অফুরন্ত আত্মত্যাগের বিনিময়ে যে সোনার বাংলা বিনির্মাণ হয়েছে, তোমরা সে সোনার বাংলাকে সামনে দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। সোনার বাংলা বিনির্মাণের লক্ষ্যে আজ আমাদের দরকার জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ মানুষ হওয়া। আমাদের সে জ্ঞান, দক্ষতা উজাড় করে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। মানুষের তরে জীবন বিলিয়ে দিতে হবে। আর এভাবেই আমরা জাতির অমাবস্যাকে পূর্ণিমার আলোয় ভরিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে সক্ষম হবো।

 

প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানের আহবায়ক সহকারী অধ্যাপক স্বপন কুমার বিশ্বাস ও সিনিয়র শিক্ষক জাহাঙ্গীর আলম আমন্ত্রিত অতিথি বীর মুক্তিযোদ্ধাগণকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মান জ্ঞাপন করেন। এরপর অধ্যক্ষ সম্মাননা ক্রেস্ট এবং শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করেন।


দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী অনামিকা দত্ত ও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাকিয়ে কাউসার মাহিয়ানের সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন সহকারী অধ্যাপক স্বপন কুমার বিশ্বাস, সদস্য হিসেবে ছিলেন শিক্ষকবৃন্দ এবং অনুষ্ঠানের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন উপাধ্যক্ষ।

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নাজাত