‘‘আমার ছেলে দেখতে ছোট্ট বাচ্চাদের মতো। সে নিজের প্রয়োজন-অপ্রয়োজন কিচ্ছুই বুঝাইয়া কইতে পারেনা। মা হইয়া ঠেকছি, এই বয়সে আইসা আমারই সব কিছু দেখভাল করতে হয়।’’

 


এমনটাই বলছিলেন দেখতে ছোট বাচ্চাদের মতো ২১ বছর বয়সী যুবক আরিফের মা বাবেয়া খাতুন। আরিফ সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের আব্দুল আউয়াল-রাবেয়া খাতুন দম্পতির সন্তান। 

 

সরেজমিনে দেখা যায়, ২১ বছর বয়সী আরিফকে দেখতে ৫-৬ বছরের ছোট শিশুদের মতো। বাড়ির অন্যান্য ছোট শিশুদের সাথেই খেলাধুলা করে দিন কাটে তার। কখনো কখনো ঘরে এক কোনে খাটের ওপর একা একা বসে থাকে আরিফ। কথা বলেনা, হাসেও না। মাঝে-মধ্যে চোখের ইশারায় তার মাকে কি যেন বুঝায়।

 

বিরল রোগে আক্রান্ত আরিফের বিষয়ে জানতে চাইলে তার মা রাবেয়া খাতুন কান্না জড়িত কণ্ঠে জানান, আমার মোট আট সন্তানের মধ্যে আরিফ সপ্তম। ৮ বছর আগে আরিফের বাবা মারা গেছে। বর্তমানে আমার বড় সন্তানদের সংসারে তাকে নিয়ে বসবাস করছি। বাড়ির জায়গাটুকু ছাড়া আমাদের আর কোনো সম্পদ নেই। আমার অন্যান্য সন্তনেরা হাওরে মাছ ধরে ও দিনমজুরি কাজ করে সংসার চালায়। আমার আরিফের জিহ্বাটা ভারী থাকায় সব কথা স্পষ্ট করে কইতে পারেনা।

 

‘আমার ছেলেটা হাসতেও পারেনা। বাড়ির অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে খেলতে গেলেও অনেক সময় বাচ্চারা খেলতে চায়না। সে অন্যান্য বাচ্চাদের মতো দৌড়-ঝাঁপও করতে পারেনা। তার মান-অভিমান জানানোর মতোও ভাষা নেই। চোখের ইশারায় সব কিছু বুঝে নিতে হয়। তাকে গোসল করানো, খাওয়া দাওয়া করানো সব কিছু আমাকেই করতে হয়।’

 

রাবেয়া খাতুন আরও জানান, আরিফ জন্মের সময় স্বাভাবিক ভাবেই জন্মগ্রহণ করে। ৪-৫ বছর বয়স পর্যন্ত সে অন্যান্য শিশুদের মতোই বেড়ে ওঠে। আরিফের বয়স যখন ৫ বছর তখন একদিন সে ভাতের সাথে চুলকানির ঔষধ মিশেয়ে খেয়ে ফেলে। এরপর তার পেট অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যায়। পরে গ্রাম্য ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হলেও সে আর শারিরীকভাবে বড় হয়নি। তাকে কয়েকবার ডাক্তারের নিকট নিয়ে গেলেও অর্থভাবে তার উন্নত চিকিৎসা করানো সম্ভব হয়নি।  

 

আরিফের বাড়ির প্রতিবেশী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুল খালেক বলেন, জন্মের সময় আরিফকে স্বাভাবিক শিশুর মতোই মনে হয়েছিল। কিন্তু তাঁর বয়স যখন ৫-৬ বছর তখন থেকেই সে আর শারীরিকভাবে বিকশিত হয়নি। এই বয়সেও তাঁকে দেখতে শিশুর মতো। অর্থের অভাবে পরিবারের লোকজন তাঁর চিকিৎসা করাতে পারছে না।

 

উপজেলার বংশীকুন্ডা দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাসেল আহমদ বলেন, শারিরীক প্রতিবন্ধী আরিফ সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছি। সে সমাজসেবা কর্তৃক সামাজিক বেষ্টনীয় আওতায় ভাতা প্রাপ্ত। তার উন্নত চিকিৎসার ব্যপারে আমাদের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা হবে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নোমান