ঘৃণামূলক বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হলেন ভারতের সমাজবাদী পার্টির (সপা) অন্যতম শীর্ষস্থানীয় নেতা ও উত্তর প্রদেশের সাবেক মন্ত্রী আজম খান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারণার সময় দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং রামপুরের জেলাশাসক অঞ্জুনেয়া কুমার সিংয়ের বিরুদ্ধে ঘৃণামূলক বক্তব্য রেখেছিলেন।

ওই বছর লোকসভা নির্বাচনে প্রচারণা চলাকালীন আজম খান অভিযোগ করেছিলেন, ‘২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিজেপি শাসনাকালে মুসলমানরা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী গোটাদেশে এমন এক বাতাবরণ তৈরি করেছেন, যেখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের পক্ষে অস্তিত্ব রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছে।’ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের বিরুদ্ধে ‘ইনতেকাম’ (প্রতিশোধ) নিতে দেশবাসীকে আরজি জানিয়েছিলেন তিনি। 


এর পাশাপাশি তৎকালীন জেলাশাসক অউঞ্জানেয়া কুমার সিং এবং তার মা’র বিরুদ্ধে প্ররোচণামূলক ও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন আজম খান।
এই পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৯ এপ্রিল মিলাক কোতোয়ালি থানায় তার বিরুদ্ধে ১৫৩এ, ৫০৫-১, ১২৫ সহ ভারতীয় দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে উত্তর প্রদেশের রামপুরের বিশেষ বিধায়ক ও সাংসদদের আদালত আজম খানকে দোষী সাব্যস্ত করে। তার কিছু পরেই সাজাও ঘোষণা করে আদালত। সেক্ষেত্রে তিন বছরের কারাগারের সাজা দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে তাকে ২৫ হাজার রুপি জরিমানাও করা হয়েছে। তিন বছরের কারাগারের সাজা শোনানোর ফলে উত্তর প্রদেশ বিধানসভার সদস্যপদ হারাতে পারেন তিনি। দুই বছরের বেশি সময় জেল সাজা দেওয়ার কারণে তাকে অপসারণের ব্যাপারে উত্তর প্রদেশ বিধানসভাও পদক্ষেপ নিতে পারে। 

যদিও এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে (উত্তর প্রদেশ হাইকোর্ট) আবেদন জানাতে এক সপ্তাহের সময় দেওয়া হয়েছে তাকে। 

৭৪ বছর বয়সী আজম খান বলেন, ‘আমি বিশ্বাস হারাইনি। সব দরজা বন্ধ হয়নি - আমি উচ্চ আদালতে আবেদন করব।’ 

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহেই ভারতের শীর্ষ আদালত কেন্দ্রীয় সরকার এবং দিল্লি, উত্তর প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ডের মতো রাজ্য সরকারগুলোকে ঘৃণামূলক অপরাধ মামলায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলেছিল। এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে রাজ্য সরকার গড়িমসি করলেই তা আদালত অবমাননার সামিল হবে বলেও জানিয়েছিল আদালত। তার পরই উত্তরপ্রদেশের স্থানীয় আদালতের এই পদক্ষেপ। 

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের মে মাসেই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্ত হয়েছিলেন আজম খান। তার আগে জমি দখলের এক মামলায় প্রায় দুই বছর ধরে সীতাপুর জেলা কারাগারে বন্দী ছিলেন তিনি।

সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বাধীন এই দলটিতে সেকেন্ড ইন কমান্ড বলা হয় আজম খানকে। শীর্ষ আদালতে আজিম খান দাবি করেছিলেন উত্তর প্রদেশ সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে তার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা করে চলেছেন। যোগী সরকার তাকে যেনতেন প্রকারে কারাগারে বন্দি রাখতে চাইছে। তবে নেতা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আজম খানের বিরুদ্ধে অভিযোগও কম জমা পড়েনি। সূত্রে খবর, বিভিন্ন থানায় এই সংখ্যালঘু নেতার বিরুদ্ধে এখনো প্রায় ৮৭ টি মামলা রয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশই চুরি, তহবিল তছরূপ, দুর্নীতির মতো একাধিক অভিযোগ। 

রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত মূল্যায়ম সিং যাদবের শাসনকালে কটূ মন্তব্য করার জন্য সাবেক মন্ত্রী আজম খান বরাবরই সংবাদ শিরোনামে উঠে আসতেন। এমনকি তার এই কর্মকাণ্ডের জন্য পরিবারের কাছেও সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। নারীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় মন্তব্য করে বিতর্কিত হয়েছিলেন তিনি।


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/জিএসি-০৩


সূত্র : বিডি-প্রতিদিন