সিলেটে ‘এসএমএস হাইয়ার এডুকেশন গ্রুপ’ নামক একটি কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণায় বিদেশে উচ্চশিক্ষার স্বপ্নভঙ্গ হতে চলেছে এক তরুণীর। 

অভিযোগ উঠেছে- ওই তরুণীর সকল সার্টিফিকেট ও কাগজপত্রে জালিয়াতি করে টাকার বিনিময়ে এক তরুণকে যুক্তরাজ্য যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে ‘এসএমএস হাইয়ার এডুকেশন গ্রুপ’। 


এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তরুণীর বাবা বাদী হয়ে সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালতের নির্দেশে মামলাটি পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তদন্ত করছে।

জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের আকিকুল হকের মেয়ে হাবিবা হক ইমা উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য যাওয়ার লক্ষ্যে ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে ওআইটিসি পরীক্ষা দেন। এরপর যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য সিলেট মহাগরের হাওয়াপাড়াস্থ ‘এসএমএস হাইয়ার এডুকেশন’ নামক প্রতিষ্ঠানে যান এবং প্রসেসিংয়ের জন্য প্রতিষ্ঠানকটি ইনচার্জ বদরুল ইসলাম হামজার কাছে ইমেইল এড্রেসসহ প্রয়োজনীয় সকল সার্টিফিকেট ও কাগজপত্র দেন। সেই সাথে যে ইমেইল থেকে ওআইটিসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছিল সেই ইমেইলও ইমার কাছ থেকে রাখেন হামজা।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ে ইমার ভর্তি সংক্রান্ত কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তিনি ‘এসএমএস হাইয়ার এডুকেশনে’ গিয়ে জানতে পারেন- হামজা যুক্তরাজ্যে চলে গেছে। এসময় প্রতিষ্ঠানের অন্য এক কর্মকর্তা হামজার সাথে যোগাযোগ করে ইমার ভর্তির আবেদন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর সেশনে ডেফার্ড করা হয়েছে বলে জানান। এরপর ফের অপেক্ষা শুরু হয় ইমার। কিন্তু চলতি বছরের জুলাই মাসে নিজের ইমেইল থেকে ওআইটিসির ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখতে পান- তার সার্টিফিকেটের নামের স্থলে ‘সৈয়দ বুরহান আহমদ’ লেখা রয়েছে। এসময় তার সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে তার দৃঢ় সন্দেহ হয়। পরে কয়েক দফা তিনি এসএমএস হাইয়ার এডুকেশনে গেলেও কোনো সদুত্তর পাননি। 

এছাড়া এসএমএস হাইয়ার এডুকেশনের ফেসবুক পেজ ঘুরে ইমা দেখতে পান- কিছুদিন আগে সৈয়দ বুরহান আহমদ নামের এক তরুণ ভিসা পেয়েছেন এবং বদরুল ইসলাম হামজা তাকে (বুরহান) এর জন্য শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন। তখনই ইমার সন্দেহ আর দৃঢ় হয় এবং নানাভাবে হামজার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ইমার সব প্রচেষ্টা বিফল হয়।

এ ঘটনায় এসএমএস হাইয়ার এডুকেশনের ইনচার্জ বদরুল ইসলাম হামজা, যুক্তরাজ্য যাওয়া যুবক সৈয়দ বুরহান আহমদ, এসএমএস হাইয়ার এডুকেশন গ্রুপের হেড অফ অপেরেশন ইঞ্জিনিয়ার আল আমিনকে অভিযুক্ত করে ইমার বাবা আকিকুল হক সিলেটের সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলা দায়েরের আবেদন করেন। পরে অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলা দায়ের এবং মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। 

এদিকে, ইমার ভাই রায়হান আহমদ বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তিনি সেখানে সৈয়দ বুরহান আহমদ নামক ওই যুবককে খুঁজে বের করে কথাচ্ছলে তার সার্টিফিকেটের বিষয়ে জানতে চান। তখন বুরহান আহমদ জানান, তিনি টাকার বিনিময়ে এসএমএস হাইয়ার এডুকেশন থেকে সার্টিফিকেট কিনে যুক্তরাজ্যে গিয়েছেন। বুরহানের সাথে কথোপকথনের সময় সেগুলো মুঠোফোনে রেকর্ডও করেন ইমার ভাই রায়হান।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে এসএমএস হাইয়ার এডুকেশনের বর্তমান ইনচার্জ মাজেদুল ইসলাম জনির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি এসব ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে সিলেটভিউ-কে জানান। 

এ বিষয়ে বাদীপক্ষের আইনজীবী মো. সলমান উদ্দিন সিলেটভিউ-কে বলেন- এটি জঘন্য ধরনের একটি সাইবার ক্রাইম। ভুক্তভোগী তরুণীর সকল সার্টিফিকেট ও তথ্য-উপাত্ত ডিজিটালভাবে জালিয়াতি করে এক তরুণকে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলাটি আদালতের নির্দেশে সিআইডি তদন্ত করছে।


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডালিম