সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে এখন সাজ সাজ রব বিরাজ করছে। বড় আকারের জমায়েত নিশ্চিত করতে বিএনপি দায়িত্বশীল নেতারা চালাচ্ছেন নিরলস প্রচারণা। চলছে দফায় দফায় বৈঠক, নেওয়া হচ্ছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি। দীর্ঘদিন পর বড় আকারের এই কর্মসূচি ঘিরে সিলেট বিএনপি এখন উৎফুল্ল, উচ্ছ্বসিত। তবে পুলিশের জারিকৃত একটি আদেশের প্রেক্ষিতে নির্ধারিত দিনে গণসমাবেশ করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে আছে অনিশ্চয়তা। এ ছাড়া সমাবেশে বাধা, পরিবহন ধর্মঘট, হামলা ও গ্রেফতারের ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। ফলে উচ্ছ্বাসের আড়ালে তাদের মধ্যে উৎকণ্ঠাও আছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রমূলক মিথ্যা’ মামলা প্রত্যাহার এবং চাল, ডাল, জ্বালানি তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, সারসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশের সবক’টি বিভাগে গণসমাবেশ করছে বিএনপি। ইতিমধ্যে চট্টগ্রামে, ময়মনসিংহে, খুলনা এবং গতকাল বরিশালে গণসমাবেশ করেছে দলটি। সিলেটে বিএনপির গণসমাবেশ ২০ নভেম্বর। এজন্য নগরীর চৌহাট্টাস্থ আলিয়া মাদরাসা মাঠকে বেছে নিয়েছে দলটি। সমাবেশের অনুমতির জন্য মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও সিলেট সিটি করপোরেশনের অনুমতি চেয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া নিরাপত্তার জন্য পুলিশকে অবহিতকরণ চিঠি দেওয়া হয়েছে।


বিএনপি নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সিলেট বিভাগীয় গণসমাবেশে লাখো মানুষের জমায়েত ঘটাতে চান তারা। এ লক্ষ্যে বিভাগের চারটি জেলাতেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি ও প্রচারণা চলছে। সমাবেশকে কেন্দ্র করে কয়েকদিন আগে সিলেট নগরীর একটি হোটেলে বিভাগের চার জেলার বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী প্রতিটি সংগঠনের দায়িত্বশীলদের নিয়ে বৈঠক করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। সেই বৈঠকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান, যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদীর লুনা, ড. এনামুল হক চৌধুরী ও খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ, সহ-স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক শাম্মি আক্তার উপস্থিত ছিলেন। প্রচারণা ও প্রস্তুতির বিষয়ে সেই বৈঠকে নির্দেশনা দেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

এ ছাড়া সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির উদ্যোগে ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল, কৃষকদল, মহিলা দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সাথে পৃথকভাবে বৈঠক করা হয়েছে। জেলার প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভায় এবং মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ড বিএনপির নেতাদের সাথেও বৈঠক করেছেন দায়িত্বশীলরা। জেলা-মহানগর বিএনপির নেতারা ঐক্যবদ্ধভাবে তৃণমূলে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

এদিকে, আগামী জাতীয় নির্বাচনে সিলেটের আসনগুলোতে যেসব বিএনপি নেতা দলীয় মনোনয়নে প্রার্থী হতে চান, সেসব নেতারাও ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সমাবেশে শোডাউন দিয়ে নিজেদের কর্মী-সমর্থকদের শক্তির জানান দিতে চান তারা। এ লক্ষ্যে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের নাম-ছবি দিয়ে পৃথক টি-শার্ট ও ক্যাপ তৈরি করাচ্ছেন।
বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে অন্যরকম উচ্ছ্বাসের তৈরি হয়েছে। এই কর্মসূচিকে ঘিরে সবাই সক্রিয় ও সোচ্চার হয়ে ওঠেছেন। একইসাথে সাধারণ মানুষও সমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিচ্ছেন। এই ‘গণআন্দোলনের’ মধ্য দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন দিতে সরকারকে বাধ্য করা সম্ভব হবে।

এদিকে, আজ রোববার থেকে শুরু হয়েছে এইচএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষাকে সামনে রেখে গত শুক্রবার সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এসএমপি আইনের ক্ষমতাবলে পরীক্ষাকেন্দ্রের দুইশ গজের মধ্যে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ বলে আদেশ জারি করা হয়। বিএনপির সমাবেশের নির্ধারিত দিন ২০ নভেম্বরও আছে পরীক্ষা। এ নিয়ে খানিকটা উৎকণ্ঠায় আছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা। তারা বলছেন, আলিয়া মাদরাসা মাঠের মতো বড় স্থান আর সিলেট নগরীতে নেই। এছাড়া সমাবেশে গণজমায়েত ঠেকাতে ক্ষমতাসীনরা নানা চেষ্টা চালাবে বলেও মনে করছেন তারা। অন্যান্য বিভাগের মতো সিলেটেও পরিবহন ধর্মঘট এবং নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হতে পারে বলে উদ্বেগ আছে বিএনপির মধ্যে। তবে দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সব বাধা দূরে ঠেলে ‘স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ’ হবে সিলেটে।

এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মিফতাহ সিদ্দিকী সিলেটভিউকে বলেন, ‘নির্ধারিত দিনেই গণসমাবেশ করতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে। সর্বস্তরের নেতা-কর্মী বিরামহীনভাবে কাজ করছেন। গণসমাবেশে যোগ দিতে মানুষ উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছে। সব বাধা পেরিয়ে আগের দিন থেকেই লোকারণ্য হবে সিলেট। এটা হবে সিলেটে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ।’

পুলিশের জারিকৃত আদেশ প্রসঙ্গে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকি সিলেটভিউকে বলেন, ‘আমরা নির্ধারিত স্থানেই সমাবেশ করতে চাই। আমাদের পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, ‘আলিয়া মাঠে গণসমাবেশ করতে মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনের কাছে অনুমতি চাওয়া হয়েছে। মৌখিক অনুমতি পেয়েছি। নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশকে অবহিতকরণ চিঠি দিয়েছি। এই সমাবেশ ঘিরে সিলেটজুড়ে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বাধা-বিপত্তি ঠেলে সমাবেশ সফল হবে।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/শাদিআচৌ/আরআই-কে