ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের ৬৫টি বড় আকারের রহস্যময় পাত্রের সন্ধান পেয়েছেন ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার প্রত্নতত্ত্ববিদরা। অন্তত আড়াই হাজার বছর আগে এসব পাত্র তৈরি করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেলে পাথরে তৈরি এইসব মাটির পাত্রগুলোর আকার বিভিন্ন। কোনো পাত্র দেখতে লম্বাটে ও সিলিন্ডার আকারের, আবার কোনোটি গোলাকার। সবগুলো পাত্রই আংশিক বা সম্পূর্ণ পোঁতা অবস্থায় পাওয়া গেছে।


ভারতের নর্থ-ইস্টার্ন হিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ ড. তিলক ঠাকুরিয়া, গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ববিদ উত্তম বাথারি এবং অস্ট্রেলিয়ার অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নিকোলাস স্কোপালের নেতৃত্বাধীন একটি গবেষক দল সম্প্রতি আসামের চার এলাকায় এসব পাত্রের সন্ধান পান।

বিবিসিকে ড. ঠাকুরিয়া জানান, পাত্রগুলো তৈরি করা হয়েছিল খ্রিস্টের জন্মের অন্তত ৪০০ বছর আগে। সেই হিসেবে প্রতিটি পাত্রের বয়স কমপক্ষে ২ হাজার ৪০০ বা তারও কিছু বেশি। তিনি আরও জানান, মৃতদেহের সৎকারের কাজে ব্যবহার করা হতো এসব পাত্র। অর্থাৎ কেউ মারা গেলে তার দেহাবশেষ পাত্রে রেখে তা ঢাকনাবন্দি করে মাটিচাপা দেওয়া হতো। প্রতিটি পাত্রের গঠন দেখে বোঝা যায়, একসময় এগুলো ঢাকনাবন্দি ছিল।

তবে আসামের যে চার এলাকায় এসব পাত্র পাওয়া গেছে, সেখানে পাত্রের সঙ্গে কোনো ঢাকনা পাওয়া যায়নি। পাত্রের ভেতরে কোনো বস্তুও দেখা যায়নি।পাশপাশি, কারা এগুলো তৈরি করেছিল, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি এখনও।

অস্ট্রেলিয়ার গবেষক নিকোলাস স্কোপাল বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা এখনও জানি না যে, কোন জাতির লোকজন এসব পাত্র তৈরি করেছিল এবং তারা কোথায় থাকত। এটা এখনও আমাদের কাছে রহস্য।’

‘অবশ্য আমরা শুনেছি নাগা উপজাতির লোকজন আসামের সবচেয়ে পুরনো নৃগোষ্ঠী। তাদের সংস্কৃতিতে মৃতদের দাহ করার পর সেই দেহভস্ম মাটিচাপা দেওয়ার প্রথা আছে। হয়তো তাদেরই কোনো পূর্বপুরুষদের মধ্যে এমন প্রথা প্রচলিত ছিল যে, মৃতদেহ সৎকারের পর দেহভস্ম এরকম পাথরের পাত্রে রেখে মাটিচাপা দেওয়ার; এমনটা হতেই পারে।’

ড. ঠাকুরিয়া অবশ্য জানিয়েছেন, কোনো পাত্রের ভেতরে ছাই বা কোনো ধরনের বস্তু পাওয়া যায়নি। সবগুলো পাত্রই ছিল খালি। তবে তিনিও মনে করেন, মৃতদেহ সৎকারের কাজেই ব্যবহার করা হতো এসব পাত্র।

২০১৬ সালে লাউসের জিয়েং খোয়াং প্রদেশে বেশ কিছু বেলে পাথরের পাত্রের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল এবং সেগুলো ছিল ২০০০ বছরের পুরনো। লাউসের সেই পাত্রগুলোর সঙ্গে আসামের পাত্রগুলোর গঠনগত বেশ সাদৃশ্য রয়েছে বলে জানিয়েছেন ড. ঠাকুরিয়া। লাওসের কয়েকটি পাত্রে দেহাবশেষের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

‘আসাম ও মেঘালয়ে আরও ১০টি স্থানে আমরা অনুসন্ধান চালাব; আমাদের ধারণা, (এসব স্থানে) অনুসন্ধান করলে আরও পাত্র পাওয়া যাবে,’— বিবিসিকে বলেন ড. ঠাকুরিয়া।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/জিএসি-২২


সূত্র : ঢাকা পোস্ট