বন্যার কারণে প্রায় সবার দুর্ভোগ সৃষ্টি হলেও আয় বেড়েছে নৌকা মিস্ত্রিদের। চারিদিকে থৈ থৈ পানি। বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের ওসমানীনগরের দেড় শতাধিক গ্রাম। পানি থাকায় ঘর থেকে বের হওয়ার একমাত্র মাধ্যম এখন নৌকা।

 


বন্যার কারণে রাস্তার উপর দিয়েও চলছে নৌকা। ফলে কদররের পাশাপাশি আয়ও বেড়েছে নৌকা কারিগরদের।

 

নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার নৌকার কারিগরা। গ্রামে চলাচলের জন্য ছোট ডিঙি নৌকার চাহিদা রয়েছে বেশি। কাজের চাপ বাড়ায় আগে যারা কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন তারাও এখন যোগ দিচ্ছেন এই পেশায়। ফলে দম ফেলার সময় নেই নৌকার কারিগরদের।

 

জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে সৃষ্ট বন্যায় ওসমানীনগরের প্রায় ৯০ ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার কারণে চারিদিকে দুর্ভোগ থাকলেও আয় বেড়েছে নৌকা শ্রমিক এবং মাঝিদের। পানিবন্দী মানুষেদের মধ্যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ত্রাণ সহায়তায়ও প্রয়োজন পড়ছে নৌকার। বন্যার কারণে নিম্নবিত্ত যাদের কাজ কর্ম নেই- তাদের মধ্যে অনেকেই ধরেছেন নৌকার বৈঠা। নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের পথ খুঁজছেন তারা। ফলে উপজেলায় ব্যাপক হারে নৌকার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

উপজেলার মিঠাভরাং গ্রামের বাসিন্দা রাজু রবিদাশ। বন্যায় কাজ কর্ম হারিয়ে ধরেছেন নৌকার বৈঠা। দিন শেষে ৪ থেকে ৫শ টাকা আয় হয় তার। তিনি বলেন, কাজ নেই। ঘরে খাবারও নেই। উপজেলার সীমান্তবর্তী গ্রাম হওয়ায় ত্রাণও পাওয়া যায় না। তাই উপার্জনের জন্য নৌকা চালাচ্ছেন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের পাশে প্রায় ৫ থেকে ৬ টি স্থানে নৌকা তৈরি করা হচ্ছে বর্তমানে। এছাড়া রাস্তার পাশে বড়ইসপুর, চাতলপার, উসমানপুরসহ কয়েকেটি শুকনো স্থানে নৌকা তৈরি হচ্ছে।

 

উপজেলার সাদিপুরে বাজারের পাশে খোলা যায়গায় নৌকা তৈরি করছেন মিস্ত্রি রফিক আলী। তিনি জানান, ২ জনকে শ্রমিককে নিয়ে সম্প্রতি দিনরাত কাজ করছেন তিনি। ছোট একটি নৌকা তৈরি করতে তাদের দুই দিন লাগে। কাঠসহ ডিঙি নৌকা ৫ থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হচ্ছে। বড় সাইজের নৌকার চাহিদা কম থাকায় তৈরি হয় অর্ডার পেয়ে। বেশিরভাগ ধনাঢ্য পরিবারের লোকজন ডিঙি নৌকা ক্রয় করছেন।

 

তবে আগের তুলনায় নৌকা তৈরির কাঠ একটু বেশি দামে কিনতে হচ্ছে উল্লেখ করে রফিক আলী আরও জানান, গত দুই সপ্তায় ৬টি নৌকা বিক্রি করেছেন তারা। এতে প্রায় ১৫ হাজার টাকার লাভ হয়েছে।

 

উপজেলার কুরুয়া বাজারেও দেখা যায়- নৌকা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কয়েকজন শ্রমিক। তাদের মধ্যে জামাল মিয়া নামের একজন বলেন, বন্যায় দুর্ভোগ তো আছে। বাড়িতে পরিবারের সবাই পানিবন্দী। তবে বন্যা পরিস্থিতিতে কাজ বেড়েছে দ্বিগুণ, সাথে উপার্জনও। পানি ধীরে কমায় নৌকার চাহিদা সহসাই কমছে না। এখন পর্যন্ত ১৩টি ডিঙ্গি নৌকা বিক্রি করেছি।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম / আর.পি / ডি.আর/এসডি-৪৪