সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগীয় সদরে আবারও সমাবেশ করবে বিএনপি। ওইসব সমাবেশের মধ্য দিয়ে তৃণমূলে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তির ফের জানান দিতে চায় দলটি। নেতাকর্মীর পাশাপাশি সমাবেশগুলোতে সাধারণ মানুষেরও ব্যাপক অংশগ্রহণ ঘটাতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে প্রচারের অংশ হিসেবে প্রতিটি সাংগঠনিক বিভাগে ৫ থেকে ৬ লাখ লিফলেট বিতরণ করার টার্গেট রয়েছে দলটির।

এর মধ্য দিয়ে বিএনপি দেশ-বিদেশে এই বার্তা দিতে চায় যে, তাদের আন্দোলনের সঙ্গে দেশবাসীও সম্পৃক্ত হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ আর এই সরকারকে চায় না। সমাবেশ সফলে কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে এরই মধ্যে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী বিভাগীয় সমাবেশ সফলে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। তাদের কর্মকাণ্ড মনিটরিং করে বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা কেন্দ্রে মূল্যায়ন প্রতিবেদন দেবেন।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বিএনপির তৃণমূল এখন অনেক শক্তিশালী। সাম্প্রতিক বিভিন্ন কর্মসূচিতে সেটির প্রমাণও দিয়েছে তারা; কিন্তু তাই বলে তো বসে থাকলে চলবে না। কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে। নইলে জনগণ মনে করবে, আন্দোলন বাদ দিয়ে তারা হয়তো ঘুমিয়ে গেছে।

তিনি বলেন, তৃণমূল শক্তিশালী বলেই নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখতে কর্মসূচি দিতে হচ্ছে। এই সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দেশের জনগণ জেগেছে। তাদের মানসিক শক্তি দিতে হবে। এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে তৃণমূল আরও বেশি শক্তিশালী-চাঙ্গা হচ্ছে। দাবি আদায়ে সামনে আরও কর্মসূচি আসবে বলে জানান দলটির এই নীতিনির্ধারক।

গত বছরের ২২ আগস্ট থেকে পর্যায়ক্রমে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত তৃণমূলে বিভিন্ন কর্মসূচি করে বিএনপি। সেসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ ঘটে। দলটির নেতারা বলছেন, তৃণমূলে সংগঠন শক্তিশালী হওয়ার প্রমাণ এটি।

এরপর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১০ দফা দাবিতে গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকার গণসমাবেশ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা দেওয়া হয়। প্রথম কর্মসূচি হিসেবে ঢাকায় ৩০ ডিসেম্বর এবং ঢাকার বাইরে ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিল হয়। পঞ্চম কর্মসূচি হিসেবে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি দেশব্যাপী সাংগঠনিক বিভাগগুলোতে সমাবেশ করবে দলটি। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূলকে চাঙ্গা ও শক্তিশালী রাখতে চায় বিএনপি, যাতে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি সফল করা যায়। সে কারণে বিভাগীয় সমাবেশ সফলে ব্যাপক গুরুত্ব দিয়েছে হাইকমান্ড। তৃণমূলে এরই মধ্যে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তৃণমূলের নেতারা—বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতাদের মূল্যায়ন করতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড।

দলীয় সূত্র জানায়, নির্দেশনা অনুযায়ী বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকরা গত ২৭ থেকে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে বিভাগের অন্তর্গত জেলা, মহানগর সফর এবং প্রস্তুতি বৈঠক করবেন। এ ছাড়া ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌর নেতারা টিম গঠন করে অধীনস্ত ইউনিট সফর করবেন। সমাবেশে যোগ দিতে জনসাধারণকে উদ্বুদ্ধ ও দাবি-দাওয়া বিষয়ে জনগণকে অবহিত করতে ২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় পদযাত্রা, প্রচারপত্র বিতরণ, পথসভা, হাটসভা, মিছিল ও গণসংযোগ করা হবে।

এ সময় জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌর নেতারা সংশ্লিষ্ট ইউনিটের নেতাকর্মী নিয়ে প্রস্তুতি বৈঠকের পাশাপাশি হাট-বাজার, পাড়া-মহল্লায় পদযাত্রা, প্রচারপত্র বিতরণ, পথসভা, হাটসভা, মিছিল ও গণসংযোগে অংশ নেবেন। এসব কর্মসূচিতে জেলার অধিবাসী কেন্দ্রীয় নেতা, সাবেক এমপি, বিগত নির্বাচনে দল মনোনীত এমপি প্রার্থী এবং আগামী নির্বাচনে সম্ভাব্য দলীয় এমপি প্রার্থীদেরও থাকতে হবে। বিভাগীয় সমাবেশ সফলে এসব কর্মসূচিতে উপস্থিতির মধ্য দিয়ে জেলা, মহানগর, উপজেলা এবং সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের মূল্যায়ন করবে দল। বিভাগীয় সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকরা সার্বিক কর্মসূচির সমন্বয়ের পাশাপাশি নেতাদের মূল্যায়ন প্রতিবেদন কেন্দ্রে জমা দেবেন।

বিভাগীয় সমাবেশ সফলে দলের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতাকর্মী-সমর্থক এবং জনসাধারণ যাতে বিভাগীয় গণসমাবেশগুলোতে যোগ দেয়, সেজন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। জেলা, মহানগর, উপজেলা পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা করছি। একই সঙ্গে সমাবেশে জনগণকে সম্পৃক্ত করার জন্য পাড়া-মহল্লায় পথসভা, পদযাত্রা, লিফলেট বিতরণ, হাটসভা, মিছিল-সমাবেশ করছি। কোন কোন দাবিতে আমাদের এ সমাবেশ—এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সেটিও আমরা জনগণকে অবহিত করছি। এসব কর্মসূচিতে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সব পর্যায়ের নেতারা অংশ নিচ্ছেন। বিভাগীয় সমাবেশের এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সরকারবিরোধী চলমান আন্দোলন একটি নবতর পর্যায়ে উপনীত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে