মহানবী হযরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে বিজেপি নেত্রী নুপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভ-প্রতিবাদ হয়েছে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ঝাড়খণ্ড প্রদেশে। শনিবার সেখানে পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সহিংসতায় অন্তত ২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২০ জনের বেশি। এরমধ্যে ১০ জন পুলিশ সদস্য আছেন।

দেশটির সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এ খবর দিয়ে বলেছে, মহানবীকে অবমাননার অভিযোগে ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে বিক্ষোভ-সহিংসতা হয়েছে। রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স কর্তৃপক্ষ পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের পর হাসপাতালে নিয়ে আসা আহত দুজন মারা গেছেন বলে নিশ্চিত করেছে।


সংঘর্ষে আহত ২২ জনের মধ্যে ১০ জনই পুলিশ সদস্য। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে ঝাড়খণ্ড পুলিশ।

এর আগে, বৃহস্পতিবার পুলিশের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষের পর ঝাড়খণ্ডের রাজধানীর বিভিন্ন অংশে কারফিউ জারি করা হয়। বিক্ষোভকারীরা মহানবীকে (সা.) অবমাননাকারী বিজেপির বরখাস্তকৃত নেত্রী নুপুর শর্মার গ্রেপ্তার দাবি করেছেন।

বৃহস্পতিবার বিক্ষোভের সময় লোকজন পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ও পাথর নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোড়ে এবং লাঠিচার্জ করে। শনিবার রাঁচির প্রধান সড়কে একদল জনতা জড়ো হয়ে নুপুর শর্মা এবং বিজেপির দিল্লি শাখার সাবেক গণমাধ্যম প্রধান নবীন জিন্দালের গ্রেপ্তার দাবিতে স্লোগান দেন। পরে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এলাকায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়।

ঝাড়খণ্ডের মতো ভারতের অন্তত ৯টি প্রদেশে গত কয়েক দিন ধরে এই ধরনের বিক্ষোভ প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। মহানবীকে অবমাননার প্রতিবাদে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিমরা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করে আসছেন। 

ঝাড়খণ্ড পুলিশের প্রধান অনশুমান কুমার গুলিতে দুজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে আছে বলে জানিয়েছেন তিনি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিধিনিষেধ জারি রয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, আগামীকাল পর্যন্ত ওই এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ভারতের ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাবেক মুখপাত্র নুপুর শর্মা গত মাসে এক টেলিভিশন শোতে অংশ নিয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন। পরে দলটির নয়াদিল্লি শাখার গণমাধ্যম প্রধান নবীন জিন্দালও নুপুর শর্মার মন্তব্যের সমর্থনে টুইট করেন।

তাদের এই মন্তব্য দেশটির সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায়কে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এমনকি অভিযুক্তদের মন্তব্যের জেরে ভারতের কয়েকটি রাজ্যের মুসলিমরা বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন। আর এর রেশ ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাইরের বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।

অবশ্য এরপরই অনেকটা নড়েচড়ে বসে বিজেপি। পরিস্থিতি বিবেচনায় বিজেপি গত রোববার অভিযুক্ত নুপুর শর্মাকে বরখাস্ত এবং জিন্দালকে বহিষ্কার করে। এমনকি বিজেপির এই দুই নেতা প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।

কিন্তু এরপরও বিজেপির জ্যেষ্ঠ দুই নেতার বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে মুসলিম বিশ্বের ক্রমবর্ধমান ক্ষোভ ও তোপের মুখে পড়েছে ভারত। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশগুলোসহ এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় দেড় ডজন দেশ ভারতের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে। এসব দেশ ভারত ও বিজেপি সরকারের নিন্দা জানানোর পাশাপাশি দেশটিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে দলীয় মুখপাত্র এবং নেতাদের টিভি বিতর্কে যোগ দেওয়াসহ তাদের বক্তব্যের নতুন সীমারেখা নির্ধারণ করেছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। অর্থাৎ টেলিভিশন বিতর্কে অংশ নিতে হলে এবার মুখ খুলতে হবে ভেবেচিন্তে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/জিএসি-১৮


সূত্র : ঢাকা পোস্ট