সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ) আসনের সাংসদ হাফিজ আহমদ মজুমদার বলেছেন, 'বন্যা হচ্ছে একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ,সব-সময় আমরা বন্যার পরিস্থিতি মোকাবেলা করে বসবাস করে আসছি। দীর্ঘদিন পর কানাইঘাট উপজেলায় যে বন্যা দেখা দিয়েছে তা আমি সার্বিকভাবে উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখছি।

 


এই মুহুর্তে আমাদের করনীয় হচ্ছে বন্যার পানি কমার সাথে সাথে সুরমা ডাইকের বিভিন্ন এলাকার ভাঙ্গন প্রতিরোধ এবং ক্ষতিগ্রস্ত ডাইকগুলো দ্রুত পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ সরকারি অর্থায়নে দ্রুত মেরামত  করা। এ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আমি কথা বলেছি যাতে করে ভবিষ্যতে বন্যা হলে কোন ধরনের ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

 

সোমবার সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও বন্যা দুর্গতদের মাঝে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত চাল বিতরণকালে বন্যার্তদের উদ্দেশে হাফিজ আহমদ মজুমদার এমপি এসব কথা বলেন। 

 

টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তৃতীয় দিনেও পৌর শহরের প্রশাসন পাড়া সহ পুরো উপজেলা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। ভয়াবহ বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন পুরো উপজেলার লক্ষ লক্ষ মানুষ। 

 

সোমবার দুপুরে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ১৪৬ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

 

এদিকে উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা সোমবার পরিদর্শন করেছেন সরকার দলীয় সাংসদ হাফিজ   আহমদমজুমদার।   তিনি   প্রথমে   সকাল   ১০টায়   উপজেলার   সার্বিক   বন্যা   পরিস্থিতি   নিয়ে   উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান   আব্দুল   মুমিন   চৌধুরী   ও   নির্বাহী   কর্মকর্তা   সুমন্ত   ব্যানার্জি,   উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের কাছ থেকে বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি   অবহিত হন। 

 

পরে   তিনি  নদীপথে  প্রথমে  সাতবাঁক ইউপির বন্যা কবলিত  লোভারমুখ,চরিপাড়া এলাকা পরিদর্শনের পাশাপাশি বন্যা দুর্গতদের মাঝে সরকারিভাবে বরাদ্দকৃত চাল বিতরণ করেন। পরে   তিনি   ২নং   লক্ষীপ্রসাদ   পশ্চিম   ইউপির   সুরমা   ডাইকের   ভয়াবহ   ভাঙ্গন   কবলিত   কুওরঘড়ি-গৌরিপুর সহ বিভিন্ন এলাকা নদীপথে নৌকাযোগে দেখেন। এরপর তিনি লক্ষীপ্রসাদ পূর্ব ইউনিয়নের ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখার পাশাপাশি মুলাগুল ও কাড়াবাল্লা বন্যা দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। 

 

বন্যা কবলিতন এলাকা   পরিদর্শনকালে   পৃথক   পৃথক   ভাবে   উপজেলা   পরিষদের   চেয়ারম্যান   আব্দুল   মুমিন   চৌধুরী, জকিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লোকমান উদ্দিন চৌধুরী, কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি, জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মস্তাক আহমদ পলাশ,   কানাইঘাট   থানার   অফিসার   ইনচার্জ   তাজুল   ইসলাম,   জকিগঞ্জ   উপজেলা   পরিষদের   ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সবুর, সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডিও আমির হোসেন খান, জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য আলমাছ উদ্দিন, ইমাম উদ্দিন চৌধুরী, সাতবাঁক ইউপি চেয়ারম্যান আবু তায়্যিব   শামীম,  লক্ষীপ্রসাদ  পশ্চিম   ইউপি  চেয়ারম্যান   মাও.   জামাল  উদ্দিন,   লক্ষীপ্রসাদ   পূর্বইউপি চেয়ারম্যান তমিজ উদ্দিন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, কানাইঘাট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন সহ গণমাধ্যমকর্মী ও  জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

এদিকে গত রবিবার বিকেলে সুরমা নদীর পানি কিছুটা কমলেও সোমবার সকাল থেকে আবারো লোভা ও সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সুরমা ডাইকের গৌরিপুর-কুওরঘড়ি এলাকায় ৬টি ভাঙ্গনকবলিত পয়েন্ট দিয়ে তীব্র গতিতে পানি প্রবাহিত হওয়ায় কানাইঘাট বাজার, থানা গেইট, উপজেলা প্রশাসন পাড়ায় বানের পানি ঢুকে পড়ে। বিভিন্ন এলাকায় কাঁচা বাড়ি-ঘর বিধ্বস্তহওয়ার   খবর  পাওয়া  গেছে। 

 

এখনও  উপজেলার   বেশিরভাগ   ইউনিয়নের   হাজার   হাজার   বাড়ি-ঘর   বন্যারপানিতে তলিয়ে যাওয়ায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর ভাবে জীবন যাপন করছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি পানিবন্দী হয়ে পড়া মানুষজনকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। 

 

সরকারি ভাবে বরাদ্দকৃত ১৯ টনচাল বন্যা দুর্গতদের মাঝে বিতরণের পাশাপাশি আরো ত্রাণ সামগ্রী ও শুকনো খাবার আসবে বলেউপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/এমআর/এসডি-২৬