সিলেটের বিশ্বনাথে গত ২৮ এপ্রিল বিকেল তিনটার দিকে পৌর শহরের নতুন বাজার এলাকায় একই সময়ে প্রায় একশ গজের মধ্যে ‘পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের পক্ষে ও নারী কাউন্সিলর রাসনা বেগমের পক্ষে’ অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভা শুরুর পূর্বে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের নেতৃত্বে নারী কাউন্সিলর রাসনা বেগম পক্ষে পৌর আওয়ামী লীগের ডাকা প্রতিবাদ সভায় হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের অভিযোগে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২ মে) রাতে পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য রফিক মিয়া ওরফে রফিক হাসান বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলা নং ৩ (তাং ২.০৫.২৪ইং)।


বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানকে প্রধান অভিযুক্ত করে দায়ের করার মামলায় পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ফজর আলী, ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুহিবুর রহমান বাচ্চু, ৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর বারাম উদ্দিন, পৌরসভার পরিচ্ছন্ন কর্মী ও উদ্যোগক্তা সুরমান আলী সুমন, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি রফিক আলী, বিশ্বনাথ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বার আব্দুস শহিদ, শ্রমিক নেতা ময়না মিয়া, পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের গাড়ির ড্রাইভার হেলাল মিয়া’সহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় আরোও ৪০/৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত রাখা হয়েছে।

এরপূর্বে ‘মারধর, শ্লীলতাহানী ও মেয়রের নির্দেশে গাড়ি দিয়ে প্রাণে হত্যা’র চেষ্টার অভিযোগে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান’কে প্রধান অভিযুক্ত করে ২৪ এপ্রিল থানায় মামলা দায়ের করেন পৌরসভার ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর রাসনা বেগম। মামলা নং ৫ (তাং ২৪.০৪.২৪ইং)।

পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য রফিক মিয়া ওরফে রফিক হাসানের দায়ের করা মামলার অন্যান্য অভিযুক্তরা হলেন- রাজনগর গ্রামের আলী হোসেন ইংরেজ, উত্তর দৌলতপুর গ্রামের কুতুব উদ্দিন, আনরপুর গ্রামের বাবুল মিয়া, রামকৃষ্ণপুর গ্রামের আনোয়ার আলী, দক্ষিণ মিরেরচর গ্রামের মিতাব আলী, ছত্তিশ নোয়াগাঁও গ্রামের আব্দুল তাহিদ, মৌলভীরগাঁও গ্রামের সাব্বির, জাহিদুল হক, মোল্লারগাঁও গ্রামের সিতাব আলী, সেনারগাঁও গ্রামের ময়না মিয়া, চরচন্ডি গ্রামের মতছির আলী, জানাইয়া গ্রামের দিলীপ কুমার দেব, সমুজ আলী, মখলিছ আলী, ইলামেরগাঁও গ্রামের রশিদ আলী, পাঠানচক গ্রামের আলা উদ্দিন, দশপাইকা গ্রামের আব্দুস শহীদ, শাহজিরগাঁও গ্রামের আশিক আলী, ফয়ছল মিয়া, দশপাইকা গ্রামের দুদু মিয়া।
মামলার এজাহার বাদী উল্লেখ করেছেন, বিশ্বনাথ পৌরসভার ৭ জন কাউন্সিলর সম্প্রতি পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে গত ১৬ এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব বরাবরে দাখিল করেন। এই আক্রুশে মেয়র মুহিবুর রহমান গত ২৩ এপ্রিল পৌরসভার ২নং সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাসনা বেগমকে ‘মারধর, শ্লীলতাহানী ও গাড়ি চাপা দিয়ে হত্যা’র চেষ্টা করেন। ওই রাতেই পৌর শহরে মেয়র মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে ঝাড়– মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২৪ এপ্রিল ‘মারধর, শ্লীলতাহানী ও মেয়রের নির্দেশে গাড়ি দিয়ে প্রাণে হত্যা’র চেষ্টার অভিযোগে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান’কে প্রধান অভিযুক্ত করে থানায় মামলা (নং ৫, তাং ২৪.০৪.২৪ইং) দায়ের করেন নারী কাউন্সিলর রাসনা বেগম। রাসনাকে হত্যার পরিকল্পনাকারি পৌর মেয়র মুহিবকে রাসনার মামলায় গ্রেপ্তার, মেয়র পদ থেকে অপসারন’সহ কঠোর শাস্তির দাবিতে ২৮এপ্রিল বিকেলে পৌর আওয়ামী লীগের ব্যানারে পৌর কাউন্সিলরবৃন্দ ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ সভা আহবান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানে নেতৃত্বে মামলার অভিযুক্তরা ‘ডেগার, কিরিছ, রামদা, লোহার পাইপ, শাবল’সহ নানান ধরনের অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সভায় হামলা, ভাংচুর, দোকান লুটপাট করাসহ নানান অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয় বাদীর অভিযোগপত্রে।

এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত ১ মে পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের গাড়ির ড্রাইভার হেলাল মিয়া বাদী হয়ে পৌর সভার ৩ কাউন্সিলর’সহ উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের ৩০ নেতাকর্মীকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ১ (তাং ১.০৫.২৪ইং)।

উল্লেখ্য, গত ২৮ এপ্রিল বিকেল ৩টার দিকে পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমানের উপর ‘মারধর, শ্লীলতাহানী ও মেয়রের নির্দেশে গাড়ি দিয়ে প্রাণে হত্যা’র চেষ্টার অভিযোগ এনে নারী কাউন্সিলর রাসনা বেগমের মামলা দায়েরের প্রতিবাদে (মামলা নং ৫, তাং ২৪.০৪.২৪ইং) পৌর শহরের নতুন বাজার এলাকাস্থ মেয়রের বাসার সামনে প্রতিবাদ সভা আহবান করেন মেয়র পক্ষের লোকজন। অন্যদিকে একই সময়ে প্রায় একশ গজের মধ্যে নারী কাউন্সিলর ও উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রাসনা বেগমের উপর ‘হামলার প্রতিবাদে এবং পৌর মেয়র মুহিবুর রহমানের গ্রেপ্তার ও অপসারণের’ দাবীতে প্রতিবাদ সভা আহবান করে পৌর আওয়ামী লীগ। কিন্তু সভাগুলো শুরুর পূর্বেই উভয় পক্ষের পক্ষে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এসময় মেয়রের বাসা লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করেন পৌর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। ইট-পাটকেল নিক্ষেপের সময় কয়েকটি সিএনজি চালিত অটোরিক্সা ও দোকানপাঠ ভাংচুরের ঘটনা সংগঠিত হয় এবং প্রায় আধা ঘন্টা বিশ্বনাথ-রামপাশা-লামাকাজী সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল। এতে পথচারী নারী ও শিশু’সহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রনঞ্জয়/এসডি-১৯৫৭