স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় ঘরবাড়ি, দোকানপাট, গৃহপালিত পশু হারিয়েছে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলার হাজার হাজার মানুষ। ঘর হারাদের ঘর তৈরিতে, কর্মহীনদের কাজের ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে কাজ করছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

 


বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষার্থীদের সংগঠন 'কিন' সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ৪০টি বন্যার্ত পরিবারকে পুনরায় ঘর নির্মাণের সামগ্রী দিয়েছে বলে জানান সংগঠনটির সেক্রটারি অব ওয়েব মো. সালমান আসাদ্দু।

 

একই সঙ্গে ২১ টি পরিবারকে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

সংগঠনটি গত ৯ আগস্ট ‘পুনরুত্থান: বন্যার্তদের পুনর্বাসনে কিন’ শিরোনামে এ কর্মসূচি পালন করে।

'আত্মার কাছে দায়বদ্ধতায় হাতে রাখি হাত’ এই মূলমন্ত্র ধারণ করে ২০০৩ সালের ৩০শে জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একগুচ্ছ তরুণ তরুণীর হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘কিন’ এর।

 

শিক্ষা, রক্তদান কর্মসূচি, সামাজিক সচেতনতা, চ্যারিটি এন্ড এইড ও শীতবস্ত্র বিতরণ এই পাঁচটি মূল শাখা নিয়েই কাজ করে চলেছে ‘কিন’। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই বন্যার্তদের জন্য কাজ করছে সংগঠনটি।

 

এর আগে বন্যার সময় ত্রাণসামগ্রী দিয়ে বন্যার্তদের পাশে থেকেছে সংগঠনটি। এরই ধারবাহিকতায় বন্যার্তদের পুনর্বাসনেও পিছিয়ে নেই স্বেচ্ছাসেবীদের এই প্ল্যাটফর্ম। 

সালমান বলেন, 'সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার অন্তর্গত উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ৫টি গ্রাম কান্দাহাটি, কান্দা পাড়া, তরং, শিবরামপুর, কান্দা পাড়া ও রতনশ্রীপুর ৪০টি পরিবারের পুনর্বাসন, ২১ টি পরিবারের কর্মসংস্থান ও ১ জনের দোকানের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। 

'বিতরণ সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ১৫ টি নৌকা, ১৭ টি মাছ ধরার জাল, ৭৫ কেজি আলকাতরা, ৩০ বান (২৭০টি) টিন ও  ৩০ টি গৃহপালিত মোরগ-মুরগি ।'

এর মধ্যে ১৫টি জেলে পরিবারের কর্মসংস্থানের জন্য দেওয়া হয়েছে ১টি নৌকা, ১ কেজি জাল, ৫ কেজি আলকাতরা, ১টি বৈঠা  পরিবারের কর্মসংস্থান এবং ৫টি পরিবারের গৃহিণীদেরকে  গৃহপালিত ১টি মোরগ ও ৫টি মুরগি দেওয়া হয়েছে।-যোগ করেন সালমান।

 

তিনি আরও জানান, ওই উপজেলার ডাকঘর শ্রীপুরে অবস্থিত জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩টি শ্রেণির ৩২৮ জন বন্যাকবলিত পরিবারের শিক্ষার্থীদরকে শিক্ষাসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।

'এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ১১১ শিক্ষার্থীকে, নবমের ১০৬ এবং দশম শ্রেনির ১১১ জনকে শিক্ষাসামগ্রী দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বন্যকবলিত তিন পরিবারের শিক্ষার্থীদরকে পাঠ্যপুস্তকের সহায়ক বই প্রদান করা হয়েছে।'

 

কিনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ মেহেদী হাসান নিলয় বলেন, 'বন্যার কাছে যেন হেরে যেতে না হয় এই লক্ষ্যে সুনামগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাছে আমরা গিয়েছিলাম শিক্ষাসামগ্রী নিয়ে। 

'শিক্ষাসামগ্রী প্রদানের পাশাপাশি সবাইকে পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হওয়া, নিয়মিত ক্লাস করা, সকল বাধা বিপত্তি এড়িয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া, একজন ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করা, জীবনের লক্ষ্য ঠিক রেখে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানাই আমরা।'

 

'আমরা আশা করি এই ছেলেমেয়েরা সকল প্রতিকূলতা এড়িয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাবে!'

সংগঠনটির পাবলিকেশন সেক্রেটারি শোয়াইবুর রহমান ফাইয়াজ বলেন, 'বন্যার্তদের বন্যাপরর্তীকালীন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সাহায্য প্রদানের লক্ষ্যেই গত মাসের ২৯ তারিখে  'পুনরুত্থান বন্যার্তদের পুনর্বাসনে কিন' কর্মসূচিটি শুরু করা হয়।'

 

'বিগত দিনগুলোয় সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বন্যার্ত পরিবারের সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষন ও তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে আমাদের এই কার্যক্রম চলমান রেখেছি এবং সে অনুযায়ী বন্যাকবলিত হাওড় বাসীদের পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে।'

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/নোমান/এসডি-২৭