পাথারিয়া-ভাটিপাড়া-বাংলাবাজার রাস্তাটি যেন এক মৃত্যুকুপ। সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া বাজার থেকে দিরাই উপজেলার বাংলাবাজার পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার রাস্তাটি বিগত প্রায় ৭ থেকে ৮ বছর যাবত কোন সংস্কার তো নেই তার উপর বর্ষার পানিতে ‍ডুবে থাকায় রাস্তায় বিশাল বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

সরেজমিন দেখা যায়, পাথারিয়া বাজার থেকে বাংলাবাজার সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না থাকায় ১১ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, অসংখ্য জায়গা ভেঙে পড়াসহ লোহার রড বের হয়ে রয়েছে যার জন্য ঘটছে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা। ছোট-বড় যানবাহন প্রতিদিন গর্তের মধ্যে আটকা পড়ছে। কখনো যাত্রীবাহী গাড়ি উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে।যাত্রীরা ভয়ে গাড়ী থেকে নেমে হেটে যাচ্ছে।


স্থানীয়রা জানান, দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া, রফিনগর ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের প্রায় হাজার হাজার লোকজন প্রতিনিয়ত এ সড়ক দিয়ে চলাচল করেন। সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে স্থানে স্থানে ভেঙে গিয়ে এতবেশি পরিমাণ গর্ত সৃষ্টি হয়েছে যে, গাড়ি চলাচল করতে গিয়ে আটকা পরে যায়। ভাটি অঞ্চলের সাথে যোগাযোগের একমাত্র এ সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে মিনিট্রাক, পিকআপ, সিএনজি, আটোরিক্সা, মোটারসাইকেলসহ বিভিন্ন ধরনের শতাধিক যানবাহন। ‍এছাড়া বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীসহ হাজার হাজার মানুষকে উপজেলা ও জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

তারা আরো জানান, এ রাস্তা দিয়ে গর্ভবতী নারী, অসুস্থ ও বয়স্ক লোকজনের যাতায়াত অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ভাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আবু হানিফ চৌধুরী বলেন, সরকার হাজার হাজার কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন করছে অথচ পাথারিয়া-বাংলাবাজার সড়কটির দৈর্ঘ্য মাত্র সাড়ে ১১ কিলোমিটার। এই রাস্তা দিয়ে জেলার ৩টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, ভাঙ্গাচোরা রাস্তা দিয়ে চলাচলরত মানুষ প্রতিনিয়িত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। অবিলম্বে পাথারিয়া-বাংলাবাজার অনিমজ্জিত রাস্তা করে দিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।

মোটারসাইকেল চালক সহিবুর রহমান বলেন, স্থানে স্থানে ভেঙে ও পাকা উঠে বড় বড় গর্তে কাদা সৃষ্টি হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হচ্ছে। রাস্তাটি মেরামত করতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই ও শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাঁক, ভাটিপাড়া, রফিনগর ইউনিয়নবাসী তাদের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির পুননির্মাণের দাবি নিয়ে মিছিল, সমাবেশ ও মানববন্ধন করতে করতে এখন হতাশ হয়ে পরেছে। অনেকেই মনে করেন মানববন্ধন, মিছিল-মিটিং করে কোন লাভ নেই। বেহাল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এখন তাদের ‘নিয়তি’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া এই দাবিতে দুটি উপজেলাবাসী মানববন্ধন করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন। পাশাপাশি এই দাবীটি তারা বিভিন্ন সময় জনপ্রতিনিধিদের কাছেও তুলে ধরেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তবে সম্প্রতি পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি দক্ষিণ সুনামগঞ্জ ও দিরাই ভাটিপাড়া বাংলাবাজার রাস্তাটিতে বারো মাস চলাচল উপযোগী করার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার প্রদান করেছেন।

রফিনগর ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র কুমার তালুকদার বলেন, এই রাস্তা দিয়ে তিন উপজেলার শতশত মানুষ চলাচল করে। বিশেষ করে অসুস্থ, গর্ভবতী মহিলারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে। প্রাণের এই রাস্তাটি নির্মাণের দাবী আমাদের বহুদিন ধরে। আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত চেয়ে ছিলেন রাস্তাটি যেন নির্মাণ কাজ শুরু হয়, কিন্তু হচ্ছে হচ্ছে বলে এখন তা শুরু হয়নি। আমরা আশা রাখব মুজিববর্ষের ব্যাপক উন্নয়ের একটি অংশ হিসেবে যেন এই রাস্তাটিও হয়ে যায়।

শিমুলবাঁক ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও মুরাদপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান জিতু বলেন, পাথারিয়া-বাংলাবাজার সড়ক এখন মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে। ভাঙা রাস্তার ফলে এলাবাবাসী চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। আমরা এলাকাবাসীর ব্যানারে অনেকবার সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি কিন্তু এত আশ্বাসের পরও আমাদের এই অনিমজ্জিত সড়কের দাবিটি অধরাই রয়ে গেছে। যদি রাস্তাটি সংস্কার এবং অনিমজ্জিত করা হয় তবে এই এলাকার মানুষের জীবনের ব্যাপক উন্নতি হবে।

এ বিষয়ে দিরাই উপজেলা প্রকৌশলী ইফতেখার হোসেনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি রাস্তাটি মেরামত করা হবে বলে জানান।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/এইচপি/এসডি-০৩