দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে হবিগঞ্জের পুরাতন খোয়াই নদী। মাছুলিয়া পয়েন্ট থেকে রামপুর পর্যন্ত একাধিক জায়গায় নদীটি ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বাসা-বাড়ি, দোকানপাট। দখলবাজির কবলে পড়ে নদীর কোনো কোনো অংশ এখন ছোট ড্রেনে পরিণত হয়েছে। নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টি হলেই হবিগঞ্জ শহরে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে সাধারণ জনগণকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।

২০১৯ সালে হবিগঞ্জবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে নদীটি উদ্ধারে কার্যক্রম শুরু করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক মাহমুদুল কবির মুরাদ। তবে নদীর কয়েক কিলোমিটার অংশ উচ্ছেদের পরই অজ্ঞাত কারণে বদলি হন তিনি। এরপর থেকেই থমকে যায় উচ্ছেদ কার্যক্রম। 


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলা শহর অকাল বন্যা থেকে রক্ষাসহ নানান লক্ষ্য নিয়ে ১৯৭৮ সালে খোয়াই নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা হয়। মাছুলিয়া ব্রিজ পয়েন্ট থেকে রামপুর পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকা নদী কেটে শহরের বাইরে দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর থেকেই শহরের ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া পুরাতন খোয়াই নদীর পাঁচ কিলোমিটার অংশের প্রায় ৭১ একর জায়গা পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। তখন থেকেই নদীটি থেকে নজর সরে যায় প্রশাসনের। এ সুযোগে তৎপর হয়ে ওঠে অবৈধ দখলদাররা। সুকৌশলে মাটি ফেলে নদীটি ভরাট করতে শুরু করে। নদীর দুই পাড় ভরাট করে গড়ে তোলা হয়েছে বাড়ি-দালানকোঠা ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান। অনেকেই নদীতে মাটি ফেলে গাছগাছালি লাগিয়েছেন।

পুরাতন খোয়াই নদীর বিভিন্ন অংশ ঘুরে দেখা যায়, কিছু কিছু এলাকায় এমন অবস্থা যে, সেখানে নদী ছিল বোঝার কোনো উপায় নেই। ২০১৯ সালে উচ্ছেদ হওয়া এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। যেসব এলাকার বাসা-বাড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল সেসব এলাকায় ফের তৈরি করা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা। যেসব এলাকা নদীর জায়গা বলে জেলা প্রশাসন চিহ্নিত করেছিল, সেসব এলাকায় নেই জেলা প্রশাসনের দেওয়া কোনো চিহ্ন। 

অবৈধ জায়গায় ভেঙে ফেলা অংশটুকুও অনেকে আবারো যুক্ত করে নিয়েছেন মূল বাসা-বাড়ির সঙ্গে। স্থানীয়রা বলছেন, নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় সৃষ্টি হয় তীব্র জলাবদ্ধতা। ক্রমাগত দূষণে ছড়াচ্ছে রোগ জীবাণু।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, নদীটি রক্ষায় আমরা দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করছি। নদীটি এখনই যদি রক্ষা করা না যায় তা হলে ভবিষ্যতে মানবিক বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান বলেন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উল্টোপাশে অর্ধ কিলোমিটার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে ওয়াকওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/মাহি