সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজর ৩ শিক্ষার্থীর উপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে দুইজনকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও প্রশাসনের সঙ্গে সমঝোতা না হওয়ায় ফের আন্দোলনে নেমেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তবে সমঝোতা বৈঠক শেষে শিক্ষার্থীদের দাবিকৃত বিভিন্ন দাবি বাস্তবায়ন করা হয়েছে বলে হাসপাতালের পরিচালক ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন সাংবাদিকদের বলেন- আমরা গতকালের (সোমবারের) সিদ্ধান্তের কথা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানিয়েছি। তারা কিছুটা আবেগ তাড়িত হয়ে শিক্ষার্থীরা কিছু বক্তব্য রেখেছেন ; আমরা তাদের সকল যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়েছি।


তিনি আরও বলেন- শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে হাসপাতালে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এজাহারনামীয় আসামীদের গ্রেফতার করতে কিছুটা বেগ পোহাতে হচ্ছে। আসামীরা নেটওয়ার্ক বিচ্ছিন্ন থাকায় তাদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সংস্থা তাদের গ্রেফতার করতে কাজ করছে।

বর্তমানে কাজের পরিবেশ স্বাভাবিক রয়েছে উল্লেখ করে জাকির বলেন- বর্তমানে কাজের পরিবেশ অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশাকরি ভবিষ্যতেও তাদের কাজের পরিবেশ অব্যাহত থাকবে।

শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য মেডিকেল কলেজের কয়েকটি বড় রুম খালি করে পুলিশের থাকার ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে বলে ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মঈনুল হক জানিয়েছেন। তিনি আশা করেন শিগগিরই আসামিদের গ্রেফতার করা হবে।

হাসপাতালের পরিচালক  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন- আমরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ও তাদের ৫ দফা দাবির প্রেক্ষিতে বৈঠকে বসি। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। হাসপাতালের নিরাপত্তায় ৩০ সদস্য বিশিষ্ট পুলিশ দল কাজ করছে। তাছাড়া অভিযুক্তদের মধ্যে ২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। অন্যদের গ্রেফতারে বিভিন্ন জায়গা অভিযান চালাচ্ছে। তবে পলাতক থাকা আসামিরা নেটওয়ার্কের বাহিরে থাকায় কিছুটা বেগ পোহাতে হচ্ছে। তবে আমরা আশাকরি পুলিশ এদেরকেও গ্রেফতার করে ফেলবে।

জানা যায়, ওসমানী মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী (ইন্টার্ন চিকিৎসক) ইমন আহমদের সঙ্গে গত রোববার দুপুরে এক রোগীর দুই স্বজনের বাগবিতণ্ডা হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এসময় ওই দুজনকে পুলিশে সোপর্দ করেন। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে বিষয়টির মীমাংসা হয়। ওই ঘটনার জের ধরে সোমবার (১ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের ছাত্র ইমন আহমদ (২৪) ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র নাথ (২২)-এর ওপর কলেজের পেছনে হামলার ঘটনা ঘটে। পরে সহপাঠীরা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসাসেবা বন্ধ করে দেন। এছাড়া কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।

ধর্মঘট ও অবরোধের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিলেটে মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এ ছাড়া হাসপাতালে যান সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন। 

এসময় শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মেডিকেল প্রশাসনের মামলা করাসহ পাঁচ দাবি জানান। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে রাত ৩টার দিকে ধর্মঘট ও অবরোধ স্থগিত করেন আন্দোলনরতরা। তবে এসময় তারা হামলাকারীদের গ্রেফতারের জন্য আজ (মঙ্গলবার) বেলা ২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। 

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আজ বেলা দুইটায় আন্দোলনরতদের সঙ্গে কলেজ, হাসপাতাল, পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বৈঠকে বসেন। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। 

বৈঠকে ইন্টার্ন চিকিৎসকের ৫ দাবি মেনে নিলেও হামলাকারী কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় আন্দোলন থেকে সরে আসেননি তারা। চিহ্নিত হামলাকারী অন্তত ৩ জন গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতির পালন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তবে শুধু ইমার্জেন্সি ও হৃদরোগ বিভাগে সেবা অব্যাহত রাখবেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। 

এদিকে, গত রাত ১টার দিকে হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে আটক করে পুলিশ। আটককৃতরা হলেন- নগরীর মুন্সিপাড়ার মৃত রানা আহমদের ছেলে সাঈদ হাসান রাব্বি (২৭) ও কাজলশাহ এলাকার আব্দুল হান্নানের ছেলে এহসান আহমদ (২২)। এ দুজনই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত বলে জানা গেছে। এ দুজনের মধ্যে সাঈদ হাসান রাব্বি সিলেট মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।

তবে আন্দোলনকারীরা বলছেন- এ দুজন হামলার সময় উপস্থিত ছিলেন না। ‘আই ওয়াশের’ জন্য পুলিশ এ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এজাহারনামীয় কোনো আসামি এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। তাই তাদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে। তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। চিকিৎসাসেবা না দেওয়া ছাড়াও আজ ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন ওসমানী মেডিকেল কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / মুন্না / ডালিম