পেশায় তিনি একজন সম্ভ্রান্ত কৃষক। এলাকায় শালিস ব্যক্তিত্ব হিসেবেও পরিচয় রয়েছে তার। রাজকুমার দাস নামের জৈনক ঐ ব্যক্তিকে সুইপার পরিচয়ে তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে হাসপাতালের পরিচ্ছন্ন খাতের বরাদ্দ ব্যাংক থেকে তোলা হয় টাকা। অনিয়ম, দুর্নীতি আর জালিয়াতির এমন অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সেলিনা আক্তারের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় এলাকায় ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে জালিয়াতিদর অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেছে এলাকাবাসী। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন করেছে একটি চক্র। এদিকে জালিয়াতির ঘটনায় অনুসন্ধান চালালে বেরিয়ে আসে আসল রহস্য।


জানা যায়, হাওর অধ্যষুতি সুনামগঞ্জ জেলার সবচেয়ে পিচিয়ে পড়া জনপদ শাল্লা উপজেলা। ৪ ইউনিয়নের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য উপজেলা সদরে রয়েছে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলা হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে কর্র্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের শেষ নেই এলাকাবাসীর। সাম্প্রতিকালে উপজেলার মুক্তারপুর গ্রামের রাজকুমার দাস নামের এক ব্যক্তিকে পরিচ্ছন্নকর্মী দেখিয়ে তার স্বাক্ষর জাল করে সরকারি বরাদ্দের প্রায় ২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সেলিনা আক্তারের বিরুদ্ধে। বিষয়টি জানাজানি হলেও এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।



রাজকুমার দাস এলাকার একজন পরিচিত ও সম্ভ্রান্ত কৃষক। সে উপজেলা হাসপাতালে কোনো পদে কর্মরত নয়। এই ঘটনায় সুইপার পরিচয় দিয়ে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করার অনিয়মের বিচার চেয়ে দুদদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে অভিযোগ করেছেন সংক্ষুব্ধ এই ব্যক্তি রাজ কুমার।


রাজকুমার দাস বলেন, এর মাধ্যমে আমার মানহানি হয়েছে। আমার পিতা ও আমি এলাকার বুনিয়াদি কৃষক। হঠাৎ শুনি আমাকে পরিচ্ছন্নকর্মী দেখিয়ে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা খাতে প্রায় ২ লাখ টাকা তুলেছেন  হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । এ বিষষেয় অভিযোগ করেছি। আমি এর ন্যায় বিচার চাই।


এছাড়াও জালিয়াতির বিষয়ে অনুসন্ধান করলে খেচুর কুঁড়ে সাপ বেরিয়ে আসার মতো অনেক তথ্য । কোভিট-১৯ এর ভ্যাকসিন কার্যক্রমসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবীদের জন্য সরকার ৮লক্ষ ৮২হাজার টাকা বরাদ্দ দিলেও স্বেচ্ছাসেবীদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ব্যাংক থেকে এই টাকা উত্তোলন করে স্বেচ্ছাসেবীদের না দিয়ে আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়ায় যায় হাসপাতালের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। রেজুলেশন সীটের স্বাক্ষর স্বেচ্ছাসেবীদের নয় ও বরাদ্দে কোনো টাকা নাপাওয়ার কথা জানান ক্ষতিগ্রস্তরা।


সুলেখা রাণী নামের এক স্বেচ্ছাসেবী বলেন, আমি করোনার কোনো টাকা পাইনি। আর  বাউচারে যে স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে সেটি আমার না। এটি জালিয়াতি করা হয়েছে।


এদিকে  রাজকুমার ও স্বেচ্ছোসেবীদের স্বাক্ষর জালিয়াতি করার কথা স্বীকার করেছেন হাসপাতালের অফিস সহকারী অসিত বর্মন। তিনি বলেন, কম্পিউটারে রাজকুমারের ফাইল সেট করা ছিল। সেখান থেকে বের করে তাড়াহুড়ো করে স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে। উত্তোলিত টাকা মেডাম অর্থাৎ প.প কর্মকর্তার কাছে দেয়া হয়েছে।


স্বাক্ষর জালিয়াতি করে টাকা উত্তোলণ ভাউচারে তাঁর স্বাক্ষর দেখা গেলেও এসব অনিয়মের ব্যাপারে অফিস সহকারির কাঁধে সকল দায় চাপালেন উপজেলা প.প কর্মকর্তা ডা. সেলিনা আক্তার । তিনি বলেন, সব কাজ আমি করিনা। সকল নথি অফিস সহকারি তৈরী করে। সেখানে আমি স্বাক্ষর দিয়ে থাকি। এ বিষয়ে জানার থাকলে লিখিত অভিযোগ দেয়ার কথা জানান তিনি।


সরেজমিন তদন্ত করে আত্মসাতের প্রমাণ না পেলেও কৃষক রাজকুমারকে সুইপার পরিচয়ে টাকা উত্তোলনের বিষয়টি ভুল হয়েছে বলে জানান সিভিল সার্জন আহমদ হোসেন । এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান ।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/শনূআ/ইআ