সিলেটে ধীরগতিতে নামছে বন্যার পানি। তাই ধীরে ধীরে পানির নিচ থেকে ভেসে ওঠছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ ফিরতে শুরু করেছে বাড়িতে। কিন্তু বাড়ি ফিরে তাদেরকে পড়তে হচ্ছে হতাশায়। বাড়ি ফিরে কেউ দেখছেন পড়ে আছে শূন্য ভিটা। চিহ্ন নেই বসত ঘরের। কারো ঘর মিশে আছে মাটিতে। খেতের ফসল আর খামারের মাছ তো সেই বন্যার শুরুতেই গেছে ভেসে। কৃষকের সম্বল গোয়ালের গরু আর গুদামের ধান সবই কেড়ে নিয়েছে সর্বনাশা বানের পানি। বন্যার মাঝে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জয়ী হয়ে বাড়ি ফিরে এখন তাদেরকে শুরু করতে হচ্ছে ঠিকে থাকার লড়াই। ঘুরে দাঁড়ানোর সেই লড়াই শুরু করতে হচ্ছে একেবারেই শূণ্য থেকে।


সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নন্দিরগাঁও ইউনিয়নের নোয়াগাঁও গ্রামের আবদুল কাদির। ছয় সদস্যের পরিবারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিল শ’খানে হাঁস। বন্যা ভয়াবহ রূপ নিলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে ওঠেছিলেন আশ্রয়কেন্দ্রে। পানি কমায় বাড়ি ফিরে দেখেন কাঁচা বসতঘরটি মাটিতে মিশে আছে। বানের পানিতে ভেসে গেছে হাঁস। আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে আসা আবদুল কাদির এবার কোথায় আশ্রয় নেবেন জানেন না। মাথা গুঁজার ঠাঁই, ঘরের সকল আসবাবপত্র, আয়ের একমাত্র উৎস হাঁস খুঁইয়ে আবদুল কাদির এখন সর্বহারা। নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করতে গিয়ে বললেন, ‘এমন বেঁচে থাকার চেয়ে বন্যার পানিতে ডুবে মারা যাওয়াটাই ছিল ভাল। এখন তো না পারবো বাঁচতে, না পারবো মরতে। নতুন করে জীবন শুরু করারও কোন উপায় নেই।’



আবদুল কাদিরের মতো এখন সিলেটের হাজার হাজার মানুষের অবস্থা। দুই দফা বন্যায় আক্রান্ত এলাকার বেশিরভাগের বাড়িঘর হয়তো ভেসে গেছে, নয়তো ভেঙ্গে পড়েছে। যেগুলো এখনো দাঁড়িয়ে আছে সেগুলোর অবস্থাও খুবই খারাপ। ঝড় তুফানে যে কোন সময় ভেঙ্গে পড়ে যাওয়ার অবস্থা। সিলেটের হাওর এলাকার লোকজনের বেশিরভাগই কৃষির উপর নির্ভরশীল। কেউ কৃষিকাজ করে, কেউ মৎস্য চাষ আর কারো জীবন চলে হাঁস লালন পালন করে। কিন্তু এবার বন্যায় কেড়ে নিয়েছে তাদের সর্বস্ব। বন্যায় ভেসে গেছে বীজতলা ও সদ্য তোলা বোরো ধান। আকস্মিক বন্যার কারণে বেশিরভাগ কৃষক গুদামে সংরক্ষিত ধান নিরাপদে সরিয়ে নিতে পারেননি। ফলে বন্যার পানিতে ধান নষ্ট হয়ে গেছে। মাছ ও হাঁস ভেসে গেছে বন্যায় প্লাবিত হওয়ার পরই। বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে অনেকের গবাদি পশুও মারা গেছে।


সিলেট জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বন্যায় সিলেটি সিটি করপোরেশনের একাংশ এবং জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েন ৪ লাখ ১৬ হাজার ৮১৯ পরিবারের ২১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩২ জন মানুষ। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২২ হাজার ৪৫০টি ঘরবাড়ি। ফসলহানি হয়েছে ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির। তবে ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণ এর দ্বিগুন হবে বলে ধারণা সাধারণ মানুষের। এখন পর্যন্ত বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ হিসেবে কেবলমাত্র খাবার ও নগদ টাকা সরকারিভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রবিবার পর্যন্ত বরাদ্দকৃত ত্রাণ ও নগদ টাকার পুরোটাই বিতরণ হয়ে গেছে। তবে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি।


সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানিয়েছেন, বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পর পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/শাদিআচৌ/পিডি