দিন যত যাচ্ছে, বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে মিত্রের সংখ্যাও বাড়ছে। বিভিন্ন সমমনা দল, সংগঠন ও জোট বিএনপি ঘোষিত যুগপৎ আন্দোলনে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এবার ১৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে আত্মপ্রকাশ করেছে ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট’। গতকাল রোববার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ জোটের ঘোষণা দেওয়া হয়। আরও যেসব দল ও সংগঠন যুগপতের বাইরে আছে, তাদেরও মিত্র বানাতে কাজ করছে বিএনপি।
অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনসহ ১০ দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করেছে বিএনপি। আগামী বুধবার দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে দেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। সেইসঙ্গে গত ১২ অক্টোবর থেকে ১০টি বিভাগীয় গণসমাবেশের পর বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে যে ধরনের আগ্রহ ও উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে, তা ধরে রাখতে ধারাবাহিক কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে বিএনপির হাইকমান্ড। এরই মধ্যে দেশের জেলা পর্যায়ে সফর করছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। তারা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ১০ দফার আন্দোলন এবং রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখার পক্ষে জনমত তৈরি করছেন।
জানা গেছে, যুগপৎ আন্দোলন সফলের লক্ষ্যে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির নেতারা জোটের বাইরে থাকা বিভিন্ন দল ও সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। বিভিন্ন দল ও জোটকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দল ও সংগঠন জোট গঠন করে আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিচ্ছে। এরই মধ্যেই যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), ১২ দলীয় জোট, ৭ দলের গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলের সমন্বয়ে ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, গণফোরামসহ কয়েকটি সংগঠন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও যুগপৎ আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, পাকিস্তানি সরকার জনগণের ভোটের মূল্যায়ন না করায় বাংলাদেশের মানুষ বিপ্লব ঘটিয়েছিল। আগে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু এখন বাংলাদেশের গুটিকয় শ্রেণির মানুষ দেশের শাসন ব্যবস্থাকে গ্রাস করছে এবং তারা যা চাচ্ছে তাই করছে। তারা দিনের ভোট রাতে করে থাকেন। বিরোধীদলীয় লোকজনকে গ্রেফতার করে, গুলি করে ও মামলা দেয়। এমন একটি অভিজ্ঞতার পর বাংলাদেশের কোনো মানুষ চায় না আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন হোক। তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে এ সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেব।
১১ জানুয়ারি দেশের ১০টি বিভাগীয় শহরে চার ঘণ্টার গণঅবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। তবে মাঝের সময়টাকে কাজে লাগাতে জেলা সফর করে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার কাজ করবেন দলের সিনিয়র নেতারা। তারা সেখানে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও স্থানীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও পেশাজীবীর সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এভাবে বিএনপি ঘোষিত সরকার পতনের লক্ষ্যে ১০ দফা এবং রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখার পক্ষে জনমত তৈরি করবেন। এ ছাড়া বুধবারের গণঅবস্থান কর্মসূচিতে ব্যাপক জমায়েত করার লক্ষ্যে গণসংযোগ, লিফলেট বিতরণ, প্রস্তুতি বৈঠকসহ বিভিন্ন উপায়ে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
১৫ দলের সমন্বয়ে ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট’
এদিকে বিএনপি ঘরোয়া ১৫টি ছোট ছোট সংগঠনের সমন্বয়ে এবার নতুন ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট’-এর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। মূলত এসব সংগঠন প্রেস ক্লাব ও ডিআরইউভিত্তিক বিভিন্ন ইস্যুতে কর্মসূচি পালন করে থাকে। বিশেষত বিএনপির দুঃসময়ে এসব সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে। এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে এসব ছোট ছোট সংগঠনের সমন্বয়ে জোট গঠন করে নিজেদের আস্থায় আনল বিএনপি। গতকাল রোববার বিকেলে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে জোটের ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এ সময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান উপস্থিত ছিলেন।
নতুন জোটের নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন—ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি সাইদুর রহমান, জিয়া নাগরিক সংসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মাইনুদ্দিন মজুমদার, ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের সভাপতি আজিজুল হাই সোহাগ, শহীদ জিয়া আইনজীবী পরিষদের সভাপতি আবু ইউসুফ সরকার, জাতীয়তাবাদী নাগরিক দলের সভাপতি পীরজাদা ওমর ফারুক, বাংলাদেশ জাস্টিজ পার্টির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম, সংবিধান সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আতিকুর রহমান, গণতন্ত্র রক্ষা মঞ্চের সভাপতি মনোয়ার হোসেন বেগ, জাতীয়তাবাদী চালক দলের সভাপতি মো. শাহজাহান, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা ’৭১-এর সভাপতি আনসার রহমান শিকদার, ঘুরে দাঁড়াও বাংলাদেশের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, মুভমেন্ট ফর ডেমোক্রেসির সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ডেমোক্রেটিক কাউন্সিলের সভাপতি বাহাদুর আহমেদ পিন্টু, দেশ রক্ষা মানুষ বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি আজিজা সুলতানা, বাংলাদেশ যুব ঐক্য পরিষদের সভাপতি মো. ওমর ফারুক। নতুন এই জোটের প্রধান সমন্বয়কারী ইয়ুথ ফোরামের মো. সাইদুর রহমান।
বিএনপির গণঅবস্থানের সময় পরিবর্তন
এদিকে বুধবারের গণঅবস্থান কর্মসূচির সময় পরিবর্তন করেছে বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে গতকাল জানানো হয়, গণতন্ত্র হরণকারী, ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ, বর্তমান অবৈধ সংসদ বাতিল, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিসহ ১০ দফা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবিতে আগামী ১১ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিভাগীয় সদর তথা ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, কুমিল্লায় গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। পরিবর্তিত সময়সূচি অনুয়ায়ী ১১ জানুয়ারি সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে