সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে রবিবার ভোর থেকে বানের পানি ধীর গতিতে হ্রাস পাওয়াতে গত ৭ দিনেও উপজেলাধীন ৯ ইউনিয়নের ৫০ ভাগ মানুষের বাড়িঘর থেকে এখনো পানি নামেনি।

 


স্মরণকালের সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় বজ্রপাত, টিলা ধস ও নৌকা ডুবিতে তিন শিক্ষার্থীসহ (দুই এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ) সরকারি হিসাবে ১৪ জনের প্রাণহানি ঘটলেও বেসরকারি হিসাবে অকালে ঝরে গেছে দ্বিগুণ তাজা প্রাণ।

হাঁস-মোরগ ছাড়াও ভেসে গেছে শতাধিক গরু-ছাগল। পাহাড়ি ঢলে ভারত থেকে ভেসে আসা মৃত বন্য প্রাণিসহ পচে যাওয়া লাশ ও মৃত গবাদি পশুর দূর্গন্ধে ক্রমশ দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ধসে গেছে শত শত কাঁচা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি। পুরোদমে পানি না কমায় গৃহহীন ও পানিবন্দি ৫০ ভাগ মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন।

বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাবে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত বিভিন্ন রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দিয়েছে উপদ্রুত এলাকায়।

এদিকে নৌকা দেখলেই ত্রাণের আশায় হাঁটু ও কোমর সমান পানিতে দাঁড়িয়ে থাকেন বানভাসিরা। অপরদিকে সরকারি বরাদ্দকৃত ত্রাণসামগ্রীর পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন, এনজিও সংস্থা, প্রবাসী ও বিত্তবানদের উদ্যোগে পরিচালিত আর্থিক সহায়তাসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।

 

গত চারদিন ধরে বানভাসিদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের পাশাপাশি অংশ নিয়েছেন সরকার দলীয় স্থানীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিক, উপজেলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক অধ্যক্ষ ইদ্রিস আলী বীর প্রতিকসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ। তবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত বিত্তবানদের নিজ অর্থায়নে বেসরকারি ত্রাণসামগ্রীর তুলনায় সরকারি ত্রাণসামগ্রী অপ্রতুল বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনরা।

পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রীসহ বন্যা পরবর্তী গৃহ ও কৃষি পূনর্বাসন মঞ্জুরির জন্য স্থানীয় এমপি মুহিবুর রহমান মানিকসহ বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবরে আকুল আকুতি জানিয়েছেন বানভাসিরা।


অপরদিকে গো-মহিষ ও জানমালের নিরাপত্তাহীনতায় বিনিদ্র রাতদিন নৌ ডাকাতির আতঙ্কে কাটাচ্ছেন খামারিসহ বানভাসি শত শত পরিবার। বন্যার প্রথম দিন থেকেই উপদ্রব বেড়েছে নৌ ডাকাতির। এ যাবত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনেক গবাদি পশু, নগদ অর্থ, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান মালামাল অস্ত্রের মুখে ছিনিয়ে নেয় ডাকাতদল। অবশ্য গত চারদিন ধরে পানি ক্রমশ হ্রাস পাওয়ায় তৎসহ পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবী দলের টহল অব্যাহত থাকায় ‘ডাকাত আতঙ্ক’ কিছুটা কমেছে।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা প্রিয়াংকা এ প্রতিবেদককে বলেন, বন্যা দূর্গত এলাকায় সরকারি ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনই চাহিদামাফিক ত্রাণ আসছে। বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে আমাদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরাও নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/টিআই/এসডি-৩৩