উপরে- আব্দুল আহাদ খান জামাল ও মাহবুবুল হক চৌধুরী। নিচে- শাকির মোর্শেদ ও আফসর খান।

সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্র। এরপর নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। নতুন কমিটিতে আগের কমিটির তিন শীর্ষ নেতাই বাদ পড়েছেন, টিকে গেছেন কেবল একজন।

দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবেই নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে।


গতকাল রোববার নতুন আহ্বায়ক কমিটিতে জেলা ও মহানগরে ৩ জন করে ৬ জনের নাম ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলে আগের কমিটির মতোই আহ্বায়ক হিসেবে আছেন সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমানে বিএনপি নেতা আব্দুল আহাদ খান জামাল। এ শাখায় সদস্যসচিবের দায়িত্ব পেয়েছেন শাকিল মোর্শেদ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে মো. মিফতাউল কবিরকে।

মহানগর যুবদলে সাবেক ছাত্রনেতা ও বর্তমানে বিএনপি নেতা মাহবুবুল হক চৌধুরীকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এখানে সদস্যসচিব হয়েছেন আফসর খান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সামাদ তুহেল।

স্বেচ্ছাসেবক দল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২১ আগস্ট রাতে সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। তখন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল।

সেদিন জেলা ও মহানগরে ৬১ সদস্যবিশিষ্ট ঢাউস আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

জেলা কমিটিতে আহ্বায়কের দায়িত্ব পান সাবেক ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে বিএনপি নেতা আব্দুল আহাদ খান জামাল, সদস্যসচিব করা হয় সাবেক ছাত্রনেতা দেওয়ান জাকির হোসেন খানকে। জেলা কমিটিতে যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন ১৫ জন, বাকিরা সদস্য।

মহানগরে আব্দুল ওয়াহিদ সুহেলকে আহ্বায়ক এবং আজিজুল হোসেন আজিজকে সদস্যসচিবের দায়িত্ব দেয় কেন্দ্র। ৬১ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিটিতেও ১৫ জন যুগ্ম আহ্বায়ক রেখে বাকিদের করা হয় সদস্য।

ওই সময় সিলেট জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটিকে আওতাধীন সকল ইউনিটে দ্রুত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয় কেন্দ্র।

তবে শুরুতেই ধাক্কা খায় জেলা-মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দল। আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে দেখা দেয় বিদ্রোহ। কমিটি থেকে বেশ কয়েকজন পদত্যাগও করেন। উপজেলা পর্যায়ের শতাধিক নেতার পদত্যাগের ঘটনাও ঘটে। এমনকি কমিটি নিয়ে বিরোধের জেরে গেল বছরের ১৮ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-স্বেচ্ছাসেবক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান জামান পদত্যাগ করেন।

শুরুর সেই ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে ধীরে সক্রিয় হয়ে ওঠে জেলা-মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি। সভা-সমাবেশ করার পাশাপাশি নিজেদের আওতাধীন ইউনিটগুলোতে কমিটি গঠনের দিকে মনোযোগ দেন দায়িত্বশীল নেতারা। জেলার আওতাধীন ১৩ উপজেলা ও ৫ পৌরসভাতেই ৩১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতারা। মহানগরের আওতাধীন ২৭টি ওয়ার্ডে দেওয়া হয়েছে আহ্বায়ক কমিটি।

তবে জেলা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ ধরনের ঘটনা সিলেট স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজনীতিতে বিরল বলে জানিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক দল নেতারা।

জানা গেছে, গত ৪ সেপ্টেম্বর স্বেচ্ছাসেবক দলের নতুন কমিটি অনুমোদনের কথা জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি করা হয় এসএম জিলানীকে, যিনি সবশেষ কমিটিতে ১ নম্বর সদস্য ছিলেন। আর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসানকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এই নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি এখন নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় সারাদেশের ইউনিটগুলোতে নতুন কমিটি দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে সিলেটে নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

তবে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল সিলেটভিউকে বলেছেন, ‘সাংগঠনিক পুনর্বিন্যাসের অংশ হিসেবে সিলেটে নতুন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন কমিটি আসায় আগের আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘একই কমিটি বছরের পর বছর দায়িত্বে থাকবে, সেই দিন আর এখন নেই। দলের গতিশীলতার স্বার্থে এখন নির্দিষ্ট সময় পরপর নতুন নেতৃত্ব আসবে।’

জামাল জানান, কেন্দ্র থেকে তাঁদেরকে আহ্বায়ক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা এখন সে কাজ সম্পন্ন করবেন। এরপর কেন্দ্র যখন বলবে, তখন সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে