সাফের গেল আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ছবি: সংগৃহিত।
দুই বছর আগে নেপালে বাংলাদেশের পতাকা পত পত করে উড়িয়েছিলেন নারী ফুটবলাররা। ২০২২ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই নেপালেই বছর দুই পরে এবার নতুন লড়াইয়ে নামতে হচ্ছে সাবিনাদের। এবারের লড়াই শিরোপা ধরে রাখার। নারী সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের সপ্তম আসর শুরু হচ্ছে আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে।
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ নেপালে
কানাঘুষা ছিল নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের এবারের আসর বসবে ঢাকায়। তবে সেটা আর হচ্ছে না। সাফের সর্বশেষ সভায় টুর্নামেন্টটি নেপালের কাঠমান্ডুতে আয়োজনে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী ১৭ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে টুর্নামেন্ট। ৩০ অক্টোবর ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামবে আসরের। সাফের গত আসরও হয়েছিল নেপালে।
সাফের আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ মূলত পিছিয়ে পড়েছে স্টেডিয়ামের জন্য। সাফ চেয়েছিল যদি বাংলাদেশে টুর্নামেন্ট হয়, তবে সেটি হবে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। কিন্তু এ স্টেডিয়ামে সংস্কার কাজ চলমান থাকায় আসরের আয়োজন সম্ভব নয়। বিকল্প স্টেডিয়ামে আয়োজন করতে চেয়েছিল বাফুফে, তবে সায় মেলেনি সাফের।
সাফের সূচি
সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপিং হয়েছিল গেল জুনে। দুট গ্রুপে লড়বে সাতটি দল। ‘এ’ গ্রুপে পড়েছে বাংলাদেশ, প্রতিপক্ষ ভারত ও পাকিস্তান। ‘বি’ গ্রুপে স্বাগতিক নেপাল ছাড়াও আছে শ্রীলঙ্কা, ভুটান ও মালদ্বীপ। চলতি মাসের শুরুর দিকে চ্যাম্পিয়নশিপের সূচিও প্রকাশ করা হয়েছে। টুর্নামেন্ট শুরুর দিন, ১৭ অক্টোবরই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। দশরথ স্টেডিয়ামে সেদিন বিকাল সাড়ে পাঁচটায় সাবিনাদের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। এরপর ২৩ অক্টোবর একই সময়ে গ্রুপপর্বে বাংলাদেশের শেষ প্রতিপক্ষ ভারত।
টুর্নামেন্টে ১৮ অক্টোবর লড়বে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ এবং নেপাল ও ভুটান। ২০ অক্টোবর প্রতিপক্ষ ভারত-পাকিস্তান। ভুটান ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচ ২১ অক্টোবর। একইদিন আছে মালদ্বীপ ও নেপালের ম্যাচও। গ্রুপপর্বে শেষদিন, ২৪ অক্টোবর দুটি ম্যাচ আছে। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার প্রতিপক্ষ নেপাল, অপরটিতে মালদ্বীপ লড়বে ভুটানের বিপক্ষে। সেমিফাইনাল দুটি হবে ২৭ অক্টোবর। ফাইনাল ৩০ অক্টোবর।
গত আসরে বাংলাদেশ
নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২-এ বাংলাদেশ ছিল গ্রুপ ‘এ’তে। প্রতিপক্ষ ছিল মালদ্বীপ, পাকিস্তান ও ভারত। গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মালদ্বীপকে ০-৩ গোলে হারায় বাংলার বাঘিনীরা। এরপর পাকিস্তানকে নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলায় মাতেন মারিয়া মান্দারা, উড়িয়ে দেন ৬-০ গোলে। পরে পাত্তা পায়নি ভারতও। তাদেরকে ৩-০ গোলে হারায় বাংলাদেশ। গ্রুপসেরা হয়ে সেমিফাইনালে যান সানজিদা আক্তাররা। গ্রুপ ‘বি’ থেকে রানারআপ হয়ে আসা ভুটনাকে সেমির প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় বাংলাদেশ। অপ্রতিরোধ্য ফুটবলে ৮-০ গোলে উড়ে যায় ভুটান! অপর সেমিতে নেপালকে একমাত্র গোলে হারিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে ভারত। ওই বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর হওয়া ফাইনালেও জয়যাত্রা অব্যাহত থাকে আঁখি খাতুনদের। ভারতকে ১-৩ গোলে হারিয়ে হিমালয়ের দেশে উড়ে লাল-সবুজের পতাকা।
সাফে ‘সফল’ বাংলাদেশ
সাফ নারী ফুটবল মানেই যেন বাংলাদেশ নারী দলের সাফল্যের গল্প। অতিরঞ্জিত কিছু নয় আসলে। সাফের মূল টুর্নামেন্ট এবং অন্য যেসব বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট হয়, সেগুলোর মধ্যে কেবলমাত্র অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপ ছাড়া বাকি সবক’টিই জিতেছে বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে শিরোপার সংখ্যা ৭টি। ২০১৭ সালে ঢাকায় বাংলাদেশ ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে। ভুটানের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে বাংলাদেশ ২০১৮ সালে। ভারতকে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২২ সালে জিতে নেয় বাংলাদেশ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হওয়া এই একই আসরের ভারতের সঙ্গে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এ ছাড়া ২০২৩ সালে অনূর্ধ্ব-২০ শিরোপা জিতে নেয় বাংলাদেশ। আর চলতি বছর অনূধ্ব-১৬ শিরোপাও নিজেদের করে নেয় বাঘিনীরা। ২০২২ সালে বাংলাদেশ সাফের মূল টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতে নেয়। সেবার তাদের সাফল্যে আনন্দে ভাসে গোটা দেশ। সাবিনারা যখন নেপাল থেকে ঢাকায় ফিরেন, বিমানবন্দর থেকে ছাদখোলা বাসে করে তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় বাফুফে ভবনে, দেওয়া হয় সংবর্ধনা।
এবার প্রস্তুতিতে ধাক্কা
গেল আসরের মতো এবারও কী দুরন্ত ফুটবল উপহার দেবে বাংলাদেশ নারী দল? এর উত্তর আপাতত সময়ের হাতে। কিন্তু চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য নিজেদের প্রস্তুতিতে খানিকটা হলেও ধাক্কা খেয়েছেন শামসুন্নাহাররা। সাফকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ৬টি প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজনের কথা আগে বলেছিল। কিন্তু এখন ফেডারেশন বলছে, অর্থের সংকটে এসব ম্যাচ আয়োজন করা সম্ভব নয়। গত ৩ সেপ্টেম্বর বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের সাথে সাক্ষাৎকালে সাবিনা খাতুনরা প্রস্তুতি ম্যাচের দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সে দাবিও হালে পানি পায়নি বলেই জানা গেছে। গত বছরও নারী দলের মিয়ানমার সফর বাতিল করা হয় অর্থের অভাব দেখিয়ে। বাফুফের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার বলছেন, ‘ফেডারেশনের আর্থিক সংকট থাকায় প্রস্তুতি ম্যাচ আয়োজন করা কঠিন। ফিফা উইন্ডোর বাইরে ম্যাচ আয়োজনের চেষ্টা করছি। তবে অর্থ সংকটের কারণে তা নিশ্চিত নয়। স্পন্সরদের সহায়তা না পেলে এটাও সম্ভব নয়।’
প্রস্তুতির এই ধাক্কা বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেয় কিনা, সেটা বড় এক প্রশ্ন। তবে মনোবল হারাতে চায় না দল। সাবিনা খাতুন বলছিলেন, ‘প্রস্তুতি ম্যাচ হলে ভালো হয়, নিজেদের ঘাটতি, দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া, সে অনুসারে কাজ করা যায়। তবে যা-ই হোক, আমরা শিরোপার লক্ষ্য নিয়েই যাব।’
সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে