আর মাত্র ক’দিন পরই মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ‘পবিত্র ঈদুল আযহা’। আর এই ঈদকে সামনে রেখে হবিগঞ্জ জেলায় জমে উঠেছে কোরবানির পশু কেনা-বেচা।

হাটগুলোতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে কেনা-বেচা। কোনো কোনো হাটে আবার রাতের বেলায়ও চলছে ধুমধাম বিক্রি। যদিও কোরবানির পশু কেনা-বেচায় দাম নিয়ে রয়েছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের মধ্যে ভিন্ন বক্তব্য।


ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলানায় এবার গরু-ছাগলের দাম বেশি। 

আর বিক্রেতারা বলছেন, করোনা ও বন্যার কারণে পশু লালন-পালনে খরচ হয়েছে বেশি। তাই দেশীয় জাতের গরুর দাম কিছুটা বেশি। দাম বাড়ার পেছনে বন্যায় গো-খাদ্য নষ্ট হওয়াকেও কারণ হিসেবে দেখাচ্ছেন বিক্রেতারা। 

সরেজমিনে হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পশুর হাট ঘুরে দেখা যায়, বিক্রেতারা দূরদূরান্ত থেকে পিকআপ ভ্যান ভর্তি করে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়াসহ কোরবানির পশু নিয়ে আসছেন। আবার শহরতলির আশপাশের গরু বিক্রেতারা হাটিয়ে গরুগুলোকে বাজারে নিয়ে আসছেন। পরে তা সারিবদ্ধ করে রাখছেন বাজারে। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণে আবার অনেক গরু ছাগলকেই সুন্দর করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অন্য বছর পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আনা ভারতীয় গরু বাজারে দেখা গেলেও এবার তা নেই বললেই চলে। তাই ক্রেতাদের দৃষ্টি ছোট ও মাঝারি ধরণের গরুর প্রতি। মাঝারি ধরণের ষাড় ৬০ থেকে ৮০ হাজার টাকায় বেশি বিক্রি হচ্ছে। আর এসব গরু স্বাচ্ছন্দে ক্রয় করছেন ক্রেতারা। 

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও হবিগঞ্জ শহর ছাড়াও জেলার আজমিরীঞ্জ, বানিয়াচং, নবীগঞ্জ, শহরতলীর পইল, শায়েস্তাগঞ্জ, মিরপুর ও চুনারুঘাট উপজেলার বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশুর হাট বসছে। প্রতিদিনই কোনো কোনো বাজার জমে উঠছে।

বিক্রেতারা বলছে- দিন যত যাচ্ছে কেনা-বেচাও বাড়ছে। তবে এর মধ্যে আবার অনেক ক্রেতা গরু দামদর করতে বাজারে এসেছেন। তারা বলছেন, কোরবানির পশু রাখার মতো বাসা বাড়িতে জায়গা না থাকায় ঈদের আগের দিনই ক্রয় করবেন তারা। 

শায়েস্তাগঞ্জ তানিয়া ডেইরি ফার্ম থেকে নিয়ে আসা হয়েছে ১৫ মন ওজনের ‘রাজা বাবুকে’। ‘রাজা বাবু’র মালিক সাহরাজ মিয়া জানান, ১৫ মন ওজনের রাজা বাবুর দাম চাচ্ছেন তিনি ৭ লাখ টাকা। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবারের মাধ্যমে তিনি রাজাবাবুকে লালন-পালন করেছেন। বাজারের মধ্যে রাজাবাবু সব থেকে বড় হওয়ায় ক্রেতাদের দৃষ্টি কাড়ছে গরুটি। এছাড়াও যে ব্যক্তি রাজুবাবুকে ক্রয় করবেন তার জন্য একটি আকর্ষণীয় চেয়ার ফ্রি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিক্রেতা।

আরে বিক্রেতা কালাম মিয়া জানান, বড় ছোট ও মাঝারি ধরণের মিলিয়ে তিনি ৭টি গরু হাটে তুলেছেন। বিকেলের আগেই তিনি দুটি গরু বিক্রি করেছেন। একটি ষাড় বিক্রি করেছেন ৬৫ হাজার টাকায় অপর একটি গাভী বিক্রি করেছেন ৫৫ হাজার টাকা। তিনি বলেন, বড় ষাড়ের দাম চাচ্ছেন এক লাখ টাকা। ৯৫ হাজার টাকা দাম হলে বিক্রি করে দিবেন।

আইয়ুব আলী নামে এক বিক্রেতা জানান, গো-খাদ্যসহ নানা সংকটের কারণে দেশীয় জাতের গরুর দাম কিছুটা বেশি। তবে সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। তিনি বলেন, দুপুর গড়িয়ে বিকেল আসার সাথে সাথে বাজারে ক্রেতাদের সংখ্যা বেড়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের দাম দরের মাধ্যমে বেচা কেনা জমে উঠেছে। 

ক্রেতা নজরুল আমিন চৌধুরী জানান, হাটে আসার পর ছোট বড় অনেক গরু দেখেছি। মাঝারী সাইজের গরু আমাদের বেশি পছন্দের। ৭০ হাজার টাকা মূল্যের একটি ষাড় ক্রয় করেছি। গত বছরের চেয়ে দাম সামান্য কিছু বেশি।

সুরুজ আলী নামে অপর এক ক্রেতা জানান, বেশিরভাগ ক্রেতারাই ৬০ থেকে ১ লাখ টাকা মূল্যের গরু ক্রয় করছে। যে কারণে এ সাইজের গরু দাম বেশি। তিনি বলেন, আমি একটি ষাড় ক্রয় করেছি ৬০ হাজার টাকায়। বিক্রেতা দাম চেয়েছিল ৭৫ হাজার টাকা। সুহেল মিয়া নামে এক ক্রেতা জানান, এখনও গরু ক্রয় করেননি। তবে বাজার ঘুরে দেখছি। গত বছরের চেয়ে দাম কিছুটা বেশি। তবে দামে দরে মিললে আজই (বুধবার) কোরবানির পশু কিনব। 

হবিগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা প্রকাশ ডা. রঞ্জন বিশ্বাস জানান, এবারের কোরবানির ঈদে জেলায় প্রায় ৯০ হাজার গরু, ছাগল ও মহিসের চাহিদা রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার চাহিদা হবিগঞ্জ থেকেই পূরণ হবে বলে। বাকী পশুগুলো অন্যান্য জেলা থেকে নিয়ে আসা হবে। 

এদিকে, জেলার সর্বত্র পশুর হাটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনী। 

হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এসএম মুরাদ আলী জানান- গরুর হাটকেন্দ্রিক ছিনতাই, চাঁদাবাজি, পকেটমার, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি ঠেকাতে র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যরা পোশাকের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও মাঠে কাজ করছে। এছাড়াও জেলার ৫৫টি স্থায়ী হাটে যে কোন ধরণের অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতে সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্যরা তৎপর থাকবে। 


সিলেটভিউ২৪ডটকম / জাকারিয়া / ডি.আর