সারা দেশে তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি পড়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঘরবাড়ি ও বোরো ধানের। হাওরে থাকা পাকা ধানের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। ঝড়ে ভেঙে পড়েছে কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালা।

 


মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিকাল ৫টার দিকে নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শিলাবৃষ্টি হয়। এর আগে রবিবার বিকালে ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়।


কৃষিবিভাগের তথ্যমতে, ২২০ হেক্টর ফসলি জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। তবে রবিবারের মতো মঙ্গলবারও শিলাবৃষ্টি হওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে বলে শঙ্কা কৃষকদের।


জানা গেছে, গত রবিবার বিকেল ৪টার দিকে নবীগঞ্জ উপজেলায় কালবৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টি হয়। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ উপজেলার মানুষ। উপজেলার পৌর এলাকাসহ করগাঁও, গজনাইপুর, দেবপাড়া ও পানিউমদা ইউনিয়নের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক গ্রামের ওপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। এ সময় প্রায় ২০ মিনিটের মতো শিলাবৃষ্টি হয়। শিলাবৃষ্টিতে অনেকের ঘরের টিন ছিদ্র হয়ে যায়। ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অর্ধশিতাধিক গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক কাঁচা ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বোরো ফসলের। শিলাবৃষ্টির আঘাতে ঝড়ে পড়েছে জমির পাকা ধান। একইভাবে মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে ঝড়ের সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়। এতে ধানের আরও ক্ষতি হবে বলে শঙ্কা কৃষকদের।


বনগাঁও গ্রামের কৃষক আহাদ মিয়া বলেন, প্রতিবছর ধান পেয়েছি ৬০-৭০ মণ। এবার ফসল ভালো হয়েছিল, আশা করেছিলাম ফলন ভালো পাবো, কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
 

কায়স্থগ্রামের কৃষক আব্দুল মন্নান বলেন, দুই দিনের শিলাবৃষ্টিতে আমার ধান ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার অর্ধেক ধানও পাবো না।


গজনাইপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের জয়নাল মিয়া বলেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হঠাৎ শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। আমার ঘরের অধিকাংশ টিন ছিদ্র হয়ে ঘরের ভেতরেও শিলা পড়ে। আমার আশপাশের ৩০-৪০টি বাড়িঘর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 
 

নবীগঞ্জ শহরের পৌর এলাকার ছালামতপুর গ্রামের আব্দুল লতিফ বলেন, শিলাবৃষ্টি হওয়ায় আমার ঘরের টিনে বড় বড় ছিদ্র হয়ে ঘরে এখন পানি পড়ে। এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো।
 

দেবপাড়া ইউনিয়নের উত্তর দেবপাড়া গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান বলেন, আমার পাকাধান, ভেবেছিলাম ২-১ দিনের ভেতরে ফসল ঘরে ওঠাবো। কিন্তু শিলা বৃষ্টিতে ৬৫-৭০ ভাগ ধান ঝরে পড়েছে।
 

নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শেখ ফজলুল হক মণি বলেন, হাওরাঞ্চলে ৯০ ভাগ ধান কর্তন করা হয়েছে। তবে যারা একটু দেরিতে ধান রোপণ করেছিলেন তাদের শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে। আমরা বিভিন্নভাবে জেনেছি, ২২০ হেক্টর জমির ধান ঝরে পড়েছে। আমাদের যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছিল সেটা পূরণ হবে না।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নোমান