২০০০ সালের পর থেকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে শুরু হয় অশ্লীলতার যুগ। ঠিক এমনই সময়ে ঢালিউডে আবির্ভাব হয় চিত্রনায়িকা পলির। খুব শিগগির তিনিও হয়ে ওঠেন অশ্লীল যুগের নায়িকাদের অন্যতম। ২০০৩ সালে মোহাম্মদ হোসেন পরিচালিত ‘ফায়ার’ ছবিটি দিয়ে চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু হয়েছিল পলির। অভিষেক ছবিতেই নগ্ন হয়ে নেচে সমালোচিত হয়েছিলেন এই নায়িকা।

নগ্নতার জন্য দর্শক পলিকে তেমন একটা পছন্দ না করলেও পরিচালক-প্রযোজকদের কাছে এই অভিনেত্রীর দর বেড়ে যায় রাতারাতি। কারণ, চারদিকে তখন শুধু অশ্লীল ছবির ছড়াছড়ি। যে যত নগ্ন দৃশ্যে সাবলীল, তার দর তত বেশি। বিদেশি টু এক্স, থ্রি এক্স ছবির নানা দৃশ্য কাটপিচ করেও সে সময় সিনেমা বানিয়েছেন পরিচালক-প্রযোজকরা। সে সব ছবির নায়িকা হিসেবে একের পর এক চুক্তিবদ্ধ হন পলি।


 

ওই সময় ঢালিউডের প্রায় সব জনপ্রিয় নায়কদের বিপরীতে অভিনয় করেছেন আলোচিত ও সমালোচিত এই নায়িকা। তাদের মধ্যে যেমন রয়েছেন মান্না, শাকিব খান, রুবেল, আমিন খান ও অমিত হাসানদের মতো তুখোড় হিরো, তেমনই ছিলেন আলেকডান্ডার বো ও মেহেদির মতো অশ্লীল নায়করাও। অর্থাৎ, পলি শুধু অশ্লীল ছবিই করেননি, খারাপের ভিড়ে কিছু ভালো ছবিও উপহার দিয়েছেন।

উইকিপিডিয়ায় থাকা তথ্য মতে, প্রায় এক দশকের ক্যারিয়ারে ১১৩টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন পলি। যার অধিকাংশই ছিল অশ্লীলতার দায়ে অভিযুক্ত। একপর্যায়ে সরকার এই অশ্লীলতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ওই সময়কার এক ডজনেরও বেশি অশ্লীল নায়িকাদের সঙ্গে ধীরে ধীরে আড়ালে চলে যেতে শুরু করেন পলিও। তাকে শেষ দেখা গেছে ২০১২ সালে ‘এক নম্বর আসামি’ নামের একটি ছবিতে।

এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন অশ্লীল যুগের সেই দামি নায়িকা পলি? বর্তমানে করছেনই বা কী? খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অভিনয়কে বিদায় জানানো পলি এখন পুরোদস্তুর ব্যবসায়ী। এগ্রো বিজনেস করেন। পোল্ট্রি ফিডের একটি কোম্পানি আছে তাদের। পলি সেই কোম্পানির ডিরেক্টর। পাশাপাশি একটি বুটিক হাউজও পরিচালনা করেন শতাধিক ছবির এই নায়িকা।

 

এসব তথ্যের সত্যতা জানতে যোগাযোগ করা হয় পলির সঙ্গে। নায়িকা জানান, আসলেই তিনি এখন ব্যবসা করছেন। আক্ষেপের সুরে পলি বলেন, ‘চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পেতে অনেক পরিশ্রম করেছি। অভিনয়ের পাশাপাশি কিছু সিনেমা প্রযোজনাও করেছি। রোদের মধ্যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে শুটিং করেছি। একটা চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে পরিচালক-প্রযোজকরা যা বলেছেন তাই করেছি। কিন্তু যতটা কষ্ট করেছি, ফল ততটা পাইনি।’

তাহলে এখন কী ফল ভালো পাচ্ছেন? পলি বলেন, ‘এখন কষ্ট কম করি, আয় হয় বেশি। দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানই ভালো চলে। সেক্ষেত্রে বলা যায়, আগের তুলনায় এখন অনেক ভালো আছি।’

আবার কি চলচ্চিত্রে ফেরার ইচ্ছা আছে? পলি জানান, ভালো গল্প ও চরিত্র পেলে তার ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু পরিচালক-প্রযোজকরা কি আবার পলিকে ডাকবেন? এই প্রশ্ন আপাতত তোলাই থাক।

এদিকে, রুপালি পর্দার মতো এফডিসিতেও এখন আর দেখা মেলে না পলির। শেষবার তাকে এফডিসিতে দেখা গেছে গত ২৮ জানুয়ারি শিল্পী সমিতির নির্বাচনের দিনে। এক দশক আগে অভিনয়কে বিদায় জানালেও এখনো তিনি শিল্পী সমিতির সদস্য। তাই ২৮ জানুয়ারি ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন ভোট দিতে। তবে সিনেমা ছাড়লেও মাঝে মাঝে লাইকি ভিডিওতে দেখা যায় পলিকে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ঢাটা/ইআ