(ফাইল ছবি)

সিলেটে কোনোভাবেই থামছে না অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন। সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করে অনেকে শূন্য থেকে হয়ে গেছেন কোটিপতি। এসব পাথরখেকো স্থানীয় রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করছেন। তাঁরাই আবার সিলেটের পাথর কোয়ারি চালুর অপতৎপরতা চালাচ্ছেন। অথচ কোয়ারিগুলোতে পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য ফিরতে শুরু করেছে।’

সোমবার (৩ অক্টোবর) সিলেটে ‘অনিয়ন্ত্রিত বালু ও পাথর উত্তোলন বন্ধে ফিরেছে কি প্রকৃতি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। 


সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত মহানগরের জল্লারপাড় এলাকার একটি রেস্তোরাঁর মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) উদ্যোগে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পাথর উত্তোলনের জন্য আমাদের নদী ধ্বংস করতে দেওয়া যাবে না। সিলেটে সরকারি তালিকাভুক্ত যে আটটি পাথর কোয়ারি আছে, প্রতিটি বিশেষ প্রাকৃতিক গুরুত্ব বহন করে। তবে এসব কোয়ারি আসল চেহারা হারিয়ে ফেলেছে। তাই বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থে প্রাকৃতিক ঐতিহ্যগুলো সংরক্ষণ করতে হবে।’

মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন, পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ এমরান হোসেন ও সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেলা সিলেটের বিভাগীয় সমন্বয়ক শাহ সাহেদা আখতার।

জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, ২০২০ সাল থেকে সিলেটে পাথর কোয়ারির ইজারা দেওয়া স্থগিত আছে। তাই পাথর উত্তোলন বন্ধ থাকায় পরিবেশ সুরক্ষিত আছে। তবে পরিবেশ সমুন্নত রেখে বালু ও পাথর উত্তোলন করা দরকার। অবশ্যই প্রাকৃতিক সম্পদের সংরক্ষণ ও যথাযথ ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত বালু ও পাথর উত্তোলন রোধে সিলেটে দুটি স্টোন ক্রাশার জোন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রকৃতির ওপর সব অনাচার বন্ধ করা হবে বলে জানান তিনি।

শাহ সাহেদা আখতার মূল প্রবন্ধে জানান, বালু ও পাথর উত্তোলনের ফলে জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি আর্থসামাজিক অবস্থার ক্ষেত্রে একটি বৈষম্য তৈরি হয়েছে, যা টেকসই উন্নয়নের অন্তরায়। রাষ্ট্রীয় অর্থনৈতিক ক্ষতি, শ্রমিকের মৃত্যু, জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব এবং বায়ু, শব্দ, পানিদূষণসহ নানা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ফলে পাথর উত্তোলন বন্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে।

মুক্ত আলোচনায় বক্তারা বলেন, পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ চাহিদা মেটে। এ চাহিদার জন্য কোনোভাবেই প্রকৃতি ধ্বংস করা যাবে না। এটা বন্ধ করতে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। প্রকৃতির যে ক্ষতি হয়েছে, তা ফেরত দেওয়া সম্ভব নয়। তবে এখনো সিলেটে রাতের অন্ধকারে অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন চলছে। ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এসব বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর হওয়া উচিত। এসব অনাচার বন্ধে সিলেটের টিলা ও নদী স্যাটেলাইটের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান তাঁরা।

অতিথিদের বক্তব্যের আগে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম, সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সিলেটের সভাপতি সমিক সহিদ জাহান, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সিলেটের সিনিয়র সাংবাদিক ইকবাল সিদ্দিকী, আইনজীবী ইরফানুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আবদুল করিম চৌধুরী কিম, বন কর্মকর্তা মো. সাদ উদ্দিন আহমদ ও কবি এ কে শেরাম প্রমুখ।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম