বাল্যবিয়েতে নিরুৎসাহিত করা, শিশু-কিশোর, পরিবার ও সমাজকে সচেতন করতে এবং প্রতিটি শিশুর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের জন্য পারিবারিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে তৈরি করা হয়েছে ‘ডিজিটাল লাইব্রেরি’ (digitallibrary-mowca.org)। এই প্লাটফর্মে বাল্যবিয়ের কুফল, প্রতিকার এবং সরকারের নানা উদ্যোগের যাবতীয় তথ্য জানা যাবে।

 


বুধবার (১০ আগস্ট) দুপুরে সিলেট নগরের একটি হোটেলে এ লাইব্রেরি সম্পর্কে এক অবহিতকরণ সভার আয়োজন করা হয়।

 

এতে বক্তারা বলেছেন, ‘বাল্যবিয়ে রোধে পরিবার ও সমাজকে উদ্যোগী হতে হবে। এর কুফল সম্পর্কে জানতে হবে এবং জানাতে হবে। আইনের প্রয়োগ ও এ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে। দেশের সব মানুষকে এসব বিষয়ে সচেতন করতে স্কুল-কলেজের পাশাপাশি সর্বত্র ডিজিটাল লাইব্রেরির প্রচার বাড়াতে হবে।’

 

মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সিলেটের উপপরিচালক শাহিনা আক্তারের সভাপতিত্বে সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অঞ্চল, সিলেটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আব্দুল মান্নান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন সিলেটের পরিচালখ মো. আবু সিদ্দিকুর রহমান, শহর সমাজসেবা, সিলেটের উপপরিচালক রফিকুল ইসলাম, সিলেট তথ্য অফিসের পরিচালক (রুটিন দায়িত্ব) উজ্জল শীল।

আয়োজকরা জানান, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দিকনির্দেশনায় এবং ‘ইউএসএআইডি’-র উজ্জীবন এসবিসিসি প্রকল্পের কারিগরি সহায়তায় ডিজিটাল লাইব্রেরিটি তৈরি করেছে। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ডিজিটাল লাইব্রেরিটি সংযুক্ত করা হয়েছে এবং এ সম্পর্কে জেলা পর্যায়ের  সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের অবহিত করা করা হয়েছে। একইসঙ্গে, এর ব্যবহারবিধি এবং এটি ব্যবহারে সবাইকে উৎসাহিত করার জন্য আহবান করা হয়েছে।

 

মূলত, এই ডিজিটাল লাইব্রেরির ব্যবহার পরিবারগুলোকে বাল্যবিয়েতে নিরুৎসাহিত করতে এবং প্রতিটি কন্যাশিশুর সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতের জন্য পারিবারিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে কাজ করবে। ডিজিটাল  লাইব্রেরির ব্যবহার বাল্যবিবাহ নিরসনে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৮-২০৩০) বাস্তবায়নের পদক্ষেপ আরও গতিশীল হবে। বিগত বছরগুলোতে বাল্যবিয়ে রোধে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

 

গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২০০৭-২০১৭ এর মধ্যে ১৬ বছর বয়সের আগে বিবাহিত মেয়েদের অনুপাত ৪৬ শতাংশ থেকে ৩২ শতাংশে নেমে এসেছে। ১৮ বছর বয়সের আগে যারা বিয়ে করেছিলেন তাদের (বিয়ের আইনী বয়স) ৬৬ শতাংশ থেকে কমে ৫৯ শতাংশে নেমে এসেছে। বর্তমানে করোনা অতিমারীতে বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর কারণ হিসেবে নিম্ন আয়ের পারিবারগুলোর আয় কমে যাওয়া এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকাসহ একাধিক বিষয় রয়েছে।

ইউএসএআইডির উজ্জীবন এসবিসিসি প্রকল্পটি জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটি সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামস দ্বারা বাস্তবায়িত হচ্ছে। সচেতনতামূলক এই ডিজিটাল লাইব্রেরির নানা ডিজিটাল কন্টেন রয়েছে যা বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করার প্রয়াস নেওয়া হয়েছে এবং বিদ্যমান ব্যবস্থাগুলোর মাধ্যমে সমাজের বাল্যবিয়ের ঘটনাগুলো প্রতিহত করা এবং ভুক্তভোগীদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেতে উদ্বুদ্ধ করবে।

 

সভায় সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. জামিল আখতারের পরিচালনায় স্বাগত বক্তব্য দেন, ইউএসএইড-এর উজ্জীবন প্রকল্প পরিচালক বেলাল উদ্দিন। ডিজিটাল লাইব্রেরি সম্পর্কে ধারণা দেন, জন হপকিনস সেন্টার ফর কমিউনিকেশন এর প্রোগ্রাম অফিসার জাকিয়া হক নীলা।

 

উন্মুক্ত আলোচনায় আরও বক্তব্য দেন, ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমি সিলেটের পরিচালক শাহ মো. নজরুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, সিলেটের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর কবীর আহম্মদ, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, সুনামগঞ্জ মো. জাহাঙ্গীর আলম, মহিলা বিষয়ক কার্যালয়, মৌলভীবাজারের উপপরিচালক শাহেদা আকতার, হবিগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল্লাহ, এনজিও প্রতিনিধি আব্দুল হামিদ, কিশোর-কিশোরী ক্লাবসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা প্রমুখ।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/প্রেবি/এসডি-৪৩