ছবি : পল্লব ভট্টাচার্য
সিলেট মহানগরের ফুটপাতে হকার সমস্যা দীর্ঘদিনের। নানা উদ্যোগেও সমস্যার সমাধান আসছে না কোনভাবেই। আদালতের নির্দেশ উপেক্ষিত হচ্ছে বারবার। সিলেট মহানগরের যানজট নিরসন, ফুটপাত দখলমুক্তকরণ ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে ২০২০ সালে হকারদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিল সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। সিসিকের এ কাজে এগিয়ে আসে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ। যৌথ প্রচেষ্টায় ঐ বছরের শেষের দিকে প্রায় ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নগর ভবনের পেছনের লালদিঘীরপাড় মাঠে হকারদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়। বেশ সাড়াও পড়েছিল তাতে। ঢাকঢোল পিটিয়ে হকারদের নেওয়া হয় সিসিক ভবনের পেছনে লালদিঘির পাড়ের খালি জায়গায়।
২০২০ সলের ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় পুনর্বাসন কার্যক্রম। প্রথমে কিনব্রিজ থেকে চৌহাট্টা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়কের প্রায় ১ হাজার ১০০ ভাসমান ব্যবসায়ীর তালিকা করা হয়। এরপর লালদিঘিরপাড়ের খালি জায়গায় অস্থায়ী দোকানকোটা নির্মাণ করা হয়। ২২ ডিসেম্বর থেকে তালিকা অনুযায়ী সেই জায়গায় হকারদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়। হকারদের নাম তালিকাভুক্ত করে বাঁশ দিয়ে দোকান বানিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া ইট সিলিং দিয়ে রাস্তা ও বিদ্যুতের ব্যবস্থাও করে দেওয়া হয় সেখানে জমে উঠেছিল পুনর্বাসিত হকারদের বাজার।
কিন্তু দুই বছরের ব্যবধানে সেই স্থান এখন অনেকটাই ফাঁকা। বরাদ্ধকৃত হকারদের দুই তৃতীয়াংশই এখন বসেন না সেখানে। তারা আবারও চলে এসেছেন নগরের বিভিন্ন সড়ক ফুটপাতে। সিসিকের হকার পুনর্বাসন উদ্যোগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গোটা নগর জুড়ে ফুটপাতের পাশাপাশি রাস্তা দখল করে দেদারছে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে হকাররা। ব্যবসা জমছেনা এমন অজুহাতে ফের রাস্তায় ব্যবসা করতে নেমেছে তারা। ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে যানজট অপরদিকে সংকুচিত হয়েছে জনসাধারণের চলার পথ। এ নিয়ে সিসিকের নিরবতায় দিন দিন বাড়ছে ভ্রাম্যমাণ হকারদের সংখ্যা।
সিলেট নগরের প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক এলাকাগুলো হলো বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, চৌহাট্টা, রিকাবী বাজার, আম্বরখানা, সুরমা মার্কেট পয়েন্ট। এসব এলাকায়ই দুপাশে ফুটপাত দখল করে ব্যবসা চালান হকাররা। মহানগরীর প্রায় ১০ কিলোমিটার ফুটপাত জুড়ে এখন প্রতিদিনেই ব্যবসা চলছে তাদের।
মাঝেমধ্যে উচ্ছেদের নামে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে সিসিক। কিন্তু কোনভাবেই দখলমুক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। সিসিক যখনই অভিযান চালায় হকাররা দৌঁড়ে পালান, অভিযান শেষ হলে ফের ফুটপাত দখলে হকারদের।
সরেজমিন লালদিঘীরপাড়ের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, হকারকে পুনর্বাসনের জন্য বরাদ্দকৃত দোকানগুলোতে হাতেগোনা কয়েকজন হকার আছেন। আর বাকি হকাররা আগের মতোই নগরের বিভিন্ন রাস্তা ও ফুটপাত দখল করে তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। হাতেগোনা কিছু দোকান ছাড়া পেছনের পুরো মাঠই ফাঁকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কেটে স্থান দেয়ার প্রথম দিকে লোকজন আসা যাওয়া করলেও দিন দিন তা কমছে। ব্যবসা না জমায় অনেকেই ফের রাস্তায় ব্যবসা করতে নেমেছেন।
জিন্দাবাজারের বাসীন্দা রাহাদ বলেন, হকারদের রাস্তা দখল করে রাখার কারনে জ্যাম সব সময় লেগে থাকে। কোন কোন সময় জ্যাম লাগলে ২০ থেকে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সময় চলে যায়। এর মূল কারণ সড়ক ও ফুটপাতের অধিকাংশ জায়গা হকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়া। হকার পুনর্বাসন কার্যক্রম কঠোরভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুল হক বলেন, সিসিকে যোগ দেয়ার আমর মাত্র কয়েকদিন হয়েছ তাই এসব বিষয় নিয়ে এখনো ভালোভাবে বলতে পারছি না। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে কথা বলতে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে মুঠোফোনে বার বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ নাজাত-০৪