সিলেটে কুরবানির পশুর হাটগুলোতে বিক্রি জমে উঠেছে। ক্রেতা ও বিক্রেতায় মুখরিত সব হাট। তবে মঙ্গলবার (২০ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত পশুর দাম চড়া বলে জানা গেছে।

ঈদের দিন (বুধবার) সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন হাটে পশু বিক্রি হবে এবং রাত যত বাড়বে দামও তত কমতে পারে বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।


নগরীসহ সিলেটের গ্রামগঞ্জেও পশুর হাট জমে উঠেছে। তবে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে ব্যাপক উদাসীনতা দেখা গেছে। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলারও বালাই নেই। হাটে হাত ধোয়ার কোনো ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায়নি। স্যানিটাইজার ব্যবহার করতেও দেখা যায়নি কাউকে।

মঙ্গলবার (২০ জুলাই) নগরীর স্থায়ী ১টি ও অনুমোদিত অস্থায়ী তিনটি পশুর হাট ঘুরে দেখা গেছে- ঈদের একদিন বাকি থাকায় হাটে প্রচুর ক্রেতা সমাগম। সকাল থেকেই পড়েছে গরু-ছাগল বিক্রির ধুম। তবে দাম কিছুটা চড়া বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। 

জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ থেকে কাজিরবাজার হাটে আসা এক বিক্রেতা বলেন, তিনি ২০টি গরু এনেছেন। আরও কিছু গরু প্রস্তুত রয়েছে। বাজার ভালো থাকলে রাতে সেগুলোও হাটে তুলবেন। তিনি বলেন, গত দুদিন একদমই বিক্রি ছিল না। শেষ মুহূর্ত হওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকে বিক্রি বেড়েছে। রাতে বিক্রির আরও ধুম পড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গরুর দাম একটু বেশি স্বীকার করে তিনি বলেন, এসব গরু দেশি এবং দীর্ঘদিনের গৃহপালিত। যে কারণে এসব গরুর পেছনে ব্যয়ও বেশি। তাই কমদামে গরু বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।

শামীম মিয়া নামের এক খামারি জানান, তিনি বেশ কয়েকটি ছোট ও মধ্যম সাইজের গরু নিয়ে কাজিরবাজার হাটে এসেছেন। তার প্রতিটি ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করবেন।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি জানান, এখন পর্যন্ত গরুর দাম চড়া। রাতে যদি বিদেশি গরু নামে তবে দাম কমতে পারে। হাটে এই মুহুর্তে গরু কম এবং ছোট ও মধ্যম সাইজের ক্রেতার সমামগ বেশি।

ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছ, গরুর দাম অন্যান্যবারের তুলনায় ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা বেশি বলে মনে করছেন তারা। দক্ষিণ সুরমা থেকে কাজিরবাজার হাটে আসা হারুন মিয়া নামের এক ক্রেতা বলেন, আমার বাজেট ৪০ হাজার টাকা। কিন্তু ৪০ হাজার টাকার গরুগুলো ছাগলের মতো। ভালো গরু কিনতে গেলে কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকা লাগবে।
মনমতো গরু না হলে কুরবানিতে মন ভরবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আরও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে যদি ৪০-৪৫ হাজার টাকায় গরু না মিলে তবে বিকাশে আরও টাকা আনিয়ে ৬০-৬৫ হাজার টাকায় গরু কিনে বাড়িতে নিয়ে যাবো।

সিলেট শহরতলির তেমুখি পশুর হাটের ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তুলনামূলক দামের চেয়ে অনেক বেশি হাঁকা হচ্ছে গরু-ছাগলের দাম। লামাকাজি থেকে আসা আলম মিয়া নামের এক ক্রেতা বলেন, কয়েক ঘণ্টা ধরে হাটে ঘুরছি। প্রতিটি গরুর দাম অস্বাভাবিক বাড়তি চাওয়া হচ্ছে। একটি গরু ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বললাম, কিন্তু বিক্রেতা এক দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জানিয়ে দিয়েছেন।

গরুর পাশাপাশি মঙ্গলবার ছাগলের দামও চড়া বলে জানা গেছে। শাহপরাণ এলাকা থেকে আসা এক ক্রেতা জানান- গতকাল (সোমবার) এক আত্মীয়ের জন্য একটি ছাগল কিনে দিয়েছিলাম ১৩ হাজার টাকায়। আজ (মঙ্গলবার) আমি নিজের জন্য ছাগল কিনবো। কিন্তু আজ এ সাইজের ছাগলের দাম চাওয়া হচ্ছে ১৮-২০ হাজার টাকা!

এদিকে, ঈদের সময় ঘনিয়ে আসায় হাটের পাশাপাশি সিলেটের অনেক স্থানে রাস্তার পাশেও অনেকে বসিয়ে দিয়েছেন পশুর হাট। এসব পশু কিনতে ক্রেতারাও ভিড় করছেন। এতে সিলেটের বিভিন্ন রাস্তায় তৈরি হচ্ছে যানজট।

মঙ্গলবার বিকেলে সিলেট ঘুরে দেখা যায়, নগরীর মারকাজ পয়েন্ট, খোজারখলা, চন্ডিপুল, রিকাবীবাজার, শেখঘাট, তেমুখি পয়েন্ট, সুবিদবাজার মদিনা মার্কেট, টিলাগড়, মেজরটিলা ও শাহপরাণসহ বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার অবৈধ পশুর হাট গড়ে তোলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, সিলেটের কাজিরবাজারস্থ স্থায়ী হাট ছাড়া এবার নগরীতে ৩টি অস্থায়ী পশুা হাটের অনুমোদন দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেগুলো হচ্ছে- শাহী ঈদগাহ এলাকার কালাপাথর মাঠ, উপশহর এলাকার কয়েদির মাঠ ও দক্ষিণ সুরমার পারাইরচকস্থ ট্রাক টার্মিনাল।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম