করোনার প্রথম থেকে তৃতীয় ঢেউয়ে প্রতিবার নানা নামে লকডাউনের মতো বিধিনিষেধ দেয়া হলেও অর্থনীতির বিবেচনায় এবার আর সেই পথে হাঁটছে না সরকার।

 


ভাইরাসটির চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়া নিশ্চিত হলেও আপাতত কঠোর কোনো অবস্থানে যাচ্ছে না প্রশাসন। জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরই আপাতত জোর দেয়া হবে।

 

সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে দুইবার কঠোর বিধিনিষেধের কারণে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সে সময় মানুষের মৃত্যুর হার ও আক্রান্তদের মধ্যে জটিলতা ছিল বেশি। সে কারণে অর্থনীতির সেই ক্ষতি মেনে নিতে হয়েছে। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। রোগী বাড়লেও এবার ভাইরাসটির যে ধরন ছড়াচ্ছে, সেটি রোগীদের মধ্যে জটিলতা তৈরি করছে না সেভাবে। মৃত্যুর হারও কম।

 

তাছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধসহ নানা কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন চাপে। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির যে সমস্যা, তার বাইরে নয় বাংলাদেশও। নিত্যপণ্যের দাম দিয়েছে লাফ। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে শ্রীলঙ্কায় অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মনস্তাত্ত্বিক চাপ। এর মধ্যে দেশের পূর্বাঞ্চলে দেখা দিয়েছে বন্যা, উত্তরের কোথাও কোথাও একই সমস্যা। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন হয়ে গেছে কঠিন। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতির ক্ষতি হতে পারে, এমন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে আরও অপেক্ষা করতে চায় সরকার।

 

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘করোনা ১৫ দিন আগেও অনেক কম ছিল, এক শর নিচে ছিল। এখন অনেক বেড়েছে। আমরা লাগাম টেনে ধরতে চাই। এটা শুধু আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। এভাবেই কমানো সম্ভব। সংক্রমণ থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হলো মাস্ক পরা।’

 

তিনি বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে আমরা নির্দেশ দিয়েছি মাস্ক পরার নিশ্চিত করার জন্য। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ একটি চিঠিও দিয়েছে। সেখানে আমাদের সুপারিশ থাকে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে মাস্ক পরানো, শাস্তি দিয়ে বা কোনো পেনাল্টি দিয়ে না। আমরা তাদের আহ্বান করব, কারণ তাদের মঙ্গলের জন্যই তো এ কাজটি করি। তারপরেও যদি সরকার দেখে যে এখানে ব্যত্যয় ঘটছে, তাহলে কোনো পদক্ষেপ নিতেই সরকার দ্বিধা করবে না। কারণ, আমাদের দেশকে তো করোনামুক্ত রাখতে হবে, সব সচল রাখতে হবে।’

 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালও জোর দিচ্ছেন মাস্ক ব্যবহারের ওপর। তিনি বলেন, ‘কোরবানির হাট হোক, মসজিদ হোক, যেকোনো জনসমাগমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে নির্দেশ দিয়েছে সেটি মেনে চলতে হবে।’

 

করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে সব সরকারি চাকরিজীবীদের এরই মধ্যে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করে নির্দেশ জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

 

করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর বৃহস্পতিবার গত সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত এক দিনে ভাইরাসটিতে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। এর চেয়ে বেশি মৃত্যু হয় গত ১১ মার্চ। সেদিন ২৪ ঘণ্টায় পাঁচজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়।

 

এ নিয়ে ভাইরাসটিতে এখন পর্যন্ত মারা গেছে ২৯ হাজার ১৪৯ জন।

 

করোনার তৃতীয় ঢেউ নিয়ন্ত্রণে আসার পর গত ১৬ জুন প্রথমবারের মতো পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ৫ শতাংশ ছাড়ায়। টানা ১৪ দিন ৫ শতাংশের বেশি শনাক্তের হার পাওয়া যাওয়ার পর দেশে চতুর্থ ঢেউ ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় শনাক্তের হার পরপর দুই সপ্তাহ ৫ শতাংশের বেশি হলে পরবর্তী ঢেউ ছড়িয়েছে বলে ধরা হবে। সেই হিসাবে দেশে এখন করোনার চতুর্থ ঢেউ চলছে।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/পূপ/ইআ