প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ছাতকে ৩৪টি মন্ডপে শারদীয় দুর্গোৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিগত দিনের তুলনায় এ বছর এখানের পূজা মন্ডপগুলোতে তেমন নজরকাড়া চাকচক্য পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ফেলে আসা অন্তত এক যুগের তুলনায় এ বছর এখনের পূজা মন্ডপগুলোর সাজসজ্জ্বার দিক থেকে অনেকটাই ম্লান মনে হচ্ছে।

 


সুনামগঞ্জ জেলার মধ্যে ছাতকে শারদীয় দুর্গাৎসবে পূজামন্ডপগুলোর সাজসজ্জ্বা ছিল আকর্ষনীয় ও ব্যতিক্রম বৈশিষ্টের। বিগত দিনে ছাতকে পূজা মন্ডপ পরিদর্শনের জন্য বিভিন্ন এলাকার দূর-দূরান্ত থেকে পূন্যার্থীরা আসতেন দল বেধে। বিশেষ করে পৌর শহরের ১২টি পূজা মন্ডপের মধ্যে চলতো সাজসজ্জ্বার প্রতিযোগিতা।

 

এক এক পূজা মন্ডপ এক এক আঙ্গিকে ভিন্ন বিশেষনে বিশেষায়িত করে নির্মান করা হতো পূজা মন্ডপগুলো। শহরের কালীবাড়ী, শ্রীচৈতন্য সংঘ, মহামায়া যুব সংঘ, তাতিকোনা, ত্রি-নয়নী, গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর আখরা, শিববাড়ী পূজা মন্ডপ গুলো তৈরী হতো অঘোষিত প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে। এসব পূজা মন্ডপে বিগত দিনে জাতীয় সংসদ, টাইটানিক, বিমান, রকেট, বিশাল ঢোল, রাজমহল, রাজবাড়ী, পুরাতন জমিদার বাড়ি, দক্ষিনেশ্বর কালী মন্দির সহ ভারতের বিভিন্ন বিখ্যাত-বিখ্যাত মন্দিরের আদলে নির্মাণ করা হতো পূজা মন্ডপ। আকর্ষনীয় এসব পূজা মন্ডপ তৈরীতে ব্যয় করা হতো লক্ষ-লক্ষ টাকা।

 

স্থানীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে নক্সা শিল্পী ও আলোকসজ্জ্বা শিল্পীদের চড়া মুল্যে আনা হতো পূজা মন্ডপ তৈরী ও সাজানোর জন্য। ফলে উৎসব শুরু হওয়ার আগেই শুরু হতো দর্শনার্থীদের আসা-যাওয়া। অন্তত এক সপ্তাহ আগেই দর্শনার্থীদের পদচারনায় মূখরিত হয়ে উঠতো এখানের পূজা মন্ডপগুলো। দর্শনার্থীদের চাপে হিমশিম খেতে হতো আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।

 

কিন্তু এ বছর পূজা মন্ডপ গুলোর চিত্র অনেকটাই সাদামাটা। কোন পূজা মন্ডপেই আলো চড়ানোর মতো কোন দৃশ্য চোখে পড়েনি।

 

তাতিকোনা পূজা মন্ডপের সভাপতি নূপুর দাস এ ব্যাপারে জানান, পূজার সিংহভাগ অর্থ আসে এলাকার মানুষের কাছ থেকে। বিগত স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় পুরো গ্রাম বন্যার পানিতে নিমজ্জিত ছিল। বন্যায় গ্রাম সব শ্রেনী পেশার মানুষ অফুরন্ত ক্ষতির শিকার হয়েছেন। ফলে পর্যাপ্ত অর্থ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। যে কারনে সংগ্রহিত অর্থের বিবেচনায় পূজা মন্ডপ সাজানো হয়েছে।

 

চৈতন্য সংঘের সভাপতি লিটন ঘোষ বিগত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জানান, বিগত দিনে টাইটানিক, বিমান, রকেট সহ বিভিন্ন আদলে পূজা মন্ডপ নির্মাণ করেছে চৈতন্য সংঘ। পূজা মন্ডপের বৈচিত্র আনা হয়েছে মুলত এ সংঘ থেকেই। এ বছর অর্থ সংকটের পাশাপাশি জায়গা সংকটের কারনেও ইচ্ছে থাকা সত্তে¡ও পূজা মন্ডপ সাজানো সম্ভব হয়নি।

 

মহামায়া যুব সংগের সভাপতি লিটন ঋষি জানান, মহামায়া যুব সংঘ বরাবরই পূজা মন্ডপ তৈরীতে ভিন্নতা আনার চেষ্টা করে থাকে। এ বছরও যথা সম্ভব অর্থের অনুপাতে পূজা মন্ডপ প্রস্তত করা হয়েছে।

 

কালীবাড়ী পূজা কমিটির সাধারন সম্পাদক কৃষ্ণদাস রায় জানান, সুনামগঞ্জ জেলার প্রাচীনতম মন্দির হচ্ছে এটি। এ বছর এখানে ৯৭তম পূজার আয়োজন করা হয়েছে। আমরা পূজার শ্রাস্ত্রিক দিকটি বেশী প্রাধান্য দিয়ে থাকি। আর আকর্ষনীয় মন্ডপ তৈরীতে আমরা পিছিয়ে নেই। বিগত দিনে এখানে জাতীয় সংসদ, দোবাই টাওয়ার, রাজমহল, রাজবাড়ীর আদলে পূজা মন্ডপ তৈরী করা হয়েছে।

 

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি এড. পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য জানান, পূজা মন্ডপ আকর্ষনীয়ভাবে সাজানো স্ব স্ব পূজা কমিটির বিষয়। পূজা উদযাপন পরিষদের পক্ষ প্রতিটি পূজা কমিটির সভাপতি-সম্পাদককে কেন্দ্রিয় কমিটির নির্দেশনা মেনে উৎসব পালনের জন্য বলা হয়েছে। অতিরিক্ত আলোক সজ্জ্বা, উচ্চস্বরে মাইক বাজানো, ধর্মীয় গান ছাড়া অন্যান্য গান বাজনা বাজানো থেকে বিরত থাকা, আযান, নামাজের সময় মাইক, বাদ্যযন্ত্র বন্ধ রাখা সহ বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দকে।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/মাহবুব/এসডি-২৭