ভোগান্তির আরেক নাম যেন পাসপোর্ট অফিস। জনবল সংকট, দালালদের দৌরাত্ম, কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা আর রোহিঙ্গা সনাক্তের নামে ফিঙ্গার প্রিন্ট- সবমিলিয়ে নতুন পাসপোর্ট তৈরি বা নবায়ন এখন মহাঝামেলার কাজ। 


আবেদন জমা বা ফিঙ্গার প্রিন্ট দেয়ার জন্য সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে লোকজনকে। অনেকে মাসের পর মাস ঘুরেও পাচ্ছেন না নতুন বা নবায়নকৃত পাসপোর্ট। 



সিলেট বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস ঘুরে দেখা যায়, কারো হাতে পাসপোর্টের আবেদন, আবার কেউ এসেছেন ফিঙ্গার প্রিন্ট দিতে। সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তারা। শুরুতেই তাদেরকে যে বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সেটা হচ্ছে রোহিঙ্গা সনাক্তকরণ ফিঙ্গার প্রিন্ট। নতুন হোক বা নবায়ন হোক- আবেদনকারী রোহিঙ্গা শরণার্থী কি-না সেটা প্রমাণে দিতে হচ্ছে ফিঙ্গার প্রিন্ট। এই ফিঙ্গার প্রিন্টের জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে আবেদনকারীদের। অথচ অনেকের কাছেই রয়েছে এদেশের নাগরিকত্বের অকাট্য প্রমাণ। 


কেউ ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে ব্যবহার করে আসছে বাংলাদেশি পাসপোর্ট কিন্তু নবায়নে এসে তাকে আবারও প্রমাণ করতে হচ্ছে তিনি রোহিঙ্গা নন। সরকারি চাকুরিজীবী, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা কারোই রেহাই মিলছে না এই বিড়ম্বনা থেকে। অথচ পাসপোর্ট নবায়নের আবেদনকারী ও স্মার্টকার্ডধারীদের এই প্রক্রিয়া থেকে বাদ দিলে ভোগান্তি অনেক কমতো বলে মনে করছেন ভূক্তভোগীরা।


আবেদনপত্রে ছোটখাটো ভুলের জন্য কর্মকর্তারা ফিরিয়ে দেন নতুন পাসপোর্টের আবেদনকারীদের। এছাড়া পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করতে গিয়েও মহাবিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে অনেককে। মাসের পর মাস পাসপোর্ট অফিসে ধর্ণা দিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। টেবিলে টেবিলে ঘুরতে হচ্ছে তাদেরকে। নানা ছুঁতোয় তাদেরকে ঘুরাচ্ছেন কর্মকর্তারা। ফলে অসহায়ের মতো লোকজনকে ঘুরতে হচ্ছে পাসপোর্ট অফিসের আঙ্গিনায়। 


এছাড়া পাসপোর্ট অফিসজুড়ে রয়েছে শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট। সহজে পাসপোর্ট পেতে হলে দালাল ধরার কোন বিকল্প নেই। তবে অস্থায়ী ভিত্তিতে হলেও জনবল বৃদ্ধি করা গেলে আরো দ্রুত সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন পাসপোর্ট অফিসে আসা সেবাগ্রহিতারা। 


নতুন পাসপোর্ট করতে আসা সুহেল জানান, প্রথমে তিনি নিজে নিজে ফর্ম ফিলাপ করে জমা দিয়েছিলেন, কিন্তু সামন্য ভূলের কারণে তা বাতিল কারা হয়েছে, এখন আবার নতুন করে করতে হচ্ছে তাই দালালের দারস্ত হয়েছেন।


পাসপোর্ট নবায়ন করতে আসা প্রবাসী রিংকু দাস জানান, তিন মাস ধরে ঘুরেও তিনি নতুন পাসপোর্ট পাচ্ছেন না। নতুন পাসপোর্ট না পাওয়ায় তিনি তার কর্মস্থলে যেতে পারছেন না।
সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত লাইলে দাঁড়িয়ে আছেন একজন শুধু রোহিঙ্গা টেস্টের জন্য। 


তিনি বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র, সার্টিফিকেট, জন্মনিবন্ধন সবই আছে আমার। এর পরেও কিভাবে প্রমান দিবো আমি রোহিঙ্গা না।


সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যে কর্মী ও স্টুডেন্ট ভিসায় ইউরোপ-আমেরিকায় শিক্ষার্থীদের যাওয়া বেড়েছে। তাই হিড়িক পড়েছে পাসপোর্ট তৈরির। এতে চাপ বাড়ছে পাসপোর্ট অফিসে। আর এই সুযোগে বেড়েছে দালালদের দৌরাত্ম। 


কিন্তু এসব ভোগান্তি নিয়ে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/নাজাত/এসডি-১৬