শিব্বির আহমেদ (গোলচিহ্নিত)। ছবি ভিডিও থেকে নেওয়া।

শিব্বির আহমেদ ছিলেন একটি মাদরাসার শিক্ষক। এরপর বিদেশ যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে যান বাড়ি থেকে। কিন্তু বিদেশ নয়, তিনি যান পাহাড়ে। সেখানে নেন জঙ্গি প্রশিক্ষণ। পরে হয়ে যান জঙ্গিদের সামরিক কমান্ডার।

শিব্বিরের বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার উত্তর ফরিদপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আব্দুস সালাম।


জঙ্গিবাদে শিব্বিরের আরেক নাম হামিদ কারছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের দিকে দেশে নতুন জঙ্গিগোষ্ঠী সংগঠিত হতে থাকে। এর পেছনে কাজ করেন নিষিদ্ধ তিন জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম, জেএমবি ও হরকাতুল জিহাদের সাবেক কয়েকজন সদস্য। ২০১৯ সালে নতুন সংগঠনের নাম ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া (বাংলা অর্থ: পূর্ববর্তী হিন্দের সাহায্যকারী দল)’ ঠিক করা হয়।

এই জঙ্গি সংগঠন সদস্য সংগ্রহ ও প্রশিক্ষণের কাজ চালিয়ে আসছিল। সংগঠনের সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিতে তারা সম্পর্ক গড়ে তুলে পাহাড়ের নতুন সশস্ত্র গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সঙ্গে। বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি, থানছি ও তৎসংলগ্ন রাঙামাটির বিলাইছড়িতে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয় কেএনএফ। তাদের নিজেদের ক্যাম্পে ২০২১ সালের শেষ দিকে শুরু হয় প্রশিক্ষণ। সেখানে বোমা তৈরি, চোরাগোপ্তা হামলা, অস্ত্র চালানো প্রভৃতি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

সূত্র জানায়, জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া চলতি বছর দেশে বড় ধরনের হামলা চালিয়ে নিজেদের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে চেয়েছিল। এর আগে নিজেদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করেছিল তারা। গহিন পাহাড়ে তাদের গোপন প্রশিক্ষণের কার্যক্রমের ভিডিওচিত্র ধারণ করে রাখে তারা, যাতে আত্মপ্রকাশের দিন তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সর্বত্র ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক অভিযানে কয়েকজন জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছেন। আস্তানা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নানা ধরনের কাগজপত্র।

কক্সবাজারের উখিয়া থেকে জামাতুল আনসারের সামরিক শাখার প্রধান মাসুকুর রহমান ওরফে রনবীর ও তাঁর সহযোগী আবুল বাশার মৃধা ওরফে আলমকে
গত ২৩ জানুয়ারি  ভোরে গ্রেফতার করে র‌্যাব। মাসুকুর রহমানের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি মুঠোফোন। সেই ফোনে পাওয়া যায় পার্বত্য অঞ্চলে সংগঠনটির সদস্যদের সামরিক প্রশিক্ষণের ভিডিও।

গত মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকায় কারওয়ান বাজারে নিজেদের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে ভিডিওচিত্রটি প্রকাশ করে র‌্যাব। ভিডিওতে ২০ জনের বেশি জঙ্গিকে দেখা গেছে। এর মধ্যে রয়েছেন জামাতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান ওরফে মাহমুদ, কথিত সামরিক কমান্ডার শিব্বির আহমেদ ওরফে হামিদ কারছে, দাওয়াতি শাখার প্রধান আবদুল্লাহ মায়মুন।

ভিডিওতে সামরিক পোশাকের আদলে তৈরি পোশাক পরে একে-২২ রাইফেল ও শটগান নিয়ে প্রশিক্ষণের দৃশ্য দেখা গেছে।

ওই ভিডিওতে জামাতুল আনসারের কথিত সামরিক কমান্ডার শিব্বির আহমেদকে পাহাড়ি আস্তানায় অস্ত্র উঁচিয়ে ধরতে দেখা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিব্বির আহমেদ সিলেটের একটি মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। ২০২১ সালে তিনি বিদেশ যাওয়ার কথা বলেন পরিবারের কাছে। তাতে সায় দেয় পরিবার।

শিব্বির নিজের জমানো কিছু টাকার সঙ্গে বাবার কাছ থেকেও কিছু টাকা নেন। এরপর বেরিয়ে পড়েন বাড়ি থেকে। কিন্তু বাড়ি ছাড়ার পর আর কোনো খোঁজ মিলছিল না শিব্বিরের।

তার পরিবার দাবি করেছে, শিব্বির কোথায় আছেন, তা তারা জানতেন না। তাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না। এখন ছেলে জঙ্গি হয়ে গেছে দেখে তারা হতবাক হয়ে পড়েছেন।

শিব্বির আহমদের বাবা আব্দুস সালাম সিলেটভিউকে বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম শিব্বির বিদেশে আছে। হয়তো সময়ের অভাবে বা কোনো কারণে যোগাযোগ করতে পারছে না। আমাদের সাথে তার যোগাযোগ ছিল না।’

তিনি বলেন, ‘ভিডিওতে আমার ছেলেকে জঙ্গি সংগঠনের পোশাকে দেখে আমরা নির্বাক হয়ে গেছি।’

সূত্র মতে, শিব্বির জঙ্গিবাদে উদ্ধুদ্ধ হয়ে বাড়ি ছাড়েন। তিনি নতুন এই জঙ্গি সংগঠনের সাথে মিশে যান। পাহাড়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে অস্ত্র চালনায় দক্ষতা অর্জন করেন তিনি। এরপর তাকে ওই সংগঠনের কথিত সামরিক কমান্ডার বানানো হয়।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে