সিলেট মহানগর বিএনপির বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিরোধের ফলে সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা চলে আসার শঙ্কা করছেন দায়িত্বশীল নেতারা। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মহানগর বিএনপির নেতাদের ঢাকায় ডাকা হয়েছে। সেখানে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিবাদমান পক্ষের নেতাদের নিয়ে বৈঠক করবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

জানতে চাইলে সিলেট মহানগর বিএনপির সর্বশেষ পূর্ণাঙ্গ কমিটির সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাসিম হোসাইন সিলেটভিউকে বলেন, ‘আমাদের সবাইকে ঢাকায় ডাকা হয়েছে। আগামীকাল রোববার বিকাল ৪টায় আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।’


ঢাকায় বৈঠকে বসার বিষয়টি সিলেটভিউকে নিশ্চিত করেছেন মহানগর বিএনপির আহবায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকীও।

বিএনপি নেতারা জানান, এই বৈঠকে বিরোধ নিরসন করে সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দেবেন তারেক রহমান। মহানগর বিএনপির আওতাধীন সকল ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা এবং দ্রুত মহানগরের সম্মেলন আয়োজনের নির্দেশনাও থাকবে।

প্রসঙ্গত, সিলেট মহানগর বিএনপির বিরোধ নিয়ে গত ৩ আগস্ট ‘সিলেট মহানগর বিএনপির বিরোধ চরমে!’ শীর্ষক একটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সিলেটভিউ২৪ডটকম।

বিএনপির এক দায়িত্বশীল নেতা জানান, সিলেটভিউয়ের প্রতিবেদন বিএনপির হাইকমান্ডের নজরে আসার পর সিলেট মহানগর বিএনপির নেতাদের ঢাকায় তলব করা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর মহানগর বিএনপির ২৯ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আগের কমিটির সহসভাপতি আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকীকে আহ্বায়ক ও আগের কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীকে সদস্যসচিব করা হয়।

কিন্তু আহ্বায়ক কমিটি ঘিরে শুরুতেই দেখা দেয় বিতর্ক। সেই বিতর্ককে ধামাচাপা দিতে আহ্বায়ক কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত করা হয় আরও ৬ নেতাকে। বর্তমানে ৩৫ সদস্যের এ কমিটিতে আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব ছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক ১৩ জন ও সদস্য ২০ জন রয়েছেন।

বিএনপি সূত্র জানায়, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটিতে মিফতাহ সিদ্দিকীকে সদস্যসচিব করা নিয়ে দলের একটি অংশ ক্ষুব্ধ হয়। তাঁকে ‘জুনিয়র’ ‘স্বার্থপর’ নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করে ওই পক্ষ। মূলত বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির বলয় থেকে ওঠে এমন অভিযোগ।

মুক্তাদির বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী। অন্যদিকে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর বলয়ের হিসেবে পরিচিত মহানগরের সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী। মুক্তাদির বলয়ের সঙ্গে আরিফ বলয়ের রেষারেষি আছে বলে জানিয়েছেন বিএনপি নেতারা। তবে বলয়কন্দ্রিক রাজনীতির কথা অস্বীকার করেছেন মিফতাহ সিদ্দিকী।

বিএনপি সূত্র জানায়, গত ১৮ জুলাই রাতে আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকীর বাসায় মহানগর বিএনপির বর্ধিত সভা ছিল। সেই সভায় সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটান একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক। তাঁরা মিফতাহ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ‘স্বার্থপরতা’ ‘নিজের বলয় ভারী করা’ ‘দলে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা’ প্রভৃতি অভিযোগ তুলে বক্তব্য দেন। এ নিয়ে বর্ধিত সভায় তুমুল হট্টগোল হয়। নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে মিফতাহ সিদ্দিকী বক্তব্য দিতে গেলে তাঁকে থামিয়ে দেন ক্ষুব্ধ নেতারা। পরে আহ্বায়কসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের হস্তক্ষেপে শান্ত হয় পরিস্থিতি।

তবে ওই ঘটনায় ফুঁসে ওঠেন মিফতাহ সিদ্দিকীর অনুসারীরা। গত ৩০ জুলাই ‘লাগামহীন লোডশেডিং এবং বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অব্যবস্থাপনা’ নিয়ে সিলেটে প্রতিবাদ সমাবেশ করে মহানগর বিএনপি, যেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির কেন্দ্রীয় নেতা ড. মঈন খান। নগরীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে হওয়া সেই সমাবেশে উপস্থিত হননি সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী। তাঁর অনুসারীদের অনেকেই যাননি সেই সমাবেশে। তবে অনুপস্থিতির পেছনে ‘নিজের অসুস্থতা’র কথা বলেন মিফতাহ।

এদিকে, ভোলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিতে বিএনপি নেতা আব্দুর রহিম নিহত হওয়ার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত মঙ্গলবার (২ আগস্ট) সিলেটে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে মহানগর বিএনপি। এই কর্মসূচি আলাদাভাবে করে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক পক্ষ ও সদস্যসচিব পক্ষ। বিকাল সাড়ে ৩টায় রেজিস্টারি মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরুর কথা ছিল। সমাবেশে সঞ্চালনা কে করবেন, এ নিয়ে দেখা দেয় মতবিরোধ। আহ্বায়ক পক্ষের মত ছিল, সঞ্চালনা করবেন সদস্যসচিব ও একজন যুগ্ম আহ্বায়ক। কিন্তু সদস্যসচিব পক্ষ দাবি করেন, সাংগঠনিক বিধি অনুসারে সদস্যসচিব একাই সঞ্চালনা করবেন। নিজেদের দাবি নিয়ে উভয়পক্ষ অনড় অবস্থান গ্রহণ করে। একপর্যায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে মিফতাহ সিদ্দিকী ও তাঁর অনুসারীরা সমাবেশস্থল ত্যাগ করেন। পরে উভয়পক্ষ সংবাদমাধ্যমে পৃথক সংবাদবিজ্ঞপ্তি পাঠায়।

মহানগর বিএনপির বিরোধের মাত্রা টের পাওয়া গেছে গত বৃহস্পতিবারও। ওইদিন বিকালে নগরীর ভাতালিয়াস্থ মহানগর বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সাংগঠনিক সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু সেই সভায় যাননি সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী ও তাঁর অনুসারীরা।

বিএনপি নেতারা জানান, মহানগর বিএনপির আওতাধীন ২৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টিতে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। আরো দুটি কমিটি প্রায় চূড়ান্ত। বাকিগুলোতে কমিটি গঠন নিয়ে কাজ চলছে।

চলতি মাসের মধ্যে সব ওয়ার্ডে কমিটি গঠন সম্পন্ন করতে চান বলে জানিয়েছেন মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আবদুল কাইয়ুম জালালী পংকী।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে