সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৫ বছর ধরে বেসরকারী একটি কোম্পানির অধীনে নিরাপত্তার দায়িত্বপালন করেছেন সানুর মিয়া। ডিউটিতে থাকাকালীন গত নভেম্বরে মাসের একদিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য তিন মাস ক্যাম্পাসের বাইরে ছিলেন তিনি। সুস্থ হয়ে যখন ফিরে এসে চাকরিতে যোগদান করবেন তখন কর্তৃপক্ষ জানান তার চাকরি নেই। একমাত্র আর্থিক সম্বল চাকরি না থাকাতে পরিবার নিয়ে কষ্টে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে তাকে। তার অভিযোগ, ‘মৌখিক নোটিশে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কোনো বৈধ প্রক্রিয়ায় অবলম্বন করা হয়নি।’
 

সানুর মিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শবর্তী এলাকা টিলারগাঁওয়ের বাসিন্দা। তিনি ২০১৯ সাল থেকে শাবিতে বেসরকারি কোম্পানি যমুনা স্টার সেইভ গার্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের অধীনে চাকরি করছেন। বর্তমানে তিনি সুস্থ আছেন। ডিউটি করতেও সক্ষম বলে তার ভাষ্য।  


 

এ বিষয়ে কোম্পানিটির বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সুপারভাইজার হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, অসুস্থ ব্যাক্তিতে কোম্পানি রাখতে চায়নি। নোটিশ কেনো দেওয়া হয়নি সেটি তিনি জানেনা বলে জানিয়েছেন।

 

সানুর মিয়া বলেন, অসুস্থ হওয়ার পর গত ২ নভেম্বর থেকে ১৭ নভেম্বর হৃদরোগের চিকিৎসার জন্য কোম্পানির সুপারভাইজার থেকে ছুটি নেই। তারা ছুটি মঞ্জুর করেন। কিন্তু চিকিৎসায় থাকাকালীন আমার ১৫ দিন ছুটি পেরিয়ে যায়। এরপর গত ২২ ডিসেম্বর আমি বাইপাস সার্জারি করি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার শাখার কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সাইফ ও কোম্পানির সুপারভাইজার সৈয়দ হাবিবুর রহমানের সঙ্গে সবসময় যোগযোগ রেখেছি। তারা সবসময় আমাকে আশ্বস্থ করেছেন। কিন্তু গত ১৫ দিন আগে কোম্পানির সুপারভাইজারকে কল দিয়ে জানাই, ‘আমি সুস্থ আছি। চাকরিতে যোগদান করব।’ তিনি জানান, ‘আমার চাকরি নেই।’

 

সানুর মিয়া বলেন, চিকিৎসায় অনেক টাকা খরচ করে একেবারে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। আমার পরিবারে ৬ জন মানুষ নিয়ে চলা আমার জন্য কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।’

 

তিনি বলেন, ‘‘ক্যাম্পাসে অনেকদিন যাবৎ আমি নিরাপত্তকর্মী হিসেবে সেবা দিয়ে আসতেছি। অনেকসময় জীবনের ঝুঁকি নিয়েও কাজ করেছি। বর্তমানে পুরোপুরি সুস্থ আছি। দায়িত্ব পালনে সক্ষম।’’

 

এ বিষয়ে বেসরকারি কোম্পানি যমুনা স্টার সেইভ গার্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের শাবি ইউনিটের সুপারভাইজার সৈয়দ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘‘তিনি যে অসুস্থ সেটা কোম্পানিকে জানানো হয়েছে। কোম্পানি বলেছে, হার্টের রোগীকে রাখলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাই হার্টের রোগী রাখা যাবে না। চাকরি নেই সেটা কেউ বলেনি।’’


 
বিনা নোটিশে কেনো চাকরিচ্যুত করা হল জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানি মৌখিক নোটিশেই বলে। অফিসিয়ালি কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি কেন এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কোম্পানির সঙ্গে যোগযোগ করুন।’

 

শাবির সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কোম্পানির অধীনে যেসব নিরাপত্তাকর্মী আছেন তা সম্পূর্ণ কোম্পানির তত্ত্বাবধায়ক দেখভাল করেন। কাউকে নিয়োগ দেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখা সুপারিশ করতে পারে। সানুর দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে কাজ করায় তাকে রাখার জন্য আমরা সুপারিশ করেছি।’

 

এ বিষয়ে জানতে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রেজাকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল দিলেও তার সাড়া পাওয়া যায়নি। 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নোমান