(প্রতীকী ছবি)

মৌলভীবাজারের বড়লেখায় শরিফ উদ্দিন নামে এক যুবককে উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে সৌদিআরবে পাঠিয়ে প্রতারণার অভিযোগে করা মামলায় দুই আসামিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। সমন পেয়ে মঙ্গলবার (৬ ডিসেম্বর) আসামিরা জামিন নিতে আদালতে হাজির হলে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জিয়াউল হক তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

তারা হলেন- প্রতারণা মামলার দুই নম্বর আসামি হুমায়ুন আহমদ ও চার নম্বর আসামি আলী আজাদ।


এর আগে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী শরিফ উদ্দিনের বাবা আমির উদ্দিনের দায়ের করা মামলায় আদালত চার আসামিকে আগামি ৬ ডিসেম্বর ধার্য তারিখে আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন। 

বাদীপক্ষের আইনজীবি অ্যাডভোকেট মো. ইয়াছিন আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।     

আদালত সূত্রে জানা গেছে,  বড়লেখা পৌরসভার পাখিয়ালা গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াদুদের শাহজাহান কবির খোকন ও তার ভাই হুমায়ুন আহমদ ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রতারণার শিকার যুবক শরিফের বাবা আমির উদ্দিনকে প্রস্তাব দেন ভালো ভিসা দিয়ে তারা শরফিকে সৌদিআরব পাঠাতে পারবেন। মাসে ৫০ হাজার টাকা বেতন হবে। তাদের সাথে মামলায় অভিযুক্ত মোস্তাব উদ্দিন ও আলী আজাদও একই প্রস্তাব দেন। এতে আমির উদ্দিন রাজি হন। এরপর তাদের মধ্যে ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকার চুক্তি হয়। আমির উদ্দিন ছেলেকে সৌদি পাঠানোর জন্য চুক্তি অনুযায়ী কয়েক দফায় টাকা পরিশোধ করেন। এছাড়া বিভিন্ন কাজের কথা বলে আরও প্রায় ১ লাখ ৭০ টাকা নেওয়া হয়। এরপর ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি শরিফ উদ্দিনকে সৌদিআরব পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছার পর শরিফকে শাহজাহান কবির খোকনের লোকজন রিসিভ করে কাজ বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শরিফ সেখানে কোন লোক পাননি। শাহজাহান কবির খোকনের মোবাইলে ফোন দিলেও তাকে পাননি। অনাহারে-অর্ধাহারে এয়ারপোর্টে তিনদিন কাটে শরিফের। অসহায় অবস্থায় সেখানে তাকে এক ভারতীয় নাগরিক একটি গোদাম ঘরে নিয়ে রাখেন। এদিকে সৌদি থেকে ছেলের খবর না আসায় আমির উদ্দিন মামলায় অভিযুক্ত হুমায়ুন, মোস্তাব ও আলী আজাদের কাছে যান। কিন্তু তারা খোঁজ নিচ্ছে বলে টালবাহানা করে। এরমধ্যে কয়েক মাস গেলেও বৈধ কাগজপত্র পাননি শরিফ। সৌদিতে অবৈধভাবে পালিয়ে থাকা অবস্থায় গ্রেফতার হন। সেখানে প্রায় ১৬ দিন জেল খেটে দেশে ফেরেন শরিফ।

প্রতারণার এই ঘটনায় শরিফ উদ্দিনের বাবা আমির উদ্দিন গত ৩১ অক্টোবর বড়লেখার পাখিয়ালা গ্রামের মৃত আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে শাহজাহান কবির খোকন (৫০), তার ভাই হুমায়ুন আহমদ (৫২), একই গ্রামের মৃত কুটু মিয়ার ছেলে মোস্তাব উদ্দিন (৫৫) এবং জফরপুর গ্রামের মৃত সুরুজ আলীর ছেলে আলী আজাদ (৫৭)-কে আসামী করে বড়লেখা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত আসামীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।

প্রতারণার শিকার  শরীফ উদ্দিন জানিয়েছেন, বৈধভাবে সৌদি পাঠানোর কথা বলে আমাদের থেকে তারা প্রায় ৬ লাখ টাকা নিয়েছি। ঋণ করে আমার বাবা অনেক টাকা দিয়েছেন। তারা আমার সাথে প্রতারণা করেছে। সৌদি পৌঁছে অসহায়ের মতো ৩ দিন এয়ারপোর্টের প্লোরে ঘুমিয়েছি। কেউ নিতে আসেনি। পরে এক ভারতীয় নাগরিক আমাকে নিয়ে তার একটি গোদাম ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে। তার (ভারতীয় নাগরিকের) ফোন থেকে শাহজাহান কবির খোকনকে দেই। সে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে ‘আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় আছি। তকে সৌদি আরবেই গুম করে ফেলব। আর আমাকে কোনো ফোন দিবে না’। ভয়ে আর ফোন দেইনি খোকনকে। এভাবে পালিয়ে কয়েক মাস থাকার পর আমি সৌদিতে গ্রেপ্তার হই। সেখানে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে নিঃস্ব অবস্থায় দেশে এসেছি।’

এ বিষয়ে প্রধান অভিযুক্ত মো. শাহজাহান কবির খোকন বলেন, ‘তাকে সৌদি পাঠিয়েছি ঠিক আছে। সব অভিযোগ সত্য নয়। আমি তাদের কাছে আরও অনেক টাকা পাই।’
 
সিলেটভিউ২৪ডটকম / লাভলু / ডি.আর