বিপিএলের সিলেট পর্বে গতকাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে জিততে পারেননি পাকিস্তানি পেসার ওয়াহাব রিয়াজ। খুলনা টাইগার্সের এ পেসার নিজেও তেমন ভালো করতে পারেননি। ৪ ওভার বল করে ৩৬ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। তবে মোটের ওপর এবারের বিপিএলটা দারুণ কাটছে ওয়াহাবের। ৭ ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির তালিকায় নামটা তাঁরই।

আসলে সময় যখন ভালো যায়, তখন বোধ হয় প্রায় সব দিক থেকেই ভালো কাটে! ওয়াহাবের ক্ষেত্রে কথাটা হয়তো সব বিষয়ে খাটে না, তবে কিছু কিছু বিষয়ে তো মিলেই যায়। পাকিস্তানের হয়ে দুই বছরের বেশির সময় হলো খেলার সুযোগ পাননি। আবার এই পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যেই ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত টি–টোয়েন্টিতে তাঁর উইকেটসংখ্যাই সবচেয়ে বেশি (৩০৭)।


অক্টোবর–নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলে ফিরতে মরিয়া এই পেসার। সে লক্ষ্যে মাঠে নিজেকে নিংড়ে দিচ্ছেন। আবার এর মধ্যে মাঠের বাইরেও পেয়েছেন সুখবর। পাঞ্জাবের অন্তর্বর্তীকালীন ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন ৩৭ বছর বয়সী ওয়াহাব। বিপিএল শেষে পাকিস্তানে ফিরে শপথ নেবেন।

খুলনার সমর্থকেরা কিন্তু তার আগেই বলতে পারেন, তাঁদের পছন্দের দলে পাকিস্তানের একটি প্রদেশের ক্রীড়ামন্ত্রী খেলছেন। শুধু খেলছেন বললে ভুল হবে, রীতিমতো দাপিয়ে বল করছেন। ওয়াহাবের এই দাপট টের পাওয়া গেল মাঠের বাইরেও। না, রাজনৈতিক কোনো বক্তৃতা কিংবা রাজনীতি নিয়ে কোনো কথায় নয়। পাকিস্তান ক্রিকেট নিয়ে কথা বলেছেন ওয়াহাব। রমিজ রাজা পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান ও মোহাম্মদ ওয়াসিম প্রধান নির্বাচক থাকতে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছেন এই পেসার।

পাকিস্তানের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ওয়াহাব। সেখানে স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নিয়ে তাঁর বলা কথাগুলো প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ‘ক্রিকেট পাকিস্তান’।

ওয়াহাব বলেছেন, ‘ল্যাপটপকেন্দ্রিক প্রধান নির্বাচকের (মোহাম্মদ ওয়াসিম) দল বাছাই ভালো হয়নি। শোয়েব মালিক, ইমাদ ওয়াসিম, সরফরাজ আহমেদদের মতো খেলোয়াড়দের বাদ দেওয়ার পেছনে সঠিক যুক্তি নেই তার। ২০২১ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে শোয়েব ও ইমাদ ভালো করেছে। ওদের পারফরম্যান্স কেন তার ল্যাপটপে জায়গা পায়নি? অস্ট্রেলিয়ায় ২০২২ টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে কেন তাদের দলের বাইরে রাখা হলো? ওদের ভুলটা কী?’

ওয়াহাব এরপর সরাসরি স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে বলেছেন, ‘আমি জানি, রমিজ ভাই চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। আর প্রধান নির্বাচক আমাদের (খেলোয়াড়) সঙ্গে কথা বলতে দায়বদ্ধ। কিন্তু আমাদের সংস্কৃতিতে সব কথা মেনে চলতে পারলেই শুধু তার সঙ্গে যোগাযোগটা থাকে। যারা নিজেদের অবস্থানের পক্ষে শক্তভাবে দাঁড়াতে পারে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় না।’

২০২০ সালে পাকিস্তানের হয়ে সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ওয়াহাব। সে বছর দুটি ওয়ানডে ও তিনটি টি–টোয়েন্টিতে ভালো খেলেও দল থেকে বাদ পড়েন। সম্প্রতি ইতিহাসের দ্বিতীয় পেসার হিসেবে টি–টোয়েন্টিতে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন ওয়াহাব।

ওয়ানডে বিশ্বকাপ দিয়ে পাকিস্তান দলে ফিরতে মরিয়া ওয়াহাব পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক মিসবাহ–উল–হকের উদাহরণ টেনে বলেছেন, ‘স্বজনপ্রীতির একটা সীমা থাকা উচিত। বয়স বেশির অজুহাত দেওয়াটাও ঠিক নয়। বয়সই যদি এত গুরুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে নিয়মটা সবার জন্যই সমান হওয়া উচিত। মিসবাহ ভাইয়ের কথাই ধরুন, তিনি ৪০ বছরের বেশি বয়সেও খেলেছেন। আমার মতে, ৩০ বছরের পর একজন ক্রিকেটার নিজের সেরা সময়ের দেখা পায়। অন্য উদাহরণও দেওয়া যায়। রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিরা কিন্তু ৩০–এর বেশি বয়স নিয়েও পারফর্ম করছে। আমার কাজ হলো পারফর্ম করে যাওয়া এবং আমার পক্ষে ভিতটা আরও শক্ত করা। এ বছর বিশ্বকাপ হবে আর আমি সত্যিই পাকিস্তান দলে ফিরতে চাই।’

সিলেটভিউ২৪ডটকম/আরআই-কে