বন্যা, কখনো অতিবৃষ্টি, আবার কখনো অনাবৃষ্টি। বছরজুড়েই সিলেট বিভাগে দাবড়ে বেড়াচ্ছিলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। তবে সব দুর্যোগ মাড়িয়ে এবার সিলেটে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতোমধ্যে আমন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ শুরু করেছেন কৃষকেরা। ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে।

 


তবে বাম্পার ফলনেও ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে শঙ্কা কাটছে না কৃষকদের।

 

এদিকে সিলেটের কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বিভাগের চার জেলায় শ্রমিক সংকট নিরসনে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের উন্নয়ন সহায়তার মাধ্যমে কম্বাইন্ড হারভেস্টার, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, রিপার, মাড়াই যন্ত্র দেয়াসহ কৃষককে বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।

 

সিলেট বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়- চার জেলার মধ্যে সবেচেয়ে বেশী ফলন হয়েছে সিলেট জেলায়। এরপর যথাক্রমে মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ ও হবিগঞ্জে আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিভাগের চার জেলায় এ বছর রোপা আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে। আর আবাদ হয়েছে ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমি। এ বছর হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান মিলে বিভাগে ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

 

রবিবার (৪ ডিসেম্বর) পর্যন্ত বিভাগে রোপা আমন ধান কাটা হয়েছে প্রায় ৪৯.৫৮ ভাগ। আর এদিন পর্যন্ত বিভাগে ২ লাখ ৩ হাজার ৪৯ হেক্টর জমি কেটে চাল উৎপাদন করা হয়েছে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৯ মেট্রিক টন।

 

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেট জেলার উপপরিচালক মোহাম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা জানান, জেলায় ইতিমধ্যে ৪০ ভাগ ধান কাটা হয়েগেছে, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলার সব ধান কাটা হয়ে যাবে। সিলেট জেলায় ১ লাখ ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। আর চাষ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৩ হেক্টর জমি। এবছর চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯৩০ মেট্রিক টন। তবে আশা করছি তা ছাড়িয়ে যাবে। ধান কাটার সুবিদার্থে কৃষকদের কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের ধান কাটার মেশিন ও বিনামূল্যে উন্নত জাতের বীজ ও সার দেওয়া হয়েছে।

 

মৌলভীবাজার জেলায় এ বছর আমন চাষাবাদে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫ হেক্টর জমিতে। আর চাষ করা হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমি। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৪৬৩ মেট্রিক টন।

 

হবিগঞ্জ জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮০ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে। আর চাষ করা হয়েছে ৮৮ হাজার ২৫৮ হেক্টর জমি। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৩৭১  মেট্রিক টন।

 

সুনামগঞ্জ জেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮১ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে। আর চাষ করা হয়েছে ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমি। চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ৩৬ মেট্রিক টন।

 

কৃষকরা জানান, এ বছর কয়েক বার হওয়া বন্যার পরও জমিতে স্থানীয়, উফশী ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছি। প্রতি বছরের মত এবার ধান কাটার শ্রমিক সংকট, তাই জমির ধান উঠাতেও দেরি হচ্ছে। তবে মেশিন দিয়েও চলছে ধান কাটা। ভয়াবহ বন্যার পরও ধানের যা ফলন হয়েছে তাতে আমরা অনেক খুশি। কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারের নিকট আবেদন জানিয়ে বলেন, ফসলের সঠিক মূল্য না পেলে বরাবরের মতো এবার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হবে।

 

বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সিলেটের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান সিলেটভিউ’কে জানান, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জে জেলাতে এবার রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ২৮০ হেক্টর জমি। ৪ লাখ ১৫ হাজার ৫৪৬ হেক্টর জমি চাষ করা হয়েছে। চলতি বছর হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান মিলে বিভাগে ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। তবে চাল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

 

তিনি সিলেটভিউ’কে বলেন, সব ধান এক সাথে পাকায় ধানকাটার মানুষের সংকট দেখা দিয়েছে। তাবে ধান কাটার জন্য প্রচুর মেশিন দেওয়া হয়েছে বিভাগের কৃষকদের। তাই শ্রমিক সংকট থাকার কথা নয়। এছাড়া কৃষকরা যাতে  ফসলের ন্যায্য মূল্য পান সে বিষয়টি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম / নাজাত / ডি.আর/এসডি-৩৯